ঢাবির ‘ক’ ইউনিট যাঁদের প্রথম পছন্দ

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল এইচএসসি পরীক্ষা। তোমরা নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছ। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। প্রিয় অনুজ, তোমরা যারা ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে, তাদের প্রস্তুতি নিয়ে আজ কথা বলব।

সিদ্ধান্ত শুরুতেই
‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তোমাদের উত্তর করতে হবে চারটি বিষয়ের। চারটি বিষয়েই তোমাদের শর্ট সিলেবাস খুবই ভালোভাবে অনুসরণ করতে হবে। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান। তবে এইচএসসি পরীক্ষায় তোমাদের যে চতুর্থ বিষয় ছিল, এর পরিবর্তে বাংলা অথবা ইংরেজি উত্তর করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যে প্রার্থী যে বিষয়ে উত্তর করলে না, তা যে যে বিভাগে ভর্তির ন্যূনতম শর্তে উল্লিখিত আছে, চান্স পেলেও সেসব বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না। যেমন ধরো, জীববিজ্ঞানের পরিবর্তে ইংরেজি উত্তর করে যদি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমও হও, তবু ফার্মাসিতে ভর্তি হতে পারবে না। তাই নিজের শক্তি, দুর্বলতা এবং লক্ষ্য অনুযায়ী আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন চারটি বিষয়ের প্রস্তুতি নেবে।

মানবণ্টন
এখন জেনে নেওয়া যাক পরীক্ষার মানবণ্টন কী রকম হয়। গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড অনুযায়ী, ঢাবি মোট ১২০ নম্বরে স্কোরিং করে। এর মধ্যে ২০ নম্বর তোমাদের এইচএসসি ও এসএসসি রেজাল্টের ওপর নির্ভর করে। বাকি ১০০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর বহুনির্বাচনি পরীক্ষা এবং ৪০ নম্বর লিখিত পরীক্ষা দ্বারা নির্ধারিত হয়। ১০০ নম্বরের এ পরীক্ষার মোট সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে ভয় নেই, এমন প্রশ্নই আসবে, যা তুমি ক্যালকুলেটর ছাড়াই যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ দিয়ে করে ফেলতে পারবে। কিন্তু এ জন্য চর্চার কমতি রাখা যাবে না।

বহুনির্বাচনি এবং লিখিত পরীক্ষা
বহুনির্বাচনি এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি কিছুটা আলাদা হলেও একটা সাধারণ ব্যাপার আছে। ঢাবি পারতপক্ষে সব প্রশ্নই কনসেপচুয়াল করার চেষ্টা করে। তাই বিষয়ভিত্তিক ধারণা পরিষ্কার থাকা একান্ত জরুরি। সত্যি বলতে, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি আবার একেকজনের জন্য একেক রকম। এইচএসসিতে থাকতেই যারা অনেক পড়াশোনা করে বেসিক জিনিসগুলো রপ্ত করে ফেলেছ, তাদের উচিত হবে অনেক প্রশ্ন সমাধান করে গতি ও নির্ভুলতার হার বাড়ানো। আর যাদের কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে, তাদের প্রথম কাজ হবে যত দ্রুত সম্ভব সেসব ঘাটতি পূরণ করা, যাতে তুমি প্রশ্ন সমাধানের সময় বোঝ যে কী করছ এবং কেন করছ। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক পথে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করতে হবে।

বিষয়ভিত্তিক
বিষয়ভিত্তিকভাবে বললে, পদার্থবিজ্ঞানে বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলো বেশির ভাগই সূত্রনির্ভর হয়ে থাকে। কী কী তথ্য দেওয়া আছে এবং কী চেয়েছে—এগুলো দ্রুততম সময়ে সঠিক সূত্র/সূত্রসমূহের সঙ্গে রিলেট করতে পারলে এখানে সাফল্য আসবে। যারা বুঝে পড়েছ বা পড়বে তারা এখানে অনেক বেশি স্কোর করতে পারবে। এক রাশির সঙ্গে আরেক রাশির সম্পর্ক (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) ও গ্রাফ, সূত্রের কার্যকারিতা, সীমাবদ্ধতা এবং কোন রাশি কী নির্দেশ করে, এগুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখবে। লিখিত পরীক্ষাও কনসেপ্ট-নির্ভর। সূত্রের অঙ্ক, ছোটখাটো প্রমাণ, এগুলোর প্রস্তুতি ভালোমতো নিতে হবে। খুব বড় জটিল প্রশ্ন, অর্থাৎ যেগুলো সমাধানে খুব বেশি সময় ও জায়গা লাগে, সেগুলো ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার জন্য অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এরপরে আসে রসায়ন। এখানে গাণিতিক প্রশ্নের অংশে পদার্থের মতো সূত্রভিত্তিক প্রস্তুতি নেবে; কিন্তু তত্ত্বীয় অংশগুলোকে একেবারেই কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। কারণ, এখান থেকেও অনেক প্রশ্ন হয়। বিভিন্ন বিক্রিয়া (বিশেষ করে জৈব যৌগের শনাক্তকারী বিক্রিয়াগুলো), বিভিন্ন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন (বিশেষ করে ‘কেন’ টাইপ প্রশ্ন), বিভিন্ন টার্মিনোলজি কী নির্দেশ করে, কোনো তত্ত্বের তাৎপর্য, প্রয়োগ ও গাণিতিক রূপ এগুলো তত্ত্বীয় অংশের জন্য বিশেষভাবে দেখবে।

উচ্চতর গণিতে মোটামুটি বইয়ের প্রশ্নগুলোই হুবহু চলে আসে। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শিখেছ, ঢাবির জন্যও সেগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আসল চ্যালেঞ্জ এখানে হলো সময়। গণিতের প্রশ্নে বইয়ের ছোট প্রশ্নগুলো বহুনির্বাচনিতে আসে। কিছু লাইন জাম্প অথবা শর্টকাট ব্যবহার করে দ্রুত উত্তর করার কৌশল রপ্ত করতে হয় অনেক সাধনার মাধ্যমে। লিখিততেও সৃজনশীলের গ/ঘ টাইপের প্রশ্ন চলে আসে, সেগুলোও ঝড়ের বেগে সমাধান করতে বারবার চর্চার কোনো বিকল্প নেই।

জীববিজ্ঞানের প্রশ্নগুলো বাকিগুলোর চেয়ে বেশি তথ্যনির্ভর হয়ে থাকে এবং মুখস্থবিদ্যা বেশি যাচাই করা হয় এখানে। গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো বই থেকে দাগিয়ে বারবার পড়তে হবে, তবেই এ অংশের বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করতে পারবে। লিখিত অংশের প্রশ্নগুলো সৃজনশীলের লিখিত প্রশ্নের মতোই আসে। বিভিন্ন ছবি, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য, টার্মিনোলজির ব্যাখ্যা, গুরুত্বপূর্ণ লিস্ট ও উদাহরণ (যেমন রক্ততঞ্চনের ফ্যাক্টরগুলোর নাম), বৈজ্ঞানিক নাম, প্রক্রিয়ার ফ্লোচার্ট ইত্যাদি ভালো করে পড়বে। একটু বুদ্ধি করে পড়লে লিখিত অংশে অনেক ভালো স্কোর করা সম্ভব।

বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান
সবশেষে বলব ঢাবির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোমতো সমাধান করতে। অন্তত গত দশ বছরের প্রশ্ন সমাধান তো অবশ্যই করবে। তাহলে তুমি নিজের অবস্থান যেমন বুঝতে পারবে, পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য কোনগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কী ধরনের প্রশ্ন ঢাবি বেশি দিতে পছন্দ করে, কোথায় তোমার দুর্বলতা সেগুলোর ধারণা স্পষ্ট হবে। আর এতে তুমি নিজে নিজেই তোমার প্রস্তুতিকে আরও বেশি এফিশিয়েন্ট করতে পারবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক বেশি প্রশ্ন (গাণিতিক ও তত্ত্বীয়) সমাধান করবে। কারণ, দিন শেষে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করে আসাই মূল লক্ষ্য, আর সে জন্য প্র্যাকটিসের বিকল্প নেই। প্র্যাকটিসের সময় থেকে শুরু করে ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত সব জায়গায় উত্তর করবে টু দ্য পয়েন্টে। লিখিত পরীক্ষায় যেকোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক লেখা পরিহার করে মূল উত্তর (গাণিতিক প্রশ্নে প্রক্রিয়াসহ) লেখার অভ্যাস করবে।

তোমাদেরকে আমার ভালোবাসার ক্যাম্পাসে দেখব, এই আশা ব্যক্ত করে আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে সুস্থ থেকে নিজ নিজ স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাও। শুভকামনা রইল তোমাদের সবার জন্য।

লেখক: প্রথম স্থান, ক ইউনিট, শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-২০১৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

ঢাবির ‘ক’ ইউনিট যাঁদের প্রথম পছন্দ

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল এইচএসসি পরীক্ষা। তোমরা নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছ। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। প্রিয় অনুজ, তোমরা যারা ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে, তাদের প্রস্তুতি নিয়ে আজ কথা বলব।

সিদ্ধান্ত শুরুতেই
‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তোমাদের উত্তর করতে হবে চারটি বিষয়ের। চারটি বিষয়েই তোমাদের শর্ট সিলেবাস খুবই ভালোভাবে অনুসরণ করতে হবে। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান। তবে এইচএসসি পরীক্ষায় তোমাদের যে চতুর্থ বিষয় ছিল, এর পরিবর্তে বাংলা অথবা ইংরেজি উত্তর করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যে প্রার্থী যে বিষয়ে উত্তর করলে না, তা যে যে বিভাগে ভর্তির ন্যূনতম শর্তে উল্লিখিত আছে, চান্স পেলেও সেসব বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না। যেমন ধরো, জীববিজ্ঞানের পরিবর্তে ইংরেজি উত্তর করে যদি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমও হও, তবু ফার্মাসিতে ভর্তি হতে পারবে না। তাই নিজের শক্তি, দুর্বলতা এবং লক্ষ্য অনুযায়ী আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন চারটি বিষয়ের প্রস্তুতি নেবে।

মানবণ্টন
এখন জেনে নেওয়া যাক পরীক্ষার মানবণ্টন কী রকম হয়। গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড অনুযায়ী, ঢাবি মোট ১২০ নম্বরে স্কোরিং করে। এর মধ্যে ২০ নম্বর তোমাদের এইচএসসি ও এসএসসি রেজাল্টের ওপর নির্ভর করে। বাকি ১০০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর বহুনির্বাচনি পরীক্ষা এবং ৪০ নম্বর লিখিত পরীক্ষা দ্বারা নির্ধারিত হয়। ১০০ নম্বরের এ পরীক্ষার মোট সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে ভয় নেই, এমন প্রশ্নই আসবে, যা তুমি ক্যালকুলেটর ছাড়াই যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ দিয়ে করে ফেলতে পারবে। কিন্তু এ জন্য চর্চার কমতি রাখা যাবে না।

বহুনির্বাচনি এবং লিখিত পরীক্ষা
বহুনির্বাচনি এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি কিছুটা আলাদা হলেও একটা সাধারণ ব্যাপার আছে। ঢাবি পারতপক্ষে সব প্রশ্নই কনসেপচুয়াল করার চেষ্টা করে। তাই বিষয়ভিত্তিক ধারণা পরিষ্কার থাকা একান্ত জরুরি। সত্যি বলতে, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি আবার একেকজনের জন্য একেক রকম। এইচএসসিতে থাকতেই যারা অনেক পড়াশোনা করে বেসিক জিনিসগুলো রপ্ত করে ফেলেছ, তাদের উচিত হবে অনেক প্রশ্ন সমাধান করে গতি ও নির্ভুলতার হার বাড়ানো। আর যাদের কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে, তাদের প্রথম কাজ হবে যত দ্রুত সম্ভব সেসব ঘাটতি পূরণ করা, যাতে তুমি প্রশ্ন সমাধানের সময় বোঝ যে কী করছ এবং কেন করছ। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক পথে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করতে হবে।

বিষয়ভিত্তিক
বিষয়ভিত্তিকভাবে বললে, পদার্থবিজ্ঞানে বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলো বেশির ভাগই সূত্রনির্ভর হয়ে থাকে। কী কী তথ্য দেওয়া আছে এবং কী চেয়েছে—এগুলো দ্রুততম সময়ে সঠিক সূত্র/সূত্রসমূহের সঙ্গে রিলেট করতে পারলে এখানে সাফল্য আসবে। যারা বুঝে পড়েছ বা পড়বে তারা এখানে অনেক বেশি স্কোর করতে পারবে। এক রাশির সঙ্গে আরেক রাশির সম্পর্ক (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) ও গ্রাফ, সূত্রের কার্যকারিতা, সীমাবদ্ধতা এবং কোন রাশি কী নির্দেশ করে, এগুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখবে। লিখিত পরীক্ষাও কনসেপ্ট-নির্ভর। সূত্রের অঙ্ক, ছোটখাটো প্রমাণ, এগুলোর প্রস্তুতি ভালোমতো নিতে হবে। খুব বড় জটিল প্রশ্ন, অর্থাৎ যেগুলো সমাধানে খুব বেশি সময় ও জায়গা লাগে, সেগুলো ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার জন্য অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এরপরে আসে রসায়ন। এখানে গাণিতিক প্রশ্নের অংশে পদার্থের মতো সূত্রভিত্তিক প্রস্তুতি নেবে; কিন্তু তত্ত্বীয় অংশগুলোকে একেবারেই কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। কারণ, এখান থেকেও অনেক প্রশ্ন হয়। বিভিন্ন বিক্রিয়া (বিশেষ করে জৈব যৌগের শনাক্তকারী বিক্রিয়াগুলো), বিভিন্ন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন (বিশেষ করে ‘কেন’ টাইপ প্রশ্ন), বিভিন্ন টার্মিনোলজি কী নির্দেশ করে, কোনো তত্ত্বের তাৎপর্য, প্রয়োগ ও গাণিতিক রূপ এগুলো তত্ত্বীয় অংশের জন্য বিশেষভাবে দেখবে।

উচ্চতর গণিতে মোটামুটি বইয়ের প্রশ্নগুলোই হুবহু চলে আসে। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শিখেছ, ঢাবির জন্যও সেগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আসল চ্যালেঞ্জ এখানে হলো সময়। গণিতের প্রশ্নে বইয়ের ছোট প্রশ্নগুলো বহুনির্বাচনিতে আসে। কিছু লাইন জাম্প অথবা শর্টকাট ব্যবহার করে দ্রুত উত্তর করার কৌশল রপ্ত করতে হয় অনেক সাধনার মাধ্যমে। লিখিততেও সৃজনশীলের গ/ঘ টাইপের প্রশ্ন চলে আসে, সেগুলোও ঝড়ের বেগে সমাধান করতে বারবার চর্চার কোনো বিকল্প নেই।

জীববিজ্ঞানের প্রশ্নগুলো বাকিগুলোর চেয়ে বেশি তথ্যনির্ভর হয়ে থাকে এবং মুখস্থবিদ্যা বেশি যাচাই করা হয় এখানে। গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো বই থেকে দাগিয়ে বারবার পড়তে হবে, তবেই এ অংশের বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করতে পারবে। লিখিত অংশের প্রশ্নগুলো সৃজনশীলের লিখিত প্রশ্নের মতোই আসে। বিভিন্ন ছবি, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য, টার্মিনোলজির ব্যাখ্যা, গুরুত্বপূর্ণ লিস্ট ও উদাহরণ (যেমন রক্ততঞ্চনের ফ্যাক্টরগুলোর নাম), বৈজ্ঞানিক নাম, প্রক্রিয়ার ফ্লোচার্ট ইত্যাদি ভালো করে পড়বে। একটু বুদ্ধি করে পড়লে লিখিত অংশে অনেক ভালো স্কোর করা সম্ভব।

বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান
সবশেষে বলব ঢাবির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোমতো সমাধান করতে। অন্তত গত দশ বছরের প্রশ্ন সমাধান তো অবশ্যই করবে। তাহলে তুমি নিজের অবস্থান যেমন বুঝতে পারবে, পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য কোনগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কী ধরনের প্রশ্ন ঢাবি বেশি দিতে পছন্দ করে, কোথায় তোমার দুর্বলতা সেগুলোর ধারণা স্পষ্ট হবে। আর এতে তুমি নিজে নিজেই তোমার প্রস্তুতিকে আরও বেশি এফিশিয়েন্ট করতে পারবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক বেশি প্রশ্ন (গাণিতিক ও তত্ত্বীয়) সমাধান করবে। কারণ, দিন শেষে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করে আসাই মূল লক্ষ্য, আর সে জন্য প্র্যাকটিসের বিকল্প নেই। প্র্যাকটিসের সময় থেকে শুরু করে ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত সব জায়গায় উত্তর করবে টু দ্য পয়েন্টে। লিখিত পরীক্ষায় যেকোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক লেখা পরিহার করে মূল উত্তর (গাণিতিক প্রশ্নে প্রক্রিয়াসহ) লেখার অভ্যাস করবে।

তোমাদেরকে আমার ভালোবাসার ক্যাম্পাসে দেখব, এই আশা ব্যক্ত করে আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে সুস্থ থেকে নিজ নিজ স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাও। শুভকামনা রইল তোমাদের সবার জন্য।

লেখক: প্রথম স্থান, ক ইউনিট, শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-২০১৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ