গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষা: স্থাপত্য বিভাগের প্রস্তুতি নেবে যেভাবে

মাহিরা তাজরী

যেসব শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য আগ্রহী, বুয়েটের পাশাপাশি তাদের জন্য গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

আসনসংখ্যা
গুচ্ছের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ৩ হাজার ২৩১টি। এর মধ্যে চুয়েটে ৯৩১, কুয়েটে ১ হাজার ৬৫ এবং রুয়েটে মোট আসন ১ হাজার ২৩৫টি।

আবেদনের যোগ্যতা ও মানবণ্টন
এসএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৪.০০ হতে হবে। এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের গণিত, রসায়ন ও পদার্থ বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে জিপিএ ৫: ০০ পেতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট ৪: ০০ থাকতে হবে।

দুটি গ্রুপে সাধারণত এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 
ক. ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ।
খ. ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগ।

‘ক’ গ্রুপে গণিতে ১৫টি প্রশ্নে ১৫০ নম্বর, পদার্থবিজ্ঞানে ১৫টিতে ১৫০, রসায়নে ১৫টিতে ১৫০ এবং ইংরেজি বিষয়ে ৫টি প্রশ্নের জন্য ৫০ নিয়ে মোট ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

এদিকে গ্রুপ ‘খ’তে উপরিউক্ত প্রশ্নের সঙ্গে অঙ্কন ২০০ নম্বর নিয়ে মোট ৭০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রশ্নের ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।

প্রস্তুতির শুরু এখনই 
২০২১ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল বেশ দেরিতে। তাই আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করে অনলাইনেই একটা বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করে ফেলি। এরপর পরীক্ষা শেষে জানুয়ারিতে মূল প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তাই তোমরাও এখনই নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলো। হাতে একেবারেই সময় নেই।

একেকজনের পড়াশোনার ধরন একেক রকম। তাই নিজের মতো করেই একটা রুটিন ঠিক করে ফেলো। এই সময়টায় মূল পাঠ্যবই ভালোমতো পড়ে শেষ করো, যাতে বেসিক খুব পরিষ্কার থাকে। এরপর চাইলে সহায়ক বই অথবা কোচিংয়ের লেকচারশিট দেখতে পারো। আর বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে কী কী পড়া লাগবে সেটারও একটা চার্ট করে ফেলো।

পরীক্ষা শুরুর এক মাসের মধ্যেই সব বিষয়ের প্রস্তুতি শেষ করে নেওয়া ভালো। এই সময়ে নতুন কিছু শেখার চেয়ে আগে যা পড়া হয়েছে, ওটাই বেশি করে অনুশীলন করতে হবে। যেমন্‌—আমি এই সময়ে অঙ্কগুলো আবার শুরু থেকে করতাম। এটা আমার ভর্তি প্রস্তুতিতে অনেক সহায়তা করেছিল। আর আগের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অবশ্যই সমাধান করতে হবে। তাহলে যেসব বিষয়ে তোমার সমস্যা আছে, তা খুঁজে বের করতে পারবে। প্রশ্নের ধরন সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরি হবে। আর মনে রাখতে হবে, তোমাদের মতো অন্যরাও প্রথমবারই পরীক্ষা দিচ্ছে, তাই টেনশন করবে না।

আর্কিটেকচারের জন্য প্রস্তুতি 
একটি ভবনের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে স্থাপত্য। গণিত, বিজ্ঞান ও শৈল্পিক ভাবনার সমন্বয়ে ভবনের নকশা ও নির্মাণশৈলীই হলো স্থাপত্য। এখানে শিল্প বা কলা ও প্রকৌশলেরও সংমিশ্রণ আছে।

আমার আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য বিভাগের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রথম ধাপ ছিল আর্কিটেকচারের প্রশ্নের ধরনটা জানা। আর আমার আগে থেকেই আর্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল, তাই প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার সময় স্কেল ব্যবহার করা যায় না। তাই আমি ভালোমতো সরলরেখা টানা অনুশীলন করেছি। গুগল ও পিন্টারেস্টের মতো অনলাইনের অনেক ওয়েবসাইট থেকে এগুলো নিয়ে ভালো আইডিয়া পাবে।

আর্কিটেকচারের জন্য যেসব বিষয় ভালোমতো অনুশীলন করতে হবে
পার্সপেক্টিভ, জিওমেট্রিক, কম্পোজিশন—এসব বিষয় আমাদের নতুন করে জানতে হয় ৷ এগুলো বেশি করে অনুশীলন করবে। এর মধ্য দিয়ে নিজের একটা আঁকার ধরন বের হয়ে আসে।

যেসব বই পড়তে পারো
মূল বই তো অবশ্যই পড়বে। আমি আর্কিটেকচারের জন্য বুয়েট স্থাপত্য বিভাগের ‘সৌপ্তিক ১৭’ ব্যাচের প্রকাশিত বইটি পড়েছিলাম। আর কোচিংয়ের এক সেট বই ফলো করেছি। তবে আমি সব সময় মনে করি, বই অনেকগুলো না পড়ার চেয়ে নিজের যেই বই থেকে পড়তে সুবিধা মনে হয়, ওইটা ভালো করে পড়ে বেশি বেশি অনুশীলন করা উচিত।

সব শেষে বলতে চাই, কিছুতেই মনোবল হারানো যাবে না। পড়ালেখা কম করে থাকলেও দৃঢ় মনোবল থাকা লাগবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় অনেক মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

তাই অনুকূল ও প্রতিকূল দুই ধরনের ফলাফলের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে। সবার জন্য শুভকামনা।

মাহিরা তাজরী, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী, গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং (স্থাপত্য বিভাগ)

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষা: স্থাপত্য বিভাগের প্রস্তুতি নেবে যেভাবে

মাহিরা তাজরী

যেসব শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য আগ্রহী, বুয়েটের পাশাপাশি তাদের জন্য গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

আসনসংখ্যা
গুচ্ছের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ৩ হাজার ২৩১টি। এর মধ্যে চুয়েটে ৯৩১, কুয়েটে ১ হাজার ৬৫ এবং রুয়েটে মোট আসন ১ হাজার ২৩৫টি।

আবেদনের যোগ্যতা ও মানবণ্টন
এসএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৪.০০ হতে হবে। এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের গণিত, রসায়ন ও পদার্থ বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে জিপিএ ৫: ০০ পেতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট ৪: ০০ থাকতে হবে।

দুটি গ্রুপে সাধারণত এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 
ক. ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ।
খ. ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগ।

‘ক’ গ্রুপে গণিতে ১৫টি প্রশ্নে ১৫০ নম্বর, পদার্থবিজ্ঞানে ১৫টিতে ১৫০, রসায়নে ১৫টিতে ১৫০ এবং ইংরেজি বিষয়ে ৫টি প্রশ্নের জন্য ৫০ নিয়ে মোট ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

এদিকে গ্রুপ ‘খ’তে উপরিউক্ত প্রশ্নের সঙ্গে অঙ্কন ২০০ নম্বর নিয়ে মোট ৭০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রশ্নের ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।

প্রস্তুতির শুরু এখনই 
২০২১ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল বেশ দেরিতে। তাই আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করে অনলাইনেই একটা বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করে ফেলি। এরপর পরীক্ষা শেষে জানুয়ারিতে মূল প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তাই তোমরাও এখনই নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলো। হাতে একেবারেই সময় নেই।

একেকজনের পড়াশোনার ধরন একেক রকম। তাই নিজের মতো করেই একটা রুটিন ঠিক করে ফেলো। এই সময়টায় মূল পাঠ্যবই ভালোমতো পড়ে শেষ করো, যাতে বেসিক খুব পরিষ্কার থাকে। এরপর চাইলে সহায়ক বই অথবা কোচিংয়ের লেকচারশিট দেখতে পারো। আর বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে কী কী পড়া লাগবে সেটারও একটা চার্ট করে ফেলো।

পরীক্ষা শুরুর এক মাসের মধ্যেই সব বিষয়ের প্রস্তুতি শেষ করে নেওয়া ভালো। এই সময়ে নতুন কিছু শেখার চেয়ে আগে যা পড়া হয়েছে, ওটাই বেশি করে অনুশীলন করতে হবে। যেমন্‌—আমি এই সময়ে অঙ্কগুলো আবার শুরু থেকে করতাম। এটা আমার ভর্তি প্রস্তুতিতে অনেক সহায়তা করেছিল। আর আগের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অবশ্যই সমাধান করতে হবে। তাহলে যেসব বিষয়ে তোমার সমস্যা আছে, তা খুঁজে বের করতে পারবে। প্রশ্নের ধরন সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরি হবে। আর মনে রাখতে হবে, তোমাদের মতো অন্যরাও প্রথমবারই পরীক্ষা দিচ্ছে, তাই টেনশন করবে না।

আর্কিটেকচারের জন্য প্রস্তুতি 
একটি ভবনের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে স্থাপত্য। গণিত, বিজ্ঞান ও শৈল্পিক ভাবনার সমন্বয়ে ভবনের নকশা ও নির্মাণশৈলীই হলো স্থাপত্য। এখানে শিল্প বা কলা ও প্রকৌশলেরও সংমিশ্রণ আছে।

আমার আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য বিভাগের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রথম ধাপ ছিল আর্কিটেকচারের প্রশ্নের ধরনটা জানা। আর আমার আগে থেকেই আর্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল, তাই প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার সময় স্কেল ব্যবহার করা যায় না। তাই আমি ভালোমতো সরলরেখা টানা অনুশীলন করেছি। গুগল ও পিন্টারেস্টের মতো অনলাইনের অনেক ওয়েবসাইট থেকে এগুলো নিয়ে ভালো আইডিয়া পাবে।

আর্কিটেকচারের জন্য যেসব বিষয় ভালোমতো অনুশীলন করতে হবে
পার্সপেক্টিভ, জিওমেট্রিক, কম্পোজিশন—এসব বিষয় আমাদের নতুন করে জানতে হয় ৷ এগুলো বেশি করে অনুশীলন করবে। এর মধ্য দিয়ে নিজের একটা আঁকার ধরন বের হয়ে আসে।

যেসব বই পড়তে পারো
মূল বই তো অবশ্যই পড়বে। আমি আর্কিটেকচারের জন্য বুয়েট স্থাপত্য বিভাগের ‘সৌপ্তিক ১৭’ ব্যাচের প্রকাশিত বইটি পড়েছিলাম। আর কোচিংয়ের এক সেট বই ফলো করেছি। তবে আমি সব সময় মনে করি, বই অনেকগুলো না পড়ার চেয়ে নিজের যেই বই থেকে পড়তে সুবিধা মনে হয়, ওইটা ভালো করে পড়ে বেশি বেশি অনুশীলন করা উচিত।

সব শেষে বলতে চাই, কিছুতেই মনোবল হারানো যাবে না। পড়ালেখা কম করে থাকলেও দৃঢ় মনোবল থাকা লাগবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় অনেক মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

তাই অনুকূল ও প্রতিকূল দুই ধরনের ফলাফলের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে। সবার জন্য শুভকামনা।

মাহিরা তাজরী, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী, গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং (স্থাপত্য বিভাগ)

অনুলিখন: মুসাররাত আবির