বাংলাদেশে আইটির সম্ভাবনা কেমন?

মতিন সরকার নিশাত

মতিন সরকার নিশাত।

মতিন সরকার নিশাত ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (অ্যাকাউন্টিং) উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তার ৪০তম বিসিএসের ভাইভা হয়েছিল ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি। ভাইভা বোর্ডের সিরিয়াল ছিল ৩ নম্বরে (১-১৫) এবং আনুমানিক প্রায় ১৫-২০ মিনিট ভাইভা হয়েছিল। তার ক্যাডার পছন্দক্রম যথাক্রমে—পুলিশ, প্রশাসন, অডিট, ট্যাক্স এবং সাধারণ শিক্ষা। ৪০তম বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতার আলোকে একটি নমুনা ভাইভা তুলে ধরা হলো:

আমি: স্যার, আসসালামু আলাইকুম। আসতে পারি?

চেয়ারম্যান: ওয়ালাইকুম-আসসালাম। আসুন, বসুন।

চেয়ারম্যান: বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি দেখিয়ে বললেন, এ ছবিটি কোথায় তোলা? এ জায়গার নাম কী?

আমি: স্যার, যদি ভুল না হয়ে থাকে, এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়কার ছবি। এ ছবিটি ইংল্যান্ডের এয়ারপোর্টে যখন তিনি ল্যান্ড করেন, সে সময়কার ছবি। সম্ভবত বিমানবন্দরের নাম হিথ্রো বিমানবন্দর।

চেয়ারম্যান: (অন্য একটি ছবি দেখিয়ে) ছবিতে বঙ্গবন্ধু যে ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, তিনি কে?

আমি: স্যার, উনি তৎকালীন সময়ের ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। ওনার নাম এডওয়ার্ড…স্যরি স্যার, পুরো নামটা মনে আসছে না।

চেয়ারম্যান: এডওয়ার্ড হিথ।

চেয়ারম্যান: ধর্মপাশা কোথায়?

আমি: সুনামগঞ্জে।

চেয়ারম্যান: দেবিগঞ্জ কোথায়?

আমি: পঞ্চগড় জেলায়।

চেয়ারম্যান: আপনার সামনে একটি কবিতা লেখা আছে, পড়ুন।

আমি: ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

চেয়ারম্যান: এর আগের লাইন কী?

আমি: নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান।

চেয়ারম্যান: তার আগের লাইন?

আমি: এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না স্যার। (আগের লাইন আমার জানা ছিল না। তাই ভাবলাম সরাসরি বলে দিই) চেয়ারম্যান স্যার এবার এক্সটারনাল স্যারদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন।

এক্সটারনাল-১: আপনি প্রথম পছন্দ পুলিশ দিয়েছেন কেন?

আমি: আসলে আমার বাবা ডিফেন্সের লোক ছিলেন (বাবা আর্মিতে ছিলেন)। তাই ছোটবেলা থেকেই এটি পছন্দের পেশা। ডিসিপ্লিনড লাইফ আমার পছন্দের। এ ছাড়া এ পেশার মাধ্যমে সরাসরি মানুষের সেবা দেওয়া সম্ভব। ভালোভাবে সেবা দিতে পারলে মানুষ দোয়া করে ও মনে রাখে।

এক্সটারনাল-১: আপনি পুলিশে যোগ দিলে কোন দিকে ফোকাস করবেন?

আমি: (উত্তরটি মনে মনে সাজানো ছিল, তাই কনফিডেন্টলি বলতে থাকি) স্যার আমি সর্বাগ্রে ফোকাস করব পুলিশের ইনফরমেশন টেকনোলজির দিকে। উন্নত দেশগুলোর আইটি ম্যানেজমেন্ট, এমআইএস ফলো করে বাংলাদেশের পুলিশ জনগণকে যাতে আরও নিখুঁত সার্ভিস দিতে পারে, সে চেষ্টা করব। এ ছাড়া প্রকৃত অপরাধী শনাক্তকরণ করার ক্ষেত্রেও আইটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।

এক্সটারনাল-২: বাংলাদেশে আইটির সম্ভাবনা কেমন?

আমি: বাংলাদেশে আইটির সম্ভাবনা সীমাহীন। এ দেশে বিরাট একটি তরুণ প্রজন্ম রয়েছে, যারা আইটিতে অবদান রাখতে পারেA। এ ক্ষেত্রে আমি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলতে পারি। বাংলাদেশ অলরেডি ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মকে আরও সাপোর্ট দিলে এরা দেশে থেকেই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

এক্সটারনাল-১: আপনার দেশের বাড়ি তো চাঁদপুর, সেখানকার পুলিশের বিখ্যাত লোক কে আছেন?

আমি: স্যার, ড. জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি আমাদের চাঁদপুরের। সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন। এখন সম্ভবত রাষ্ট্রদূত হিসেবে সৌদি আরবে কর্মরত।

এক্সটারনাল-২: What is Gender Budget?

আমি: Sorry Sir! I can’t remember. (আসলে এই বাজেট সম্পর্কে প্রথম শুনেছিলাম। পরে জেনেছি Gender Budgeting হচ্ছে, কোনো বাজেটের Income এবং Expenditure এমনভাবে সেট করা, যাতে জেন্ডার ইকোয়ালিটি নিশ্চিত করা যায়)।

এক্সটারনাল-১: আপনি এখন কী করছেন?

আমি: স্যার, একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত আছি।

এক্সটারনাল-২: ঠিক আছে, আপনি এখন আসতে পারেন।

আমি: চেয়ারম্যান স্যার ও এক্সটারনাল স্যারদের সালাম দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি। (পিএসসিতে বিসিএস ভাইভা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আগেই ছিল। এসব দিক দিয়ে খুব কনফিডেন্ট ছিলাম। যা হোক, ভাইভা কক্ষে প্রবেশের আগে সামান্য একটু নার্ভাসনেস থাকলেও স্যারদের আন্তরিক ব্যবহার পেয়ে নার্ভাসনেস পুরোপুরি কেটে যায়। এমনভাবে কথা বলি যেন স্যাররা আমার বহু আগের পরিচিত)।

নতুনদের ভাইভা প্রস্তুতি 
ভাইভার প্রস্তুতি নিতে হবে টপিকওয়াইজ। নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে তিনি কীভাবে সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব কেমন, এসব মৌখিক পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়। ভাইভা পরীক্ষার যদিও নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তবে মোটামুটি ৪টি বিষয় থেকে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়। নিজ সম্পর্কে, নিজ জেলা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অনার্সে পঠিত বিষয় সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান, ক্যাডার পছন্দ এবং সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক সময়ের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। বোর্ডে কখনো মিথ্যা কথা বলা যাবে না। নতুনরা প্রস্তুতির জন্য মক ভাইভা দিতে পারেন। এতে নার্ভাসনেস অনেকাংশে কমে যায়।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

মতিন সরকার নিশাত, শিক্ষা ক্যাডার (অ্যাকাউন্টিং) ৪০তম বিসিএস।

বাংলাদেশে আইটির সম্ভাবনা কেমন?

মতিন সরকার নিশাত

মতিন সরকার নিশাত।

মতিন সরকার নিশাত ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (অ্যাকাউন্টিং) উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তার ৪০তম বিসিএসের ভাইভা হয়েছিল ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি। ভাইভা বোর্ডের সিরিয়াল ছিল ৩ নম্বরে (১-১৫) এবং আনুমানিক প্রায় ১৫-২০ মিনিট ভাইভা হয়েছিল। তার ক্যাডার পছন্দক্রম যথাক্রমে—পুলিশ, প্রশাসন, অডিট, ট্যাক্স এবং সাধারণ শিক্ষা। ৪০তম বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতার আলোকে একটি নমুনা ভাইভা তুলে ধরা হলো:

আমি: স্যার, আসসালামু আলাইকুম। আসতে পারি?

চেয়ারম্যান: ওয়ালাইকুম-আসসালাম। আসুন, বসুন।

চেয়ারম্যান: বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি দেখিয়ে বললেন, এ ছবিটি কোথায় তোলা? এ জায়গার নাম কী?

আমি: স্যার, যদি ভুল না হয়ে থাকে, এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়কার ছবি। এ ছবিটি ইংল্যান্ডের এয়ারপোর্টে যখন তিনি ল্যান্ড করেন, সে সময়কার ছবি। সম্ভবত বিমানবন্দরের নাম হিথ্রো বিমানবন্দর।

চেয়ারম্যান: (অন্য একটি ছবি দেখিয়ে) ছবিতে বঙ্গবন্ধু যে ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, তিনি কে?

আমি: স্যার, উনি তৎকালীন সময়ের ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। ওনার নাম এডওয়ার্ড…স্যরি স্যার, পুরো নামটা মনে আসছে না।

চেয়ারম্যান: এডওয়ার্ড হিথ।

চেয়ারম্যান: ধর্মপাশা কোথায়?

আমি: সুনামগঞ্জে।

চেয়ারম্যান: দেবিগঞ্জ কোথায়?

আমি: পঞ্চগড় জেলায়।

চেয়ারম্যান: আপনার সামনে একটি কবিতা লেখা আছে, পড়ুন।

আমি: ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

চেয়ারম্যান: এর আগের লাইন কী?

আমি: নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান।

চেয়ারম্যান: তার আগের লাইন?

আমি: এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না স্যার। (আগের লাইন আমার জানা ছিল না। তাই ভাবলাম সরাসরি বলে দিই) চেয়ারম্যান স্যার এবার এক্সটারনাল স্যারদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন।

এক্সটারনাল-১: আপনি প্রথম পছন্দ পুলিশ দিয়েছেন কেন?

আমি: আসলে আমার বাবা ডিফেন্সের লোক ছিলেন (বাবা আর্মিতে ছিলেন)। তাই ছোটবেলা থেকেই এটি পছন্দের পেশা। ডিসিপ্লিনড লাইফ আমার পছন্দের। এ ছাড়া এ পেশার মাধ্যমে সরাসরি মানুষের সেবা দেওয়া সম্ভব। ভালোভাবে সেবা দিতে পারলে মানুষ দোয়া করে ও মনে রাখে।

এক্সটারনাল-১: আপনি পুলিশে যোগ দিলে কোন দিকে ফোকাস করবেন?

আমি: (উত্তরটি মনে মনে সাজানো ছিল, তাই কনফিডেন্টলি বলতে থাকি) স্যার আমি সর্বাগ্রে ফোকাস করব পুলিশের ইনফরমেশন টেকনোলজির দিকে। উন্নত দেশগুলোর আইটি ম্যানেজমেন্ট, এমআইএস ফলো করে বাংলাদেশের পুলিশ জনগণকে যাতে আরও নিখুঁত সার্ভিস দিতে পারে, সে চেষ্টা করব। এ ছাড়া প্রকৃত অপরাধী শনাক্তকরণ করার ক্ষেত্রেও আইটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।

এক্সটারনাল-২: বাংলাদেশে আইটির সম্ভাবনা কেমন?

আমি: বাংলাদেশে আইটির সম্ভাবনা সীমাহীন। এ দেশে বিরাট একটি তরুণ প্রজন্ম রয়েছে, যারা আইটিতে অবদান রাখতে পারেA। এ ক্ষেত্রে আমি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলতে পারি। বাংলাদেশ অলরেডি ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মকে আরও সাপোর্ট দিলে এরা দেশে থেকেই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

এক্সটারনাল-১: আপনার দেশের বাড়ি তো চাঁদপুর, সেখানকার পুলিশের বিখ্যাত লোক কে আছেন?

আমি: স্যার, ড. জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি আমাদের চাঁদপুরের। সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন। এখন সম্ভবত রাষ্ট্রদূত হিসেবে সৌদি আরবে কর্মরত।

এক্সটারনাল-২: What is Gender Budget?

আমি: Sorry Sir! I can’t remember. (আসলে এই বাজেট সম্পর্কে প্রথম শুনেছিলাম। পরে জেনেছি Gender Budgeting হচ্ছে, কোনো বাজেটের Income এবং Expenditure এমনভাবে সেট করা, যাতে জেন্ডার ইকোয়ালিটি নিশ্চিত করা যায়)।

এক্সটারনাল-১: আপনি এখন কী করছেন?

আমি: স্যার, একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত আছি।

এক্সটারনাল-২: ঠিক আছে, আপনি এখন আসতে পারেন।

আমি: চেয়ারম্যান স্যার ও এক্সটারনাল স্যারদের সালাম দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি। (পিএসসিতে বিসিএস ভাইভা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আগেই ছিল। এসব দিক দিয়ে খুব কনফিডেন্ট ছিলাম। যা হোক, ভাইভা কক্ষে প্রবেশের আগে সামান্য একটু নার্ভাসনেস থাকলেও স্যারদের আন্তরিক ব্যবহার পেয়ে নার্ভাসনেস পুরোপুরি কেটে যায়। এমনভাবে কথা বলি যেন স্যাররা আমার বহু আগের পরিচিত)।

নতুনদের ভাইভা প্রস্তুতি 
ভাইভার প্রস্তুতি নিতে হবে টপিকওয়াইজ। নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে তিনি কীভাবে সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব কেমন, এসব মৌখিক পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়। ভাইভা পরীক্ষার যদিও নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তবে মোটামুটি ৪টি বিষয় থেকে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়। নিজ সম্পর্কে, নিজ জেলা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অনার্সে পঠিত বিষয় সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান, ক্যাডার পছন্দ এবং সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক সময়ের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। বোর্ডে কখনো মিথ্যা কথা বলা যাবে না। নতুনরা প্রস্তুতির জন্য মক ভাইভা দিতে পারেন। এতে নার্ভাসনেস অনেকাংশে কমে যায়।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

মতিন সরকার নিশাত, শিক্ষা ক্যাডার (অ্যাকাউন্টিং) ৪০তম বিসিএস।