মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

পদার্থবিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান

পরীক্ষায় ভালো করতে হলে নিয়ম মাফিক পড়ালেখার বিকল্প নেই। আর প্রয়োজন পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়ে শেষ করা। কেননা ভর্তি পরীক্ষার অধিকাংশ প্রশ্নই হয়ে থাকে মূল বই থেকে।

 

স্বপ্নীল আবদুল্লাহ

পরীক্ষায় ভালো করতে হলে নিয়ম মাফিক পড়ালেখার বিকল্প নেই। আর প্রয়োজন পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়ে শেষ করা। কেননা ভর্তি পরীক্ষার অধিকাংশ প্রশ্নই হয়ে থাকে মূল বই থেকে।

পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞান অংশে বরাদ্দ রয়েছে ২০ নম্বর। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান অংশে গণিতের চেয়ে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন বেশি আসে। পদার্থবিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রে আমির-ইসহাক স্যারের বই থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। অঙ্কের জন্য এই বইয়ের উদাহরণের ছোট ম্যাথগুলো করবে, যেগুলো ক্যালকুলেটর ছাড়াই সরাসরি সূত্রে মান বসিয়ে করে ফেলা যায়। এর পাশাপাশি শাহজাহান তপন স্যারের বইও পড়বে। মজার ব্যাপার হলো, পাঠ্যবইয়ের অঙ্কগুলোই হুবহু চলে আসে! তাই প্রতিটি অধ্যায় পড়া শেষে সেই অধ্যায়ের অনুশীলনীতে যা যা আছে সব সমাধান করে ফেলতে হবে।

মাত্রা, একক, ছোট ছোট সূত্র, সংজ্ঞা, নীতি, বিজ্ঞানীদের নাম গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলনের প্রশ্ন থেকে বহুপদী ও উদ্দীপকনির্ভর প্রশ্নগুলো বাদ দিয়ে সব সমাধান করবে। এ ছাড়া অধ্যায় শেষে ‘এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য নামের একটা অংশ আছে, সেটাও রপ্ত করতে হবে। উদাহরণের গাণিতিক সমস্যাগুলোর নিয়ম ভালো করে রপ্ত করবে। পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিগত ১০ বছরের মেডিকেল এবং ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধান করা যেতে পারে। এটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে এবং কমনও পাবে।

সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য বরাদ্দ আছে ১০ নম্বর। সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, খেলাধুলা, বাংলাদেশের নদ-নদী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রথম, বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিখ্যাত স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, পুরস্কার ও সম্মাননা, বিশ্ব ইতিহাস এবং বিভিন্ন ধরনের দিবসগুলো ভালোভাবে পড়লে ১০ নম্বরই কমন পাওয়া যায়। সাম্প্রতিকের জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারো।

আরও যা মনে রাখবে
এক সপ্তাহ আগে নতুন কিছু পড়বে না। ব্রেইনকে লোড না দেওয়ার চেয়ে যেগুলো পড়া হয়েছে, সেগুলো বারবার রিভিশন দিলে ভালো। আর যত বেশি পারবে মডেল টেস্ট দেবে। তাহলে পরীক্ষার হলের অভিজ্ঞতা, সমবণ্টন দক্ষতা হবে এবং পরীক্ষাভীতি দূর হবে।

পরীক্ষার সময় যে প্রশ্নগুলো পারবে তা আগে দাগিয়ে ফেলবে। আর যা পারবে না তা রেখে দেবে। দরকার হলে প্রশ্নের সাইডে ছোট্ট একটা দাগ দিয়ে রাখতে পারো। দেখা যায় যাদের ভালো প্রস্তুতি থাকে, তারা ৩০-৪০ মিনিটের ভেতরেই মোটামুটি ৭০টা প্রশ্ন দাগিয়ে ফেলে। এরপর বাকিগুলো চিন্তা করতে থাকে। গাণিতিক প্রশ্নগুলোও পরের জন্য রেখে দেবে। এমন কিছু প্রশ্ন আসবে, যা নিয়ে তোমার কোনো ধারণাই নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নটা দাগানোরই দরকার নেই। আবার তোমার যদি ৭৫-৮০টার মতো প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দাগানো হয়েই যায়, তখন ৫০-৫০ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে যেকোনো অপশন দাগিয়ে ফেলো। চারটা ঠিক উত্তর দিয়ে একটা ভুল দাগালেও সমস্যা নেই। তবে সব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই এই রিস্ক নেওয়া উচিত না।

কোচিংয়ের পেছনে সময় নয়
কোচিং বা টিউটরের পেছনে অতিরিক্ত সময় না দিয়ে এবং দৌড়াদৌড়ি না করে নিজের পড়ার জন্য আলাদা সময় রাখবে। কোচিংয়ে ভাইয়া-আপুরা এসে বই দাগিয়ে দিল, কিন্তু নিজে বুঝে পড়াটা হলো না, তাহলে চলবে না। দিন শেষে তোমার পড়া তোমাকেই পড়তে হবে। তাই এর জন্য যেন পর্যাপ্ত সময় থাকে। অনেকে দুইটা-তিনটা কোচিং করতে গিয়ে নিজে পড়ারই সময় পায় না। দিন শেষে তারাই পিছিয়ে পড়ে।

বেসিক ক্লিয়ার রাখবে
মুখস্থ না করে বেসিক ও কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখবে। কারণ অনেক সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে। রাত জেগে পড়ে সারা দিন ঘুমাবে না। রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা হলো ঘুমানোর আদর্শ সময়। মানসিক-শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যের দিকেই নজর দেবে। কারণ এই সময়টায় দুশ্চিন্তা ও অবসাদভাব খুবই স্বাভাবিক। মেডিকেলে চান্স না পাওয়া মানে সবকিছুর শেষ না। এটা জীবনের একটা ধাপ। হতাশ হলে চলবে না, আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।

লেখক: ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ)

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

পদার্থবিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান

পরীক্ষায় ভালো করতে হলে নিয়ম মাফিক পড়ালেখার বিকল্প নেই। আর প্রয়োজন পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়ে শেষ করা। কেননা ভর্তি পরীক্ষার অধিকাংশ প্রশ্নই হয়ে থাকে মূল বই থেকে।

 

স্বপ্নীল আবদুল্লাহ

পরীক্ষায় ভালো করতে হলে নিয়ম মাফিক পড়ালেখার বিকল্প নেই। আর প্রয়োজন পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়ে শেষ করা। কেননা ভর্তি পরীক্ষার অধিকাংশ প্রশ্নই হয়ে থাকে মূল বই থেকে।

পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞান অংশে বরাদ্দ রয়েছে ২০ নম্বর। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান অংশে গণিতের চেয়ে জ্ঞানমূলক প্রশ্ন বেশি আসে। পদার্থবিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রে আমির-ইসহাক স্যারের বই থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। অঙ্কের জন্য এই বইয়ের উদাহরণের ছোট ম্যাথগুলো করবে, যেগুলো ক্যালকুলেটর ছাড়াই সরাসরি সূত্রে মান বসিয়ে করে ফেলা যায়। এর পাশাপাশি শাহজাহান তপন স্যারের বইও পড়বে। মজার ব্যাপার হলো, পাঠ্যবইয়ের অঙ্কগুলোই হুবহু চলে আসে! তাই প্রতিটি অধ্যায় পড়া শেষে সেই অধ্যায়ের অনুশীলনীতে যা যা আছে সব সমাধান করে ফেলতে হবে।

মাত্রা, একক, ছোট ছোট সূত্র, সংজ্ঞা, নীতি, বিজ্ঞানীদের নাম গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলনের প্রশ্ন থেকে বহুপদী ও উদ্দীপকনির্ভর প্রশ্নগুলো বাদ দিয়ে সব সমাধান করবে। এ ছাড়া অধ্যায় শেষে ‘এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য নামের একটা অংশ আছে, সেটাও রপ্ত করতে হবে। উদাহরণের গাণিতিক সমস্যাগুলোর নিয়ম ভালো করে রপ্ত করবে। পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিগত ১০ বছরের মেডিকেল এবং ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধান করা যেতে পারে। এটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে এবং কমনও পাবে।

সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য বরাদ্দ আছে ১০ নম্বর। সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, খেলাধুলা, বাংলাদেশের নদ-নদী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রথম, বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিখ্যাত স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, পুরস্কার ও সম্মাননা, বিশ্ব ইতিহাস এবং বিভিন্ন ধরনের দিবসগুলো ভালোভাবে পড়লে ১০ নম্বরই কমন পাওয়া যায়। সাম্প্রতিকের জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারো।

আরও যা মনে রাখবে
এক সপ্তাহ আগে নতুন কিছু পড়বে না। ব্রেইনকে লোড না দেওয়ার চেয়ে যেগুলো পড়া হয়েছে, সেগুলো বারবার রিভিশন দিলে ভালো। আর যত বেশি পারবে মডেল টেস্ট দেবে। তাহলে পরীক্ষার হলের অভিজ্ঞতা, সমবণ্টন দক্ষতা হবে এবং পরীক্ষাভীতি দূর হবে।

পরীক্ষার সময় যে প্রশ্নগুলো পারবে তা আগে দাগিয়ে ফেলবে। আর যা পারবে না তা রেখে দেবে। দরকার হলে প্রশ্নের সাইডে ছোট্ট একটা দাগ দিয়ে রাখতে পারো। দেখা যায় যাদের ভালো প্রস্তুতি থাকে, তারা ৩০-৪০ মিনিটের ভেতরেই মোটামুটি ৭০টা প্রশ্ন দাগিয়ে ফেলে। এরপর বাকিগুলো চিন্তা করতে থাকে। গাণিতিক প্রশ্নগুলোও পরের জন্য রেখে দেবে। এমন কিছু প্রশ্ন আসবে, যা নিয়ে তোমার কোনো ধারণাই নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নটা দাগানোরই দরকার নেই। আবার তোমার যদি ৭৫-৮০টার মতো প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দাগানো হয়েই যায়, তখন ৫০-৫০ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে যেকোনো অপশন দাগিয়ে ফেলো। চারটা ঠিক উত্তর দিয়ে একটা ভুল দাগালেও সমস্যা নেই। তবে সব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই এই রিস্ক নেওয়া উচিত না।

কোচিংয়ের পেছনে সময় নয়
কোচিং বা টিউটরের পেছনে অতিরিক্ত সময় না দিয়ে এবং দৌড়াদৌড়ি না করে নিজের পড়ার জন্য আলাদা সময় রাখবে। কোচিংয়ে ভাইয়া-আপুরা এসে বই দাগিয়ে দিল, কিন্তু নিজে বুঝে পড়াটা হলো না, তাহলে চলবে না। দিন শেষে তোমার পড়া তোমাকেই পড়তে হবে। তাই এর জন্য যেন পর্যাপ্ত সময় থাকে। অনেকে দুইটা-তিনটা কোচিং করতে গিয়ে নিজে পড়ারই সময় পায় না। দিন শেষে তারাই পিছিয়ে পড়ে।

বেসিক ক্লিয়ার রাখবে
মুখস্থ না করে বেসিক ও কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখবে। কারণ অনেক সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে। রাত জেগে পড়ে সারা দিন ঘুমাবে না। রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা হলো ঘুমানোর আদর্শ সময়। মানসিক-শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যের দিকেই নজর দেবে। কারণ এই সময়টায় দুশ্চিন্তা ও অবসাদভাব খুবই স্বাভাবিক। মেডিকেলে চান্স না পাওয়া মানে সবকিছুর শেষ না। এটা জীবনের একটা ধাপ। হতাশ হলে চলবে না, আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।

লেখক: ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ)

অনুলিখন: মুসাররাত আবির