দাপ্তরিক কাজের চাপে প্রাথমিকে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে হয়। একজন শিক্ষকের পক্ষে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান কিংবা শ্রেণিতে পরিপূর্ণ সময় ব্যয় করে ফলপ্রসূ পাঠদান বা যথাযথ শিখনফল অর্জন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের কারণে। এতে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বঞ্চিত হয় পাঠের শিখনফল বা মূল বিষয়বস্তু থেকে। বর্তমান প্রযুক্তির এ সময়ে শিক্ষকদের প্রতিদিনই প্রাপ্ত ইমেইল চেক করে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এছাড়া শিক্ষকদের পাঠের বাইরে যেসব কাজ করতে হয়, তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

শিক্ষার্থী ভর্তি রেজিস্টার, বই বিতরণ রেজিস্টার, প্রাক-প্রাথমিক স্টক রেজিস্টার, প্রাক-প্রাথমিক রেজুলেশন রেজিস্টার, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রেজিস্টার, অভর্তিকৃত শিশুর তথ্য রেজিস্টার, এসএমসি রেজুলেশন রেজিস্টার, শিক্ষক অভিভাবক সমিতি রেজিস্টার, মা সমাবেশ রেজিস্টার, অভিভাবক সমাবেশ রেজিস্টার, উঠানবৈঠক রেজিস্টার, পাক্ষিক সভা রেজুলেশন রেজিস্টার, পুনরাবৃত্তি রেজিস্টার, ছবিসহ উপবৃত্তি রেজিস্টার, উপবৃত্তি চাহিদা রেজিস্টার, প্যাক মিটিং রেজিস্টার, খুদে ডাক্তার তালিকা রেজিস্টার, কাব রেজুলেশন রেজিস্টার, কাব আয়ব্যয় রেজিস্টার, কাব দল গঠন রেজিস্টার, কাব চাঁদা আদায় রেজিস্টার, কাব স্টক রেজিস্টার, কাব দল নোটিশ বহি, কাব পরিদর্শন রেজিস্টার, কাব শিক্ষার্থী হাজিরা রেজিস্টার, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন, স্টুডেন্ট কাউন্সিল সভা রেজিস্টার, সমাপনী পরীক্ষা সংক্রান্ত রেজিস্টার, বিদ্যালয় পরিদর্শন রেজিস্টার, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া রেজিস্টার, অন্য বিদ্যালয়ে গমন রেজিস্টার, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর তালিকা রেজিস্টার, নৈমিত্তিক ছুটি রেজিস্টার, শিক্ষার্থীদের পোশাক ও টিফিন বক্স বিতরণ রেজিস্টার, সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ রেজিস্টার, বৃক্ষরোপণ সংক্রান্ত রেজিস্টার, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া সংরক্ষণ রেজিস্টার, পাঠাগার বই আদান-প্রদান রেজিস্টার, শ্রেষ্ঠ অভিভাবক নির্বাচন রেজিস্টার, বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব ও ক্যাশ রেজিস্টার, স্লিপ রেজুলেশন রেজিস্টার, স্লিপ সরকারি ক্যাশ রেজিস্টার, স্লিপ বেসরকারি ক্যাশ রেজিস্টার, স্লিপ স্টক রেজিস্টার, সহায়ক পঠনসামগ্রী রেজিস্টার, মুভমেন্ট রেজিস্টার, ক্ষুদ্র মেরামত ক্যাশ রেজিস্টার, সরকারি ক্যাশ রেজিস্টার, সরকারি স্টক রেজিস্টার, জমিসংক্রান্ত রেজিস্টার, বিদ্যুৎ বিল রেজিস্টার, ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড (১ম-৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি রেজিস্টার, সততা স্টোর চালু, খাতা-কলম-চক ও আনুষঙ্গিক জিনিস ক্রয়, প্রশ্ন প্রণয়ন ও ছাপানো, পরীক্ষার কাগজ ক্রয়, পরীক্ষার আয়োজন করা, পরীক্ষার খাতা দেখা, ফলাফল ঘোষণা, খেলাধুলার আয়োজন করা, শিক্ষক বদলি/অবসর/মাতৃত্বকালীন/ শিক্ষা ছুটি/ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতাজনিত কারণে বছরে ২-৩ বার ক্লাস রুটিন তৈরি, বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা তৈরি, ক্যাচমেন্ট এরিয়া চার্ট তৈরি, শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোম ভিজিট করা, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ (ইউনিয়ন/উপজেলা/ জেলা পর্যায়ে), কমিটির মিটিং আয়োজন করা, সভা-সমাবেশ আয়োজন করা, বিদ্যালয়ের মেরামত কাজ করানো, শিক্ষা অফিস থেকে বই সংগ্রহ, মাসকাবারি তৈরি করা, পাঠ পরিকল্পনা করা, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ব্যানার তৈরি ও শিক্ষার্থীদের গানের অনুশীলন করানো; এছাড়া স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করানো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এসব কার্যক্রম কাজের ধারাবাহিকতার আলোকে প্রতিবছরই করতে হয় প্রাথমিকের বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে। এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে একাডেমিক পাঠদানের বাইরে কী ধরনের কাজের চাপে থাকতে হয়, তা বলার মতো নয়। আবার শিক্ষক স্বল্পতার কারণে চলমান দাপ্তরিক কাজগুলোর পাশাপাশি অনেক সময় কোনো রকম বিরতি ছাড়াই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৭-৮টা বিষয়ের পাঠদান চালিয়ে যেতে হয়। এসব কারণে বর্তমানে মেধাবী শিক্ষকরা সুযোগ বুঝে অন্য চাকরিতে চলে যান এবং কিছুসংখ্যক এ চাকরিতে থাকলেও নানা ধরনের কাজের চাপে নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারেন না বা মেলে ধরতে চান না।

পাঠদানের পাশাপাশি একই সঙ্গে দাপ্তরিক কাজগুলো সম্পন্ন করা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে, তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষকদের এসব কাজের চাপ থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুক্ত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় একজন করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হোক। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক ও উপজেলা শিক্ষা অফিস প্রদত্ত কাজগুলো সম্পাদন ও সংরক্ষণ এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সব কাজ হালফিল রাখার চেষ্টা করবেন। এতে করে শিক্ষকদের কষ্ট লাঘব হবে, দাপ্তরিক কাজের চাপমুক্ত হয়ে প্রত্যেক শিক্ষক শ্রেণি পাঠে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সহিত নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন। একইসঙ্গে পড়ালেখায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে শিক্ষকরা পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সময় দিতে বা গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারবেন।

গাজী আরিফ মান্নান

শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষক,  ফুলগাজী, ফেনী

দাপ্তরিক কাজের চাপে প্রাথমিকে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে হয়। একজন শিক্ষকের পক্ষে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান কিংবা শ্রেণিতে পরিপূর্ণ সময় ব্যয় করে ফলপ্রসূ পাঠদান বা যথাযথ শিখনফল অর্জন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের কারণে। এতে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বঞ্চিত হয় পাঠের শিখনফল বা মূল বিষয়বস্তু থেকে। বর্তমান প্রযুক্তির এ সময়ে শিক্ষকদের প্রতিদিনই প্রাপ্ত ইমেইল চেক করে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এছাড়া শিক্ষকদের পাঠের বাইরে যেসব কাজ করতে হয়, তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

শিক্ষার্থী ভর্তি রেজিস্টার, বই বিতরণ রেজিস্টার, প্রাক-প্রাথমিক স্টক রেজিস্টার, প্রাক-প্রাথমিক রেজুলেশন রেজিস্টার, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রেজিস্টার, অভর্তিকৃত শিশুর তথ্য রেজিস্টার, এসএমসি রেজুলেশন রেজিস্টার, শিক্ষক অভিভাবক সমিতি রেজিস্টার, মা সমাবেশ রেজিস্টার, অভিভাবক সমাবেশ রেজিস্টার, উঠানবৈঠক রেজিস্টার, পাক্ষিক সভা রেজুলেশন রেজিস্টার, পুনরাবৃত্তি রেজিস্টার, ছবিসহ উপবৃত্তি রেজিস্টার, উপবৃত্তি চাহিদা রেজিস্টার, প্যাক মিটিং রেজিস্টার, খুদে ডাক্তার তালিকা রেজিস্টার, কাব রেজুলেশন রেজিস্টার, কাব আয়ব্যয় রেজিস্টার, কাব দল গঠন রেজিস্টার, কাব চাঁদা আদায় রেজিস্টার, কাব স্টক রেজিস্টার, কাব দল নোটিশ বহি, কাব পরিদর্শন রেজিস্টার, কাব শিক্ষার্থী হাজিরা রেজিস্টার, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন, স্টুডেন্ট কাউন্সিল সভা রেজিস্টার, সমাপনী পরীক্ষা সংক্রান্ত রেজিস্টার, বিদ্যালয় পরিদর্শন রেজিস্টার, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া রেজিস্টার, অন্য বিদ্যালয়ে গমন রেজিস্টার, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর তালিকা রেজিস্টার, নৈমিত্তিক ছুটি রেজিস্টার, শিক্ষার্থীদের পোশাক ও টিফিন বক্স বিতরণ রেজিস্টার, সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ রেজিস্টার, বৃক্ষরোপণ সংক্রান্ত রেজিস্টার, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া সংরক্ষণ রেজিস্টার, পাঠাগার বই আদান-প্রদান রেজিস্টার, শ্রেষ্ঠ অভিভাবক নির্বাচন রেজিস্টার, বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব ও ক্যাশ রেজিস্টার, স্লিপ রেজুলেশন রেজিস্টার, স্লিপ সরকারি ক্যাশ রেজিস্টার, স্লিপ বেসরকারি ক্যাশ রেজিস্টার, স্লিপ স্টক রেজিস্টার, সহায়ক পঠনসামগ্রী রেজিস্টার, মুভমেন্ট রেজিস্টার, ক্ষুদ্র মেরামত ক্যাশ রেজিস্টার, সরকারি ক্যাশ রেজিস্টার, সরকারি স্টক রেজিস্টার, জমিসংক্রান্ত রেজিস্টার, বিদ্যুৎ বিল রেজিস্টার, ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড (১ম-৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি রেজিস্টার, সততা স্টোর চালু, খাতা-কলম-চক ও আনুষঙ্গিক জিনিস ক্রয়, প্রশ্ন প্রণয়ন ও ছাপানো, পরীক্ষার কাগজ ক্রয়, পরীক্ষার আয়োজন করা, পরীক্ষার খাতা দেখা, ফলাফল ঘোষণা, খেলাধুলার আয়োজন করা, শিক্ষক বদলি/অবসর/মাতৃত্বকালীন/ শিক্ষা ছুটি/ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতাজনিত কারণে বছরে ২-৩ বার ক্লাস রুটিন তৈরি, বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা তৈরি, ক্যাচমেন্ট এরিয়া চার্ট তৈরি, শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোম ভিজিট করা, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ (ইউনিয়ন/উপজেলা/ জেলা পর্যায়ে), কমিটির মিটিং আয়োজন করা, সভা-সমাবেশ আয়োজন করা, বিদ্যালয়ের মেরামত কাজ করানো, শিক্ষা অফিস থেকে বই সংগ্রহ, মাসকাবারি তৈরি করা, পাঠ পরিকল্পনা করা, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ব্যানার তৈরি ও শিক্ষার্থীদের গানের অনুশীলন করানো; এছাড়া স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করানো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এসব কার্যক্রম কাজের ধারাবাহিকতার আলোকে প্রতিবছরই করতে হয় প্রাথমিকের বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে। এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে একাডেমিক পাঠদানের বাইরে কী ধরনের কাজের চাপে থাকতে হয়, তা বলার মতো নয়। আবার শিক্ষক স্বল্পতার কারণে চলমান দাপ্তরিক কাজগুলোর পাশাপাশি অনেক সময় কোনো রকম বিরতি ছাড়াই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৭-৮টা বিষয়ের পাঠদান চালিয়ে যেতে হয়। এসব কারণে বর্তমানে মেধাবী শিক্ষকরা সুযোগ বুঝে অন্য চাকরিতে চলে যান এবং কিছুসংখ্যক এ চাকরিতে থাকলেও নানা ধরনের কাজের চাপে নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারেন না বা মেলে ধরতে চান না।

পাঠদানের পাশাপাশি একই সঙ্গে দাপ্তরিক কাজগুলো সম্পন্ন করা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে, তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষকদের এসব কাজের চাপ থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুক্ত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় একজন করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হোক। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক ও উপজেলা শিক্ষা অফিস প্রদত্ত কাজগুলো সম্পাদন ও সংরক্ষণ এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সব কাজ হালফিল রাখার চেষ্টা করবেন। এতে করে শিক্ষকদের কষ্ট লাঘব হবে, দাপ্তরিক কাজের চাপমুক্ত হয়ে প্রত্যেক শিক্ষক শ্রেণি পাঠে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সহিত নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন। একইসঙ্গে পড়ালেখায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে শিক্ষকরা পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সময় দিতে বা গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারবেন।

গাজী আরিফ মান্নান

শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষক,  ফুলগাজী, ফেনী