বুয়েটের শিক্ষক হতে চেয়েছিল ফারদিন

নির্দোষদের হয়রানি নয়, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চায় পরিবার

মরিয়ম চম্পা

আমার ছেলে ভালো একজন মানুষ ছিল। বইয়ের পোকা ছিল। বিতর্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কারা তাকে হত্যা করেছে। আমাদের সঙ্গে তো কারোর শত্রুতা নেই। কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। শিগগিরই স্পেনে বিতর্ক প্রতিযোগী হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল। পড়াশোনা শেষে তার আমেরিকায় উচ্চশিক্ষায় পড়তে যাওয়ার কথা ছিল। এখন সব অতীত।তাকে কি কারণে কেন এবং কারা হত্যা করেছে আমরা জানতে চাই। হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করবে এটাই প্রত্যাশা। প্রকৃত দোষীদের আপনারা খুঁজে বের করুণ। নির্দোষরা যেন শাস্তি না পায়। রাজধানীর ডেমরা থানাধীন কোনাপাড়ার শান্তিবাগের বাসায় নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মা ফারহানা ইয়াসমিন এক নাগারে বলে যান ছেলের কথা। ১৩/১২ শান্তিবাগ শুভেচ্ছা টাওয়ারের ৫ম তলার-৫বি-তে তিন কক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাটটিতে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতো ফারদিন। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতেই কাঠের বুক সেলফে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন লেখকের বই। হাতের ডান পাশের কক্ষটিতে পড়ে আছে ফারদিনের বই, টেবিল চেয়ার। শুধু ফারদিন নেই। এই কক্ষটিতে তিন ভাই একসঙ্গে থাকতো। পাশের কক্ষটিতে বাবা-মা। ফারদিনের মা বলেন, আমার পরশ ছিল বইয়ের পোকা। সে নামের মতোই পরশ পাথর ছিল। পরশ আমার সোনার ছেলে। ওর সংস্পর্শে সবকিছুই পরশ পাথরের মতো বদলে যেতো। বাবার সীমিত উপার্জনে পরিবার চলতো। সংসারের হাল ধরতে সে উদ্ভাসে কোচিং করাতো। টিউশনি করাতো। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে সোনার মানুষ গড়তে তিল তিল করে তৈরি করেছি।

কেন তাকে এভাবে মারতে হলো। কি দোষ ছিল তার। তার তো কোনো শত্রু ছিল না। পরশ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। পরশের মাথার পেছনে এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাকে মাথায় আঘাত করে পরবর্তীতে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে চিকিৎসক। ফারদিনের সঙ্গে বুয়েটের সহপাঠী ও শিক্ষকদের ভালো সম্পর্ক ছিল। শিক্ষকদের প্রিয় ছিলেন ফারদিন। এদিকে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার বিষয়টি জানতেন না তার পরিবার। তাছাড়া তার যে বন্ধুদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাদের সঙ্গে ফারদিনের কোনো বিরোধ ছিল না বলে জানায় পরিবার। ফারদিন হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফারহানা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমরা তিল তিল করে সন্তানদের গড়ি আর তারা সন্তানদের শেষ করে দেয়। এটা দেখার কেউ নেই। এর আগে আবরার হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে। আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের ফাঁসির হুকুম হলেও তা কিন্তু কার্যকর হয়নি। সঠিক এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি কার্যকর করলে আবরার কিংবা ফারদিনদের মতো মেধাবী ছেলেদের এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না। আমাদের চাওয়া একটাই ছেলের হত্যাকারীদের খুব শিগগিরই শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি কার্যকর করা। একটি সন্তানকে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে বাবা মাকে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা কেবল সে সকল পরিবারগুলোই জানে।

এদিকে গত বুধবার মধ্য রাতে রামপুরা থানায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এক নম্বর আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা। এতে বলা হয়, গত ৪ঠা থেকে ৭ই নভেম্বরের কোনো এক সময়ে রামপুরা বা অন্য কোথাও ফারদিন নূর পরশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। পরশের নিখোঁজ এবং এই হত্যাকাণ্ডে আমাতুল্লাহ বুশরার ইন্ধন রয়েছে। এদিকে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা, পিবিআইসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে বান্ধবী বুশরাকে গ্রেপ্তার শেষে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বুশরা ছাড়াও পরশের আরও দুই বন্ধুকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রামপুরা, নিউ মার্কেট, সিটি কলেজ, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্ন স্থানের শতাধিক সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যে জব্দ করেছে পুলিশ। এসব সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ মামলা সংশ্লিষ্ট তদন্ত সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজে গত ৪ তারিখ ফারদিন বনশ্রীতে বান্ধবী বুশরার মেসের দিকে যেতে দেখা গেছে।

কিন্তু ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনো ফুটেজ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। মামলার অন্যতম আসামি বুশরাকে রিমান্ডে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলেন, কেন, কীভাবে, কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যাবে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শেখ ফরহাদ জানান, ফারদিনের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে। তার বুকের ভেতরেও আঘাতের চিহ্ন আছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিন নিখোঁজের পর থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। মামলার অন্যতম আসামি বান্ধবী বুশরা এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাদের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে।

বুয়েটের শিক্ষক হতে চেয়েছিল ফারদিন

নির্দোষদের হয়রানি নয়, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চায় পরিবার

মরিয়ম চম্পা

আমার ছেলে ভালো একজন মানুষ ছিল। বইয়ের পোকা ছিল। বিতর্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কারা তাকে হত্যা করেছে। আমাদের সঙ্গে তো কারোর শত্রুতা নেই। কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। শিগগিরই স্পেনে বিতর্ক প্রতিযোগী হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল। পড়াশোনা শেষে তার আমেরিকায় উচ্চশিক্ষায় পড়তে যাওয়ার কথা ছিল। এখন সব অতীত।তাকে কি কারণে কেন এবং কারা হত্যা করেছে আমরা জানতে চাই। হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করবে এটাই প্রত্যাশা। প্রকৃত দোষীদের আপনারা খুঁজে বের করুণ। নির্দোষরা যেন শাস্তি না পায়। রাজধানীর ডেমরা থানাধীন কোনাপাড়ার শান্তিবাগের বাসায় নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মা ফারহানা ইয়াসমিন এক নাগারে বলে যান ছেলের কথা। ১৩/১২ শান্তিবাগ শুভেচ্ছা টাওয়ারের ৫ম তলার-৫বি-তে তিন কক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাটটিতে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতো ফারদিন। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতেই কাঠের বুক সেলফে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন লেখকের বই। হাতের ডান পাশের কক্ষটিতে পড়ে আছে ফারদিনের বই, টেবিল চেয়ার। শুধু ফারদিন নেই। এই কক্ষটিতে তিন ভাই একসঙ্গে থাকতো। পাশের কক্ষটিতে বাবা-মা। ফারদিনের মা বলেন, আমার পরশ ছিল বইয়ের পোকা। সে নামের মতোই পরশ পাথর ছিল। পরশ আমার সোনার ছেলে। ওর সংস্পর্শে সবকিছুই পরশ পাথরের মতো বদলে যেতো। বাবার সীমিত উপার্জনে পরিবার চলতো। সংসারের হাল ধরতে সে উদ্ভাসে কোচিং করাতো। টিউশনি করাতো। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে সোনার মানুষ গড়তে তিল তিল করে তৈরি করেছি।

কেন তাকে এভাবে মারতে হলো। কি দোষ ছিল তার। তার তো কোনো শত্রু ছিল না। পরশ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। পরশের মাথার পেছনে এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাকে মাথায় আঘাত করে পরবর্তীতে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে চিকিৎসক। ফারদিনের সঙ্গে বুয়েটের সহপাঠী ও শিক্ষকদের ভালো সম্পর্ক ছিল। শিক্ষকদের প্রিয় ছিলেন ফারদিন। এদিকে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার বিষয়টি জানতেন না তার পরিবার। তাছাড়া তার যে বন্ধুদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাদের সঙ্গে ফারদিনের কোনো বিরোধ ছিল না বলে জানায় পরিবার। ফারদিন হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফারহানা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমরা তিল তিল করে সন্তানদের গড়ি আর তারা সন্তানদের শেষ করে দেয়। এটা দেখার কেউ নেই। এর আগে আবরার হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে। আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের ফাঁসির হুকুম হলেও তা কিন্তু কার্যকর হয়নি। সঠিক এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি কার্যকর করলে আবরার কিংবা ফারদিনদের মতো মেধাবী ছেলেদের এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না। আমাদের চাওয়া একটাই ছেলের হত্যাকারীদের খুব শিগগিরই শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি কার্যকর করা। একটি সন্তানকে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে বাবা মাকে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা কেবল সে সকল পরিবারগুলোই জানে।

এদিকে গত বুধবার মধ্য রাতে রামপুরা থানায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এক নম্বর আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা। এতে বলা হয়, গত ৪ঠা থেকে ৭ই নভেম্বরের কোনো এক সময়ে রামপুরা বা অন্য কোথাও ফারদিন নূর পরশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। পরশের নিখোঁজ এবং এই হত্যাকাণ্ডে আমাতুল্লাহ বুশরার ইন্ধন রয়েছে। এদিকে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা, পিবিআইসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে বান্ধবী বুশরাকে গ্রেপ্তার শেষে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বুশরা ছাড়াও পরশের আরও দুই বন্ধুকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রামপুরা, নিউ মার্কেট, সিটি কলেজ, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্ন স্থানের শতাধিক সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যে জব্দ করেছে পুলিশ। এসব সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ মামলা সংশ্লিষ্ট তদন্ত সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজে গত ৪ তারিখ ফারদিন বনশ্রীতে বান্ধবী বুশরার মেসের দিকে যেতে দেখা গেছে।

কিন্তু ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনো ফুটেজ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। মামলার অন্যতম আসামি বুশরাকে রিমান্ডে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলেন, কেন, কীভাবে, কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যাবে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শেখ ফরহাদ জানান, ফারদিনের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে। তার বুকের ভেতরেও আঘাতের চিহ্ন আছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিন নিখোঁজের পর থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। মামলার অন্যতম আসামি বান্ধবী বুশরা এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাদের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে।

ট্যাগ