৪৫তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশ

মো. মোস্তফা জামান

মো. মোস্তফা জামান

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আসন্ন। পরীক্ষার্থীদের মাঝে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। পরীক্ষা যত ঘনিয়ে আসে পড়ার চাপ ততই বাড়তে থাকে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার পরীক্ষা দেবেন তাদের মানসিক চাপটা একটু বেশিই। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশ থেকে ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। আজকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কীভাবে ভালো করা যায়— অভিজ্ঞতার আলোকে সেই পরামর্শ তুলে ধরছি।

প্রথমে আমাদের সিলেবাসটা ভালো করে বুঝতে হবে। যেকোনো পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে আগে সেটার সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে বুঝতে হবে সিলেবাসের কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে এবং কোন অংশ থেকে কম প্রশ্ন হয়। যে অংশ থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় বা বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে সেই অংশগুলো এই শেষ সময়ে এসে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

নির্ধারিত কবি ও সাহিত্যিক
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশে ৩৫ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা থেকে ১৫ এবং সাহিত্য অংশ থেকে ২০ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। সাহিত্য অংশের ২০ নম্বরের মধ্য থেকে প্রাচীন এবং মধ্যযুগ থেকে ৫টি প্রশ্ন হয় এবং আধুনিক যুগ থেকে প্রশ্ন থাকে ১৫টি। এই আধুনিক যুগের মধ্যে আবার কিছু ভাগ আছে। আমরা জানি বাংলা সাহিত্য অংশের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ১১ জন কবি ও সাহিত্যিকের তালিকা আছে। এই ১১ জন থেকে প্রতিবারই অন্তত ৮-১০টি প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাকি প্রশ্ন সমগ্র সাহিত্য অংশ থেকে হয়। তাই এই ১১ জন কবি সাহিত্যিক সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিচে ১১ জন কবি ও সাহিত্যিকের নাম দেওয়া হলো-

১. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ২. মাইকেল মধুসূদন দত্ত ৩. দীনবন্ধু মিত্র ৪. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৫. মীর মশাররফ হোসেন ৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭. কায়কোবাদ ৮. বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ৯. কাজী নজরুল ইসলাম ১০. জসীমউদদীন ও ১১. ফররুখ আহমদ।

বাছাইকৃত কবি ও সাহিত্যিক
বাছাইকৃত আর ৩০-৪০ জন কবি ও সাহিত্যিক সম্পর্কে ধারণা রাখলে ভালো করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শওকত ওসমান, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, সেলিনা হোসেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, প্রমথ চৌধুরী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, হুমায়ূন আহমেদ, আহসান হাবিব, সুকান্ত ভট্টাচার্য, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, আহমদ ছফা। এ ক্ষেত্রে ড. সৌমিত্র শেখর রচিত ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ বইটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হতে পারে। আমরা সাহিত্য অংশ প্রিলিমিনারির জন্য যা পড়ব পরবর্তীকালে লিখিত পরীক্ষায় সেগুলো কাজে লাগানো সম্ভব। তাই একটু বিস্তারিত পড়লে উপকৃত হবেন। এ ছাড়া কবি ও সাহিত্যিকের বাইরেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাংলা পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান (যেগুলো বাংলা সাহিত্যের প্রসারে কাজ করেছে। যেমন- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ইত্যাদি) থেকে দুই-একটি প্রশ্ন হয়ে থাকে।

বাংলা ভাষা বা ব্যাকরণ অংশ
বাংলা ভাষা বা ব্যাকরণ অংশ থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন হলেও এটা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করে। কারণ, ব্যাকরণ না বুঝে পড়লে পরীক্ষার হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সাহিত্য অংশ মুখস্থ করলেও তাই ব্যাকরণ অংশে বুঝে এবং একটু কৌশল অবলম্বন করে পড়া উচিত। বাংলা ভাষা অংশের সিলেবাস লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, এখানে অনেকগুলো অধ্যায় আছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ধ্বনি ও বর্ণ, ধ্বনির পরিবর্তন, বানান শুদ্ধিকরণ, বাক্য শুদ্ধিকরণ, শব্দ, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, সমাস, সন্ধি, প্রকৃতি-প্রত্যয়, পরিভাষা, উপসর্গ, পদ, লিঙ্গ, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ।

এর মধ্য থেকে প্রতি বছরই সমাস, সন্ধি, প্রকৃতি-প্রত্যয়, পরিভাষা, বানান ও বাক্য শুদ্ধিকরণ, পরিভাষা, ধ্বনির পরিবর্তন প্রভৃতি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। ভাষা বা ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতির জন্য ড. হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা-শিক্ষা’ বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই বইয়ের পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইটিও দেখতে পারেন। নতুন বইয়ে ব্যাকরণের কিছু কিছু অধ্যায়ে সংস্কার বা পরিমার্জন করা হয়েছে। এগুলো খেয়াল রাখবেন। এই ধরনের অধ্যায় থেকে প্রশ্ন হলে সর্বশেষ সংস্করণ অনুযায়ী উত্তর করবেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনেকে বারবার পরীক্ষা দেওয়ার পরও ব্যর্থ হন। বাংলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খারাপ করার কারণে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান না। এর অন্যতম কারণ হলো পড়াশোনায় ধারাবাহিকতার অভাব। অন্য একদল পরীক্ষার্থী ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও প্রচুর ভুল উত্তর করেন এবং নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে বাদ পড়ে যান।

মো. মোস্তফা জামান, ৪০তম সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার।

অনুলিখন: মোছা. জেলি খাতুন

৪৫তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশ

মো. মোস্তফা জামান

মো. মোস্তফা জামান

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আসন্ন। পরীক্ষার্থীদের মাঝে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। পরীক্ষা যত ঘনিয়ে আসে পড়ার চাপ ততই বাড়তে থাকে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার পরীক্ষা দেবেন তাদের মানসিক চাপটা একটু বেশিই। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশ থেকে ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। আজকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কীভাবে ভালো করা যায়— অভিজ্ঞতার আলোকে সেই পরামর্শ তুলে ধরছি।

প্রথমে আমাদের সিলেবাসটা ভালো করে বুঝতে হবে। যেকোনো পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে আগে সেটার সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে বুঝতে হবে সিলেবাসের কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে এবং কোন অংশ থেকে কম প্রশ্ন হয়। যে অংশ থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় বা বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে সেই অংশগুলো এই শেষ সময়ে এসে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

নির্ধারিত কবি ও সাহিত্যিক
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অংশে ৩৫ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা থেকে ১৫ এবং সাহিত্য অংশ থেকে ২০ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। সাহিত্য অংশের ২০ নম্বরের মধ্য থেকে প্রাচীন এবং মধ্যযুগ থেকে ৫টি প্রশ্ন হয় এবং আধুনিক যুগ থেকে প্রশ্ন থাকে ১৫টি। এই আধুনিক যুগের মধ্যে আবার কিছু ভাগ আছে। আমরা জানি বাংলা সাহিত্য অংশের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ১১ জন কবি ও সাহিত্যিকের তালিকা আছে। এই ১১ জন থেকে প্রতিবারই অন্তত ৮-১০টি প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাকি প্রশ্ন সমগ্র সাহিত্য অংশ থেকে হয়। তাই এই ১১ জন কবি সাহিত্যিক সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিচে ১১ জন কবি ও সাহিত্যিকের নাম দেওয়া হলো-

১. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ২. মাইকেল মধুসূদন দত্ত ৩. দীনবন্ধু মিত্র ৪. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৫. মীর মশাররফ হোসেন ৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭. কায়কোবাদ ৮. বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ৯. কাজী নজরুল ইসলাম ১০. জসীমউদদীন ও ১১. ফররুখ আহমদ।

বাছাইকৃত কবি ও সাহিত্যিক
বাছাইকৃত আর ৩০-৪০ জন কবি ও সাহিত্যিক সম্পর্কে ধারণা রাখলে ভালো করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শওকত ওসমান, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, সেলিনা হোসেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, প্রমথ চৌধুরী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, হুমায়ূন আহমেদ, আহসান হাবিব, সুকান্ত ভট্টাচার্য, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, আহমদ ছফা। এ ক্ষেত্রে ড. সৌমিত্র শেখর রচিত ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ বইটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হতে পারে। আমরা সাহিত্য অংশ প্রিলিমিনারির জন্য যা পড়ব পরবর্তীকালে লিখিত পরীক্ষায় সেগুলো কাজে লাগানো সম্ভব। তাই একটু বিস্তারিত পড়লে উপকৃত হবেন। এ ছাড়া কবি ও সাহিত্যিকের বাইরেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাংলা পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান (যেগুলো বাংলা সাহিত্যের প্রসারে কাজ করেছে। যেমন- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ইত্যাদি) থেকে দুই-একটি প্রশ্ন হয়ে থাকে।

বাংলা ভাষা বা ব্যাকরণ অংশ
বাংলা ভাষা বা ব্যাকরণ অংশ থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন হলেও এটা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করে। কারণ, ব্যাকরণ না বুঝে পড়লে পরীক্ষার হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সাহিত্য অংশ মুখস্থ করলেও তাই ব্যাকরণ অংশে বুঝে এবং একটু কৌশল অবলম্বন করে পড়া উচিত। বাংলা ভাষা অংশের সিলেবাস লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, এখানে অনেকগুলো অধ্যায় আছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ধ্বনি ও বর্ণ, ধ্বনির পরিবর্তন, বানান শুদ্ধিকরণ, বাক্য শুদ্ধিকরণ, শব্দ, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, সমাস, সন্ধি, প্রকৃতি-প্রত্যয়, পরিভাষা, উপসর্গ, পদ, লিঙ্গ, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ।

এর মধ্য থেকে প্রতি বছরই সমাস, সন্ধি, প্রকৃতি-প্রত্যয়, পরিভাষা, বানান ও বাক্য শুদ্ধিকরণ, পরিভাষা, ধ্বনির পরিবর্তন প্রভৃতি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। ভাষা বা ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতির জন্য ড. হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা-শিক্ষা’ বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই বইয়ের পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইটিও দেখতে পারেন। নতুন বইয়ে ব্যাকরণের কিছু কিছু অধ্যায়ে সংস্কার বা পরিমার্জন করা হয়েছে। এগুলো খেয়াল রাখবেন। এই ধরনের অধ্যায় থেকে প্রশ্ন হলে সর্বশেষ সংস্করণ অনুযায়ী উত্তর করবেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনেকে বারবার পরীক্ষা দেওয়ার পরও ব্যর্থ হন। বাংলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খারাপ করার কারণে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান না। এর অন্যতম কারণ হলো পড়াশোনায় ধারাবাহিকতার অভাব। অন্য একদল পরীক্ষার্থী ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও প্রচুর ভুল উত্তর করেন এবং নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে বাদ পড়ে যান।

মো. মোস্তফা জামান, ৪০তম সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার।

অনুলিখন: মোছা. জেলি খাতুন