কিভাবে নেবেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি

শিউলী আহমেদ

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন সরকারি নিয়োগ বন্ধ ছিল

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন সরকারি নিয়োগ বন্ধ ছিল। নতুন করে শুরু হয়েছে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। বয়সও বাড়ানো হয়েছে ৩৯ মাস। তাই বিজ্ঞপ্তি দেখে ঝটপট নিজের পছন্দের চাকরি দেখে আবেদনপত্র জমা দিন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষ বা প্রায় শেষ, তারা আদাজল খেয়ে নেমে পড়ুন। পরীক্ষার তারিখ না দেয়া পর্যন্ত যতটুকু সময় পাবেন, কাজে লাগান।

সরকারি চাকরিতে অনেক সুযোগ-সুবিধার কারণে একটা সময় ছিল মাস্টার্স পাস করেও ছোট্ট একটা পোস্টের জন্য অনেকে আবেদন  করত। জানতে চাইলে শুনতাম সরকারি চাকরি হচ্ছে সোনার হরিণ, একবার একটা পদে নিয়োগ পেলে পরে ধীরে ধীরে প্রমোশন নিয়ে বা বদলি হয়ে অন্য জায়গায় যাওয়া যাবে। কিন্তু আসলেই তা হত কিনা জানতে পারিনি। তবে এটা ঠিক বেতন কম হলেও এতে নিশ্চয়তা থাকে।শেষ বয়সের ভরসা হিসেবে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো কিছ পুঁজি হাতে আসে। আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে সরকারি চাকরির চাহিদা অন্যান্য চাকরির চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো পুনর্গঠনের পর তাদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা আর অবসর ভাতাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। নিরাপত্তা তো আছেই।

পিএসসির মতে ২০০৮ সালের ২৮তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারিতে আবেদনের সংখ্যা ছিল সোয়া লাখের কিছু কম। এবার ৪৪তম বিসিএস এ তা প্রায় ৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ যুব-জরিপে দেখা গেছে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী, ৪২ শতাংশ পুরুষ সরকারি চাকরিকে প্রথম তালিকায় রেখেছে।

অনেকে মনে করে সরকারি চাকরির জন্য টাকা লাগে। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করতে পারেন, তো চাকরিই আপনাকে খুঁজবে। ভালো চাকরি পেতে হলে অনার্স থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আলাদা ১/২ ঘণ্টা সময় বের করে সম্পূর্ণ সিলেবাস ভালোভাবে পড়তে শুরু করুন। কারণ মাস্টার্সের পর বয়সের একটা বিষয় থাকায় ‘অল্প সময়’ এর একটা টেনশনও থাকে। তাই প্রথমে গুছিয়ে নিন।প্রতিদিন একটি করে অধ্যায় শেষ করুন। যদি সম্ভব না হয় ২ দিন নিন। প্রতিটা অধ্যায় শেষে নিজের কাছেই পরীক্ষা দিন। যেখানে আটকে যাবেন আবার পড়ুন। এভাবে প্রতিটা অধ্যায় ভালোভাবে পড়ে শেষ করুন। সিলেবাসের পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নগুলোও পড়ুন একইভাবে।

বাংলার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
প্রথমে ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বোর্ডের ব্যাকরণ বইগুলো ভালোভাবে পড়ে নেবেন। সঙ্গে অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী ও মাহবুবুল হক স্যারদের ব্যাকরণ বইগুলোও পড়ে নেবেন। সমাস, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, এক কথায় প্রকাশ, সমার্থক শব্দ এগুলো থেকে প্রশ্ন আসবেই। বিভিন্ন ভার্সিটির ব্যাকরণ অংশের সমাধানগুলোও পড়ে নেবেন।

আরও ভালো প্রস্তুতির জন্য ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দ গঠন ও প্রকরণ, পুরুষ, অনুসর্গ, উপসর্গ, বাক্য প্রকরণ ও রূপান্তর, ক্রিয়ার কাল, পদ, ধাতু, বিরাম চিহ্ন, বাচ্য ও বচনও পড়বেন। বাংলা সাহিত্যের জন্য ৬ষ্ঠ-একাদশ শ্রেণির বাংলা বোর্ডের বইয়ের মূল গল্পগুলো ভালোভাবে মার্কিং করে পড়ে নেবেন। সব কবি পরিচিতি আর গল্প/কবিতার উৎস, পটভূমি, কোন কবিতা কোন ছন্দে রচিত এসব ভালো করে পড়বেন।কবিতার ছন্দ থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। বাংলা সাহিত্যের নামকরা কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক থেকে প্রশ্ন আসে। তাছাড়া বিখ্যাত অনুবাদ বইয়ের নাম, অনুবাদ গল্প, নাটক- এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। পিএসসি নির্ধারিত ১১ জন কবি সাহিত্যিক হচ্ছে- ১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ২. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ৩. মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ৪. মীর মশাররফ হোসেন, ৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ৬. দীনবন্ধু মিত্র, ৭. কাজী নজরুল ইসলাম, ৮. জসীমউদ্ঈন, ৯. ফররুক আহমদ, ১০. কায়কোবাদ, ১১. বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

পঞ্চকবি
১. বুদ্ধদেব বসু, ২. জীবনানন্দ দাস, ৩. বিষ্ণু দে, ৪. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, ৫. অমিয় চক্রবর্তী- তাদের সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবেন। বাংলা ব্যাকরণ মুখস্থ না করে বুঝে পড়বেন। তাহলে কমন না পড়লেও উত্তর দিতে পারবেন।
ইংরেজির প্রস্তুতির জন্য
ইংরেজি গ্রামার থেকে যা পড়বেন- Sentence, parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Gender, Synoûm, Antoûm ইত্যাদি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু বাক্য অনুবাদ পড়তে হবে। ভালো কিছু গ্রামার বই সংগ্রহে রাখতে হবে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো – Noun, Verb, Adjective, Adverb, Prepositon. Change to- Simple, Compound & Complex, Voice Change, Mood, Infinitive, Participle, Gerund, Idioms & Phrases, Correct Word, Synoûm & Antoûm, Vocabulary. এগুলো পড়লেই প্রায় সব উত্তর দিতে পারবেন।
অংকের জন্য প্রস্তুতি
অংকে খুব মনোযোগী হতে হবে এবং ভালো করে বুঝে করতে হবে।
পাটিগণিত : লাভ-ক্ষতি, সুদ-কষা, পিতা-পুত্র, মাতা-কন্যা, অনুপাত, ঐকিক নিয়ম, সংখ্যার ধারণা, ল.সা.গু, গ.সা.গু, ভগ্নাংশ, গড়, সময়+গতিবেগ, দূরত্ব ধারা ও মানসিক দক্ষতা থেকে প্রশ্ন আসে।
বীজগণিত : বীজগাণিতীয় রাশি (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ), সূত্রের প্রয়োগ ও সূত্রাবলীর প্রমাণ সরল সমীকরণ, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন আসে।
জ্যামিতি : ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ, রম্বস, সামন্তরিক, বৃত্ত ও জ্যামিতি বিষয়ের খুঁটিনাটি থেকে প্রশ্ন আসে। এগুলো ভালোভাবে বুঝে করলেই প্রশ্ন কমস পড়বে। পাশাপাশি অনুশীলনগুলো চর্চা করবেন। সঙ্গে গচ৩, গধমরপ গধঃয, ম্যাথ রিভিউ. প্রফেসর’স গাণিতিক যুক্তি, শর্টকাট ম্যাথ, ওরাকল গাণিতিক যুক্তি বইগুলো দেখতে পারেন।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানের জন্য ভালো কিছু বই সংগ্রহে রাখুন। আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব, জ্ঞান সিন্ধু– এগুলোর অন্তত একটা বই সংগ্রহে রাখবেন। সঙ্গে প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। আর দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও রাজধানী, প্রণালী, দেশ-বিদেশের নদী, খাল, বিখ্যাত স্থান, স্থাপনা, বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম, বন্দর, জলপ্রপাত, ঐতিহাসিক স্থান, ইতিহাস জড়িত ঘটনাবলী, আবিষ্কার, পুরস্কার, বিখ্যাত ব্যক্তিদের কর্ম, অবদান ও তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাল এসব থেকেই প্রশ্ন আসে।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বের প্রাচীন শাসনামল অর্থাৎ মুঘল আমল, ইংরেজ শাসন আমল ইত্যাদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতা ঘোষণা, মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলী, মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল ও ভূমিকা, পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বাংলাদেশের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা, নারী-পুরুষের সংখ্যা, জন্ম-মৃত্যুহার। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের জীবন-যাপন, আইন ও শাসন বিভাগ সংক্রান্ত তথ্যাবলী। বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহ, জাতীয় পুরস্কার, বাংলাদেশের খেলধুলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি।
#তথ্য-প্রযুক্তি, কম্পিউটার বিষয়ক বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে হবে।
#ধৈর্য ধরে যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
# চাকরি সংক্রান্ত কোর্সে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দিলে প্রস্তুতি ভালো হবে
# কোন্ চাকরি করবেন সেটা সম্পর্কে সুস্পষ্ট লক্ষ্য রাখুন। সেভাবেই প্রস্তুতি নিন। কারণ পদ বুঝে প্রস্তুতি আলাদা হয়ে থাকে।
# একবার না পারলে যতদিন সময় থাকবে বারবার পরীক্ষা দিন। হতাশ হবেন না। বারবার পরীক্ষায় আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও পারসোনালিটি বাড়বে। এক সময় দেখবেন চাকরিটাও ঝুপ করে হয়ে গেছে।
# চোখ-কান খোলা রেখে কোথায় কি হচ্ছে সব সময় খেয়াল রাখুন। এতে চাকরি ও চাকরির পর আপনার পদোন্নতিতে সহায় হবে। তাই সব সময় আপডেট থাকুন।
চাকরি বাজারে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে সরকারি চাকরি। তাই এটি পাওয়ার জন্য আগে অবশ্যই লক্ষ্যস্থির করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি নিজে থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করুন, বাকিটা এমনিই হবে। মনে রাখবেন, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

কিভাবে নেবেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি

শিউলী আহমেদ

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন সরকারি নিয়োগ বন্ধ ছিল

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন সরকারি নিয়োগ বন্ধ ছিল। নতুন করে শুরু হয়েছে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। বয়সও বাড়ানো হয়েছে ৩৯ মাস। তাই বিজ্ঞপ্তি দেখে ঝটপট নিজের পছন্দের চাকরি দেখে আবেদনপত্র জমা দিন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষ বা প্রায় শেষ, তারা আদাজল খেয়ে নেমে পড়ুন। পরীক্ষার তারিখ না দেয়া পর্যন্ত যতটুকু সময় পাবেন, কাজে লাগান।

সরকারি চাকরিতে অনেক সুযোগ-সুবিধার কারণে একটা সময় ছিল মাস্টার্স পাস করেও ছোট্ট একটা পোস্টের জন্য অনেকে আবেদন  করত। জানতে চাইলে শুনতাম সরকারি চাকরি হচ্ছে সোনার হরিণ, একবার একটা পদে নিয়োগ পেলে পরে ধীরে ধীরে প্রমোশন নিয়ে বা বদলি হয়ে অন্য জায়গায় যাওয়া যাবে। কিন্তু আসলেই তা হত কিনা জানতে পারিনি। তবে এটা ঠিক বেতন কম হলেও এতে নিশ্চয়তা থাকে।শেষ বয়সের ভরসা হিসেবে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো কিছ পুঁজি হাতে আসে। আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে সরকারি চাকরির চাহিদা অন্যান্য চাকরির চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো পুনর্গঠনের পর তাদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা আর অবসর ভাতাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। নিরাপত্তা তো আছেই।

পিএসসির মতে ২০০৮ সালের ২৮তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারিতে আবেদনের সংখ্যা ছিল সোয়া লাখের কিছু কম। এবার ৪৪তম বিসিএস এ তা প্রায় ৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ যুব-জরিপে দেখা গেছে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী, ৪২ শতাংশ পুরুষ সরকারি চাকরিকে প্রথম তালিকায় রেখেছে।

অনেকে মনে করে সরকারি চাকরির জন্য টাকা লাগে। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করতে পারেন, তো চাকরিই আপনাকে খুঁজবে। ভালো চাকরি পেতে হলে অনার্স থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আলাদা ১/২ ঘণ্টা সময় বের করে সম্পূর্ণ সিলেবাস ভালোভাবে পড়তে শুরু করুন। কারণ মাস্টার্সের পর বয়সের একটা বিষয় থাকায় ‘অল্প সময়’ এর একটা টেনশনও থাকে। তাই প্রথমে গুছিয়ে নিন।প্রতিদিন একটি করে অধ্যায় শেষ করুন। যদি সম্ভব না হয় ২ দিন নিন। প্রতিটা অধ্যায় শেষে নিজের কাছেই পরীক্ষা দিন। যেখানে আটকে যাবেন আবার পড়ুন। এভাবে প্রতিটা অধ্যায় ভালোভাবে পড়ে শেষ করুন। সিলেবাসের পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নগুলোও পড়ুন একইভাবে।

বাংলার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
প্রথমে ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বোর্ডের ব্যাকরণ বইগুলো ভালোভাবে পড়ে নেবেন। সঙ্গে অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী ও মাহবুবুল হক স্যারদের ব্যাকরণ বইগুলোও পড়ে নেবেন। সমাস, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, এক কথায় প্রকাশ, সমার্থক শব্দ এগুলো থেকে প্রশ্ন আসবেই। বিভিন্ন ভার্সিটির ব্যাকরণ অংশের সমাধানগুলোও পড়ে নেবেন।

আরও ভালো প্রস্তুতির জন্য ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দ গঠন ও প্রকরণ, পুরুষ, অনুসর্গ, উপসর্গ, বাক্য প্রকরণ ও রূপান্তর, ক্রিয়ার কাল, পদ, ধাতু, বিরাম চিহ্ন, বাচ্য ও বচনও পড়বেন। বাংলা সাহিত্যের জন্য ৬ষ্ঠ-একাদশ শ্রেণির বাংলা বোর্ডের বইয়ের মূল গল্পগুলো ভালোভাবে মার্কিং করে পড়ে নেবেন। সব কবি পরিচিতি আর গল্প/কবিতার উৎস, পটভূমি, কোন কবিতা কোন ছন্দে রচিত এসব ভালো করে পড়বেন।কবিতার ছন্দ থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। বাংলা সাহিত্যের নামকরা কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক থেকে প্রশ্ন আসে। তাছাড়া বিখ্যাত অনুবাদ বইয়ের নাম, অনুবাদ গল্প, নাটক- এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। পিএসসি নির্ধারিত ১১ জন কবি সাহিত্যিক হচ্ছে- ১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ২. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ৩. মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ৪. মীর মশাররফ হোসেন, ৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ৬. দীনবন্ধু মিত্র, ৭. কাজী নজরুল ইসলাম, ৮. জসীমউদ্ঈন, ৯. ফররুক আহমদ, ১০. কায়কোবাদ, ১১. বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

পঞ্চকবি
১. বুদ্ধদেব বসু, ২. জীবনানন্দ দাস, ৩. বিষ্ণু দে, ৪. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, ৫. অমিয় চক্রবর্তী- তাদের সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবেন। বাংলা ব্যাকরণ মুখস্থ না করে বুঝে পড়বেন। তাহলে কমন না পড়লেও উত্তর দিতে পারবেন।
ইংরেজির প্রস্তুতির জন্য
ইংরেজি গ্রামার থেকে যা পড়বেন- Sentence, parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Gender, Synoûm, Antoûm ইত্যাদি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু বাক্য অনুবাদ পড়তে হবে। ভালো কিছু গ্রামার বই সংগ্রহে রাখতে হবে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো – Noun, Verb, Adjective, Adverb, Prepositon. Change to- Simple, Compound & Complex, Voice Change, Mood, Infinitive, Participle, Gerund, Idioms & Phrases, Correct Word, Synoûm & Antoûm, Vocabulary. এগুলো পড়লেই প্রায় সব উত্তর দিতে পারবেন।
অংকের জন্য প্রস্তুতি
অংকে খুব মনোযোগী হতে হবে এবং ভালো করে বুঝে করতে হবে।
পাটিগণিত : লাভ-ক্ষতি, সুদ-কষা, পিতা-পুত্র, মাতা-কন্যা, অনুপাত, ঐকিক নিয়ম, সংখ্যার ধারণা, ল.সা.গু, গ.সা.গু, ভগ্নাংশ, গড়, সময়+গতিবেগ, দূরত্ব ধারা ও মানসিক দক্ষতা থেকে প্রশ্ন আসে।
বীজগণিত : বীজগাণিতীয় রাশি (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ), সূত্রের প্রয়োগ ও সূত্রাবলীর প্রমাণ সরল সমীকরণ, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন আসে।
জ্যামিতি : ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ, রম্বস, সামন্তরিক, বৃত্ত ও জ্যামিতি বিষয়ের খুঁটিনাটি থেকে প্রশ্ন আসে। এগুলো ভালোভাবে বুঝে করলেই প্রশ্ন কমস পড়বে। পাশাপাশি অনুশীলনগুলো চর্চা করবেন। সঙ্গে গচ৩, গধমরপ গধঃয, ম্যাথ রিভিউ. প্রফেসর’স গাণিতিক যুক্তি, শর্টকাট ম্যাথ, ওরাকল গাণিতিক যুক্তি বইগুলো দেখতে পারেন।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানের জন্য ভালো কিছু বই সংগ্রহে রাখুন। আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব, জ্ঞান সিন্ধু– এগুলোর অন্তত একটা বই সংগ্রহে রাখবেন। সঙ্গে প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। আর দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও রাজধানী, প্রণালী, দেশ-বিদেশের নদী, খাল, বিখ্যাত স্থান, স্থাপনা, বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম, বন্দর, জলপ্রপাত, ঐতিহাসিক স্থান, ইতিহাস জড়িত ঘটনাবলী, আবিষ্কার, পুরস্কার, বিখ্যাত ব্যক্তিদের কর্ম, অবদান ও তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাল এসব থেকেই প্রশ্ন আসে।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বের প্রাচীন শাসনামল অর্থাৎ মুঘল আমল, ইংরেজ শাসন আমল ইত্যাদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতা ঘোষণা, মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলী, মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল ও ভূমিকা, পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বাংলাদেশের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা, নারী-পুরুষের সংখ্যা, জন্ম-মৃত্যুহার। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের জীবন-যাপন, আইন ও শাসন বিভাগ সংক্রান্ত তথ্যাবলী। বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহ, জাতীয় পুরস্কার, বাংলাদেশের খেলধুলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি।
#তথ্য-প্রযুক্তি, কম্পিউটার বিষয়ক বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে হবে।
#ধৈর্য ধরে যথেষ্ট সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
# চাকরি সংক্রান্ত কোর্সে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দিলে প্রস্তুতি ভালো হবে
# কোন্ চাকরি করবেন সেটা সম্পর্কে সুস্পষ্ট লক্ষ্য রাখুন। সেভাবেই প্রস্তুতি নিন। কারণ পদ বুঝে প্রস্তুতি আলাদা হয়ে থাকে।
# একবার না পারলে যতদিন সময় থাকবে বারবার পরীক্ষা দিন। হতাশ হবেন না। বারবার পরীক্ষায় আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও পারসোনালিটি বাড়বে। এক সময় দেখবেন চাকরিটাও ঝুপ করে হয়ে গেছে।
# চোখ-কান খোলা রেখে কোথায় কি হচ্ছে সব সময় খেয়াল রাখুন। এতে চাকরি ও চাকরির পর আপনার পদোন্নতিতে সহায় হবে। তাই সব সময় আপডেট থাকুন।
চাকরি বাজারে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে সরকারি চাকরি। তাই এটি পাওয়ার জন্য আগে অবশ্যই লক্ষ্যস্থির করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি নিজে থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করুন, বাকিটা এমনিই হবে। মনে রাখবেন, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।