বাবার সম্পত্তি বেচে ৭৭৪ চাকরির আবেদন আনভীরার, আর সামর্থ্য নেই!

শরীফ শাওন

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আনভীরা খাতুন। ২০১১ সালে এনটিআরসিএর নবম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পেয়েছেন। প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৪টি, দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রায় ৫০টি আবেদন করেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি তিনি। পরে ২০২১ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে চাকরি পাওয়ার আশায় রাঙামাটিসহ দেশজুড়ে সব পদের জন্য ৭৭৪টি আবেদন করেন তিনি।

ব্যয় হয় এক লাখ টাকারও বেশি। এবার একটি এমপিওভুক্ত স্কুলের জন্য নিবন্ধন পেলেও নিয়োগ সুপারিশ পাননি। তাই আনভীরার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

kalerkantho

শুধু আনভীরাই নন, তাঁর মতো অনেক চাকরিপ্রত্যাশীর এভাবে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বর্তমানে সনদ অনুযায়ী ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে অনেকের সঙ্গে রাজধানীর শাহবাগে অনশনরতদের সঙ্গে একাত্ম হন তিনি। গত ৫ জুন থেকে তাঁদের এই অনশন একটানা চলছে।

মূল ঘটনা ও বর্তমান পরিস্থিতি : 

মূলত একাধিক পরীক্ষার বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া ও আলাদা পদের জন্য পৃথক আবেদনে বাড়তি খরচ করার পরও যোগ্যতাভিত্তিক সনদধারীদের চাকরির নিশ্চয়তা মিলছে না। বদলির ব্যবস্থা না থাকায় নতুন আবেদনকারীদের সঙ্গে কর্মরত শিক্ষকরাও পছন্দের স্কুল-কলেজে আবেদন করছেন। ফলে বিশাল নিয়োগের তথ্য জানানো হলেও মূলত কর্মক্ষেত্রে নতুনদের প্রবেশের সংখ্যা সীমিতই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও থাকছে শিক্ষকদের শূন্য পদ। আবার সনদ ও বয়সের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় যোগ্য হয়েও চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।

নিরুপায় হয়ে তাই প্রথম থেকে ১৬তম নিবন্ধনের সনদধারীরা গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা ১৭২ দিন অনশন করেও তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

সনদধারীদের অভিযোগ : 

অনশনরত অন্তত ১০ জন সনদধারী অভিযোগ করেন, কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাব এবং নিয়োগ দুর্নীতির কারণে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে এনটিআরসিএর একজন চালকের কোটিপতি হয়ে যাওয়ার সংবাদ আমরা দেখতে পেয়েছি। এর সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত। তাঁদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সনদধারীদের মতে, নিয়োগের এই প্রক্রিয়া মূলত এনটিআরসিএর অর্থ উপার্জনের মাধ্যম।

তারাগঞ্জের আনভীরা বলেন, ‘তিন মাস বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। অর্থকষ্টে পড়াশোনা করেছি। বাবার সম্পত্তির ভাগের টাকা দিয়ে চাকরির আবেদনের খরচ মিটিয়েছি। ধারদেনা হয়েছে। এখন নতুন করে চাকরির আবেদন করার সামর্থ্যও নেই। ’

নিয়োগপ্রত্যাশী সনদধারী শরিফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবেদন জমা না পড়ায় ১৫ হাজার পদ খালি থাকার কথা জানিয়েছে এনটিআরসিএ। অথচ চাকরি নিশ্চিত করতে আমি খাগড়াছড়ি, নদী, সাগর ও হাওরাঞ্চলে মোট ৯১টি আবেদন করেছি। তারা প্রার্থী খুঁজে না পেলেও আমি আবেদন করে চাকরি পাইনি। ’

সনদধারী রকিবুল হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বদলির ব্যবস্থা না থাকায় চাকরিরত শিক্ষকরাই বারবার নিয়োগ সুপারিশ পাচ্ছেন। এতে নতুন নিয়োগপ্রত্যাশী সনদধারীদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ কমে যাচ্ছে। ’

প্যানেলপ্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জি এম ইয়াছিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের তুলনায় সারা দেশে নিবন্ধিত শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম। ’

ইয়াছিন বলছেন, ‘এনটিআরসিএর তথ্য মতে দেশে ৭০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি। তবে আমাদের হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। অথচ প্রথম থেকে ১৬তম নিবন্ধিত প্যানেলপ্রত্যাশী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২১ হাজার ৭৯৬ জন। মূলত এনটিআরসিএর সদিচ্ছার অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় একদিকে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। ’

বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : 

এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে নিয়োগবিধির তিনটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন অনশনরত সনদধারীরা। বিধিগুলোর মধ্যে ৩(ক) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর নভেম্বরের মধ্যে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। ধারা ৯(ঘ) মতে, মেধাভিত্তিক মূল তালিকা ছাড়াও শূন্যপদের ২০ শতাংশ পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পূরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ধারা ১০-এ সংশোধনী এনে সনদের মেয়াদ আজীবন করার কথা বলা হয়েছে, যার কোনোটিই মানছে না এনটিআরসিএ।

এনটিআরসিএর ভাষ্য : 

এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান কালের কণ্ঠকে বলেন, যথাযথ বিধি মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাঁরা (অনশনরত সনদধারীরা) বিভিন্ন ধারার ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে শূন্যপদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও বিধি মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিধি অনুযায়ী, প্যানেলভিত্তিক বা ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। ২০১৫ সালে বিধির সংশোধনীতে সনদের মেয়াদ তিন বছর করা হয়েছে। এ ছাড়া পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের কোনো সুযোগ নেই।

নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের জন্য এক আবেদনের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। এক আবেদনের মাধ্যমে ৪০টি পছন্দ দিতে পারবেন প্রার্থীরা। এর বাইরেও কোথাও সংশ্লিষ্ট পদ ফাঁকা থাকলে মেধাতালিকা অনুযায়ী সেখানে নিয়োগের ব্যবস্থা থাকছে। তবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০০৫ অনুযায়ী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো নিয়োগব্যবস্থার কোনো সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তিনি জানান, কোনো কোনো বিষয়ে হাজারটি পদ খালি থাকে, আবার কোনো বিষয়ে পাঁচটি পদ খালি থাকে। এতে এক আবেদনে নিয়োগপ্রক্রিয়া হলে জটিলতা দেখা দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রতিটি পদের জন্য আবেদন না করে বরং বিভিন্ন ধাপে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করা প্রয়োজন। এতে অনেক আবেদন করার যে প্রতিযোগিতা, তা বন্ধ হবে। সাধারণভাবে ফলাফল দেওয়ায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে চাকরি পাওয়ার একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়। অনেক পদ শূন্য থাকায় তাঁরা নিয়োগ পাওয়ার আশায় থাকেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করাকে দক্ষতার অভাব বলেও জানান তিনি।

বাবার সম্পত্তি বেচে ৭৭৪ চাকরির আবেদন আনভীরার, আর সামর্থ্য নেই!

শরীফ শাওন

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আনভীরা খাতুন। ২০১১ সালে এনটিআরসিএর নবম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পেয়েছেন। প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৪টি, দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রায় ৫০টি আবেদন করেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি তিনি। পরে ২০২১ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে চাকরি পাওয়ার আশায় রাঙামাটিসহ দেশজুড়ে সব পদের জন্য ৭৭৪টি আবেদন করেন তিনি।

ব্যয় হয় এক লাখ টাকারও বেশি। এবার একটি এমপিওভুক্ত স্কুলের জন্য নিবন্ধন পেলেও নিয়োগ সুপারিশ পাননি। তাই আনভীরার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

kalerkantho

শুধু আনভীরাই নন, তাঁর মতো অনেক চাকরিপ্রত্যাশীর এভাবে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বর্তমানে সনদ অনুযায়ী ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে অনেকের সঙ্গে রাজধানীর শাহবাগে অনশনরতদের সঙ্গে একাত্ম হন তিনি। গত ৫ জুন থেকে তাঁদের এই অনশন একটানা চলছে।

মূল ঘটনা ও বর্তমান পরিস্থিতি : 

মূলত একাধিক পরীক্ষার বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া ও আলাদা পদের জন্য পৃথক আবেদনে বাড়তি খরচ করার পরও যোগ্যতাভিত্তিক সনদধারীদের চাকরির নিশ্চয়তা মিলছে না। বদলির ব্যবস্থা না থাকায় নতুন আবেদনকারীদের সঙ্গে কর্মরত শিক্ষকরাও পছন্দের স্কুল-কলেজে আবেদন করছেন। ফলে বিশাল নিয়োগের তথ্য জানানো হলেও মূলত কর্মক্ষেত্রে নতুনদের প্রবেশের সংখ্যা সীমিতই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও থাকছে শিক্ষকদের শূন্য পদ। আবার সনদ ও বয়সের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় যোগ্য হয়েও চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।

নিরুপায় হয়ে তাই প্রথম থেকে ১৬তম নিবন্ধনের সনদধারীরা গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা ১৭২ দিন অনশন করেও তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

সনদধারীদের অভিযোগ : 

অনশনরত অন্তত ১০ জন সনদধারী অভিযোগ করেন, কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাব এবং নিয়োগ দুর্নীতির কারণে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে এনটিআরসিএর একজন চালকের কোটিপতি হয়ে যাওয়ার সংবাদ আমরা দেখতে পেয়েছি। এর সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত। তাঁদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সনদধারীদের মতে, নিয়োগের এই প্রক্রিয়া মূলত এনটিআরসিএর অর্থ উপার্জনের মাধ্যম।

তারাগঞ্জের আনভীরা বলেন, ‘তিন মাস বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। অর্থকষ্টে পড়াশোনা করেছি। বাবার সম্পত্তির ভাগের টাকা দিয়ে চাকরির আবেদনের খরচ মিটিয়েছি। ধারদেনা হয়েছে। এখন নতুন করে চাকরির আবেদন করার সামর্থ্যও নেই। ’

নিয়োগপ্রত্যাশী সনদধারী শরিফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবেদন জমা না পড়ায় ১৫ হাজার পদ খালি থাকার কথা জানিয়েছে এনটিআরসিএ। অথচ চাকরি নিশ্চিত করতে আমি খাগড়াছড়ি, নদী, সাগর ও হাওরাঞ্চলে মোট ৯১টি আবেদন করেছি। তারা প্রার্থী খুঁজে না পেলেও আমি আবেদন করে চাকরি পাইনি। ’

সনদধারী রকিবুল হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বদলির ব্যবস্থা না থাকায় চাকরিরত শিক্ষকরাই বারবার নিয়োগ সুপারিশ পাচ্ছেন। এতে নতুন নিয়োগপ্রত্যাশী সনদধারীদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ কমে যাচ্ছে। ’

প্যানেলপ্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জি এম ইয়াছিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের তুলনায় সারা দেশে নিবন্ধিত শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম। ’

ইয়াছিন বলছেন, ‘এনটিআরসিএর তথ্য মতে দেশে ৭০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি। তবে আমাদের হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। অথচ প্রথম থেকে ১৬তম নিবন্ধিত প্যানেলপ্রত্যাশী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২১ হাজার ৭৯৬ জন। মূলত এনটিআরসিএর সদিচ্ছার অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় একদিকে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। ’

বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : 

এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে নিয়োগবিধির তিনটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন অনশনরত সনদধারীরা। বিধিগুলোর মধ্যে ৩(ক) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর নভেম্বরের মধ্যে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। ধারা ৯(ঘ) মতে, মেধাভিত্তিক মূল তালিকা ছাড়াও শূন্যপদের ২০ শতাংশ পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পূরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ধারা ১০-এ সংশোধনী এনে সনদের মেয়াদ আজীবন করার কথা বলা হয়েছে, যার কোনোটিই মানছে না এনটিআরসিএ।

এনটিআরসিএর ভাষ্য : 

এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান কালের কণ্ঠকে বলেন, যথাযথ বিধি মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাঁরা (অনশনরত সনদধারীরা) বিভিন্ন ধারার ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে শূন্যপদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও বিধি মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিধি অনুযায়ী, প্যানেলভিত্তিক বা ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। ২০১৫ সালে বিধির সংশোধনীতে সনদের মেয়াদ তিন বছর করা হয়েছে। এ ছাড়া পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের কোনো সুযোগ নেই।

নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের জন্য এক আবেদনের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। এক আবেদনের মাধ্যমে ৪০টি পছন্দ দিতে পারবেন প্রার্থীরা। এর বাইরেও কোথাও সংশ্লিষ্ট পদ ফাঁকা থাকলে মেধাতালিকা অনুযায়ী সেখানে নিয়োগের ব্যবস্থা থাকছে। তবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০০৫ অনুযায়ী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো নিয়োগব্যবস্থার কোনো সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তিনি জানান, কোনো কোনো বিষয়ে হাজারটি পদ খালি থাকে, আবার কোনো বিষয়ে পাঁচটি পদ খালি থাকে। এতে এক আবেদনে নিয়োগপ্রক্রিয়া হলে জটিলতা দেখা দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রতিটি পদের জন্য আবেদন না করে বরং বিভিন্ন ধাপে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করা প্রয়োজন। এতে অনেক আবেদন করার যে প্রতিযোগিতা, তা বন্ধ হবে। সাধারণভাবে ফলাফল দেওয়ায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে চাকরি পাওয়ার একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়। অনেক পদ শূন্য থাকায় তাঁরা নিয়োগ পাওয়ার আশায় থাকেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করাকে দক্ষতার অভাব বলেও জানান তিনি।