নমুনা ভাইভা: শিক্ষা ক্যাডার বাদ দিয়ে পুলিশে কেন আসতে চান

সোহেল রানা

প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক করেছি। ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে গেজেটেড হলেও যোগদান করিনি। ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হই। এই বিসিএসে আমার ক্যাডার পছন্দ যথাক্রমে: পুলিশ, অ্যাডমিন, ইকোনমিক, কাস্টমস, ট্যাক্স, অডিট। ৪০তম বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতার আলোকে একটি নমুনা ভাইভা তুলে ধরা হলো:

আমি: ডাবল মাস্ক পরে রুমে ঢুকে সালাম দিলাম। (স্যার বসতে বললেন)

চেয়ারম্যান: এখন কোন কলেজে আছেন?
আমি: স্যার, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিতে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে আছি বিধায় ৩৮তমে শিক্ষা ক্যাডারে জয়েন করা হয়নি।

চেয়ারম্যান: (অনেকটা ধমক দিয়ে) আপনি তো বিসিএস ক্যাডারকে রিফিউজ করেছেন। পাওয়ার সেক্টর দিয়ে একটা খাত উন্নতি হবে, আর শিক্ষা ক্যাডার দিয়ে আপনি একটা জাতির উন্নতি করতে পারতেন। আপনি এখানে কী করেন, যার জন্য এমন মহান পেশাকে রিফিউজ করলেন?
আমি: স্যার, আমি অডিট ডিপার্টমেন্টে আছি, যেটি আমার সাবজেক্টের সঙ্গে মিল আছে।

চেয়ারম্যান: আপনার প্রথম চয়েস কী?
আমি: বিসিএস পুলিশ।

চেয়ারম্যানসহ বাকি দুজন এক্সটারনাল কটাক্ষ করে হেসে দিলেন। অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষা ক্যাডার বাদ দিলেন। আবার অডিট ক্যাডারকে সবার শেষে চয়েস করে এখন আবার পুলিশ হতে চান! পুলিশ হয়ে কী করবেন?
আমি: স্যার, প্রথমে আমি জনগণের সেবক হয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজ করব।

চেয়ারম্যান: জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা আপনার কাজ না। অনেকটা ধমকের সুরে…এসব কী আপনার কাজ। আপনি কি পলিসি মেকার? এসব উদ্ভট কথাবার্তা আমাদের বলবেন না! আচ্ছা ৩ নম্বর চয়েস তো ইকোনমিক ক্যাডার। এটার হায়ারার্কি বলুন তো।
আমি: স্যার, যেহেতু এটা অ্যাডমিনের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেছে তাই…

চেয়ারম্যান: যখন চয়েস দিয়েছেন, তখন তো একীভূত হয়নি। ওটারই হায়ারার্কি বলুন?
আমি: সরি স্যার।

চেয়ারম্যান: আপনি শিউর?
আমি: আমি এই মুহূর্তে হায়ারার্কিটা মনে করতে পারছি না।

চেয়ারম্যান স্যার ওনার ডান পাশের এক্সটারনাল স্যারকে প্রশ্ন করতে বললেন।

এক্সটারনাল-১: কিছুদিন আগে একটা গ্রাম খুব জনপ্রিয় ছিল। ওই জায়গাটার নাম কী?
আমি: (খানিকটা ভয়ে…) আসলে একটা গ্রাম তো অনেক দিক দিয়েই জনপ্রিয় হয়ে থাকতে পারে। স্যার, আপনি কোন দিক দিয়ে বলছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না।

এক্সটারনাল-১: আচ্ছা, তুমি কী চর কুকরিমুকরির নাম শুনেছ?
আমি: জি স্যার, শুনেছি।

এক্সটারনাল-১: এটা কেন জনপ্রিয়?
আমি: স্যার, এখানে প্রথম UDC বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়।

এক্সটারনাল-১: এই যে তুমি পেরেছ। কী কী সেবা দেওয়া হয় এখানে?
আমি: কয়েকটা সেবার নাম বললাম। (স্যার খুশি হলেন)

এক্সটারনাল-১: তোমার ইউনিয়ন কোনটা? গিয়েছ কখনো? (স্যার আমার জেলা দেখলেন)
আমি: স্যার, আমি প্রায়ই সেখানে যাই।

এক্সটারনাল-১: (হোম ডিস্ট্রিক্ট ঢাকা দেখে বললেন) তোমার বাবা কী করেন?
আমি: আমাদের নিজস্ব জমি-জমায় ফসল ফলিয়ে কৃষিকাজ করেন।

এক্সটারনাল-১: (হেসে…) ঢাকার কেরানীগঞ্জে কোনো কৃষিজমি আছে নাকি? সবই তো শহর।
আমি: আমার বাড়ি নদীর পাশে, কিছুটা গ্রামের দিকে। সেখানে কৃষি প্রধান পেশা।

এক্সটারনাল-১: কী কী ফসল হয়?
আমি: সঠিক উত্তর না দিয়ে অনেকটা পেঁচিয়ে বলে ফেলেছি।

চেয়ারম্যান: এক্সাক্টলি বলুন?
আমি: ধান, লাউ, পুঁইশাক, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি।

এক্সটারনাল-১: তোমাদের কতটুকু জমি আছে?
আমি: স্যার, দেড় থেকে দুই পাকির মতো।

এক্সটারনাল-১: ওহ! তুমি পাকিও বোঝো? এক পাকিতে কত শতাংশ?
আমি: স্যার, এটা সাধারণত একেক এলাকায় একেক রকম হয়। আমাদের এখানে ২৬ শতাংশকে এক পাকি বলে।

এবার চেয়ারম্যান স্যার দ্বিতীয় এক্সটারনালকে প্রশ্ন করতে বললেন।

এক্সটারনাল-২: পুলিশে কেন আসতে চাও? কী যোগ্যতা আছে তোমার?
আমি: স্যার, আমি যেহেতু গ্রামের মুক্ত পরিবেশে বড় হয়েছি। তা ছাড়া দুই বছর ধরে অডিট ডিপার্টমেন্টে আছি, যাকে বলা হয় ‘ইনফরমাল পুলিশিং অ্যাকটিভিটিস’। তাই আমি মনে করি পুলিশে ভালো করব।

এক্সটারনাল-২: পোস্টমর্টেম কী?
আমি: পোস্টমর্টেম শব্দটি ল্যাটিন থেকে এসেছে। এখানে পোস্ট অর্থ ‘পরে’ এবং মর্টেমের অর্থ ‘মৃত্যু’। কোন ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ তৈরি হলে বা কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মূলত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্যই ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম করা হয়।

এক্সটারনাল-২: পোস্টমর্টেমের সময় সেখানে কে উপস্থিত থাকে?
আমি: সিভিল সার্জন। জেলার স্বাস্থ্যপ্রধান।

এক্সটারনাল-২: তাহলে এটা কী অটোপসি নাকি বায়োপসি?
আমি: স্যার, এটা যেহেতু পোস্টমর্টেম। তাই অটোপসি হবে। (অনুমানে বলেছি)

এক্সটারনাল-২: আপনি না জেনে বলেন কেন?
আমি: সরি স্যার।

শেষে চেয়ারম্যান স্যার বললেন, আপনি এবার আসতে পারেন। সার্টিফিকেট নিয়ে যান। সবাইকে সালাম জানিয়ে বের হয়ে এলাম।

সোহেল রানা, পুলিশ ক্যাডার, ৪০তম বিসিএস

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

নমুনা ভাইভা: শিক্ষা ক্যাডার বাদ দিয়ে পুলিশে কেন আসতে চান

সোহেল রানা

প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক করেছি। ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে গেজেটেড হলেও যোগদান করিনি। ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হই। এই বিসিএসে আমার ক্যাডার পছন্দ যথাক্রমে: পুলিশ, অ্যাডমিন, ইকোনমিক, কাস্টমস, ট্যাক্স, অডিট। ৪০তম বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতার আলোকে একটি নমুনা ভাইভা তুলে ধরা হলো:

আমি: ডাবল মাস্ক পরে রুমে ঢুকে সালাম দিলাম। (স্যার বসতে বললেন)

চেয়ারম্যান: এখন কোন কলেজে আছেন?
আমি: স্যার, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিতে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে আছি বিধায় ৩৮তমে শিক্ষা ক্যাডারে জয়েন করা হয়নি।

চেয়ারম্যান: (অনেকটা ধমক দিয়ে) আপনি তো বিসিএস ক্যাডারকে রিফিউজ করেছেন। পাওয়ার সেক্টর দিয়ে একটা খাত উন্নতি হবে, আর শিক্ষা ক্যাডার দিয়ে আপনি একটা জাতির উন্নতি করতে পারতেন। আপনি এখানে কী করেন, যার জন্য এমন মহান পেশাকে রিফিউজ করলেন?
আমি: স্যার, আমি অডিট ডিপার্টমেন্টে আছি, যেটি আমার সাবজেক্টের সঙ্গে মিল আছে।

চেয়ারম্যান: আপনার প্রথম চয়েস কী?
আমি: বিসিএস পুলিশ।

চেয়ারম্যানসহ বাকি দুজন এক্সটারনাল কটাক্ষ করে হেসে দিলেন। অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষা ক্যাডার বাদ দিলেন। আবার অডিট ক্যাডারকে সবার শেষে চয়েস করে এখন আবার পুলিশ হতে চান! পুলিশ হয়ে কী করবেন?
আমি: স্যার, প্রথমে আমি জনগণের সেবক হয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজ করব।

চেয়ারম্যান: জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা আপনার কাজ না। অনেকটা ধমকের সুরে…এসব কী আপনার কাজ। আপনি কি পলিসি মেকার? এসব উদ্ভট কথাবার্তা আমাদের বলবেন না! আচ্ছা ৩ নম্বর চয়েস তো ইকোনমিক ক্যাডার। এটার হায়ারার্কি বলুন তো।
আমি: স্যার, যেহেতু এটা অ্যাডমিনের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেছে তাই…

চেয়ারম্যান: যখন চয়েস দিয়েছেন, তখন তো একীভূত হয়নি। ওটারই হায়ারার্কি বলুন?
আমি: সরি স্যার।

চেয়ারম্যান: আপনি শিউর?
আমি: আমি এই মুহূর্তে হায়ারার্কিটা মনে করতে পারছি না।

চেয়ারম্যান স্যার ওনার ডান পাশের এক্সটারনাল স্যারকে প্রশ্ন করতে বললেন।

এক্সটারনাল-১: কিছুদিন আগে একটা গ্রাম খুব জনপ্রিয় ছিল। ওই জায়গাটার নাম কী?
আমি: (খানিকটা ভয়ে…) আসলে একটা গ্রাম তো অনেক দিক দিয়েই জনপ্রিয় হয়ে থাকতে পারে। স্যার, আপনি কোন দিক দিয়ে বলছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না।

এক্সটারনাল-১: আচ্ছা, তুমি কী চর কুকরিমুকরির নাম শুনেছ?
আমি: জি স্যার, শুনেছি।

এক্সটারনাল-১: এটা কেন জনপ্রিয়?
আমি: স্যার, এখানে প্রথম UDC বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়।

এক্সটারনাল-১: এই যে তুমি পেরেছ। কী কী সেবা দেওয়া হয় এখানে?
আমি: কয়েকটা সেবার নাম বললাম। (স্যার খুশি হলেন)

এক্সটারনাল-১: তোমার ইউনিয়ন কোনটা? গিয়েছ কখনো? (স্যার আমার জেলা দেখলেন)
আমি: স্যার, আমি প্রায়ই সেখানে যাই।

এক্সটারনাল-১: (হোম ডিস্ট্রিক্ট ঢাকা দেখে বললেন) তোমার বাবা কী করেন?
আমি: আমাদের নিজস্ব জমি-জমায় ফসল ফলিয়ে কৃষিকাজ করেন।

এক্সটারনাল-১: (হেসে…) ঢাকার কেরানীগঞ্জে কোনো কৃষিজমি আছে নাকি? সবই তো শহর।
আমি: আমার বাড়ি নদীর পাশে, কিছুটা গ্রামের দিকে। সেখানে কৃষি প্রধান পেশা।

এক্সটারনাল-১: কী কী ফসল হয়?
আমি: সঠিক উত্তর না দিয়ে অনেকটা পেঁচিয়ে বলে ফেলেছি।

চেয়ারম্যান: এক্সাক্টলি বলুন?
আমি: ধান, লাউ, পুঁইশাক, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি।

এক্সটারনাল-১: তোমাদের কতটুকু জমি আছে?
আমি: স্যার, দেড় থেকে দুই পাকির মতো।

এক্সটারনাল-১: ওহ! তুমি পাকিও বোঝো? এক পাকিতে কত শতাংশ?
আমি: স্যার, এটা সাধারণত একেক এলাকায় একেক রকম হয়। আমাদের এখানে ২৬ শতাংশকে এক পাকি বলে।

এবার চেয়ারম্যান স্যার দ্বিতীয় এক্সটারনালকে প্রশ্ন করতে বললেন।

এক্সটারনাল-২: পুলিশে কেন আসতে চাও? কী যোগ্যতা আছে তোমার?
আমি: স্যার, আমি যেহেতু গ্রামের মুক্ত পরিবেশে বড় হয়েছি। তা ছাড়া দুই বছর ধরে অডিট ডিপার্টমেন্টে আছি, যাকে বলা হয় ‘ইনফরমাল পুলিশিং অ্যাকটিভিটিস’। তাই আমি মনে করি পুলিশে ভালো করব।

এক্সটারনাল-২: পোস্টমর্টেম কী?
আমি: পোস্টমর্টেম শব্দটি ল্যাটিন থেকে এসেছে। এখানে পোস্ট অর্থ ‘পরে’ এবং মর্টেমের অর্থ ‘মৃত্যু’। কোন ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ তৈরি হলে বা কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মূলত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্যই ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম করা হয়।

এক্সটারনাল-২: পোস্টমর্টেমের সময় সেখানে কে উপস্থিত থাকে?
আমি: সিভিল সার্জন। জেলার স্বাস্থ্যপ্রধান।

এক্সটারনাল-২: তাহলে এটা কী অটোপসি নাকি বায়োপসি?
আমি: স্যার, এটা যেহেতু পোস্টমর্টেম। তাই অটোপসি হবে। (অনুমানে বলেছি)

এক্সটারনাল-২: আপনি না জেনে বলেন কেন?
আমি: সরি স্যার।

শেষে চেয়ারম্যান স্যার বললেন, আপনি এবার আসতে পারেন। সার্টিফিকেট নিয়ে যান। সবাইকে সালাম জানিয়ে বের হয়ে এলাম।

সোহেল রানা, পুলিশ ক্যাডার, ৪০তম বিসিএস

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম