বিদেশে ক্যারিয়ার: মেটায় চাকরি পেতে ইন্টারভিউয়ে এগিয়ে থাকুন

১৩ বার টেক জায়ান্ট ইন্টারভিউয়ে ব্যর্থ হয়েছি। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সবশেষে মেটায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করি। এই অদম্য সফলতার গল্প নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মেটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাজমুস সাকিব।

ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট কোথাও চান্স পাইনি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে সেখানেই লেকচারার হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব পাই। কিন্তু পরে আমেরিকায় চলে আসি। একটি কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি ২০১৬ সালে একবার গুগলে ইন্টারভিউ দিই কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলাম। ২০১৮ সালে জর্জিয়া টেক থেকে মাস্টার্স করি। ২০১৯ সালে আবার গুগল, মাইক্রোসফট ও আমাজনে চেষ্টা করি এবং আবার ব্যর্থ হই। কিন্তু কখনোই চেষ্টা ছেড়ে দিইনি। আমার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের দিকে ঝোঁক থেকেই আবার চেষ্টা করে নেটফ্লিক্স, গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট এবং ফেসবুকে ইন্টারভিউ দিই। অবশেষে মেটা, আমাজন, মাইক্রোসফটে প্রস্তাব পাই। আমি বর্তমানে মেটার প্রাইভেসি টিমে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। আমার কাজের একটা বড় অংশ হলো কোনো প্রোডাক্ট যেন প্রাইভেসি ইস্যুসহ রিলিজ না হয়।

মেটায় সুযোগ-সুবিধা 
মেটা এক অসাধারণ প্রতিষ্ঠান। কর্মীদের অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে আকর্ষণীয় বেতন, অসুস্থতাজনিত দীর্ঘ ছুটি, পারিবারিক অসুস্থতাজনিত দীর্ঘ ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বার্ষিক বোনাস, ইয়ারলি ওয়েলনেসের জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট। এ ছাড়া অফিসে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার ফ্রি। সব রকমের স্ন্যাক্স, বেভারেজের ব্যবস্থা আছে। এমনকি ঘুমানোর জায়গাও আছে!

ইন্টারভিউয়ে এগিয়ে থাকুন
প্রশ্ন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করবেন না। ইন্টারভিউয়ারের প্রশ্নটি ঠিকঠাক বুঝেছেন কি না, এটি আগে নিশ্চিত হোন। পরে উত্তর দিন। কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা না থাকে, তাহলে যেই সমাধান মাথায় আসে, সেটা নিয়েই সামনে এগিয়ে যান।

ইন্টারভিউয়ারের কাছে কোম্পানিতে নতুন কী আবিষ্কার হয়েছে, গোল এবং ভিশন কী, কালচার কেমন—এগুলো জানতে চাইলে কোম্পানিতে কাজ করার জন্য আপনি কতটা আগ্রহী তা বোঝাতে সহজ হয়। শেষে ইন্টারভিউয়ারকে জানান তাঁর সঙ্গে কথা বলে আপনার খুবই ভালো লেগেছে। তাঁর সঙ্গে ভবিষৎতে কাজ করতে আগ্রহী।

যেসব ইন্টারনেটভিত্তিক সহায়তা নিতে পারেন 
মেটা ক্যারিয়ার ওয়েবসাইটে খুব ডিটেলসে জব ডেসক্রিপশন দেওয়া থাকে। আপনার যোগ্যতা যদি ডেসক্রিপশনের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে আপনার সিভি সিলেকশন রাউন্ডে টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। লিংকেডিন. কমে মেটার জব সার্কুলারগুলো দেওয়া হয়। লিংকেডিনে একটা বড় সুবিধা হচ্ছে মাঝে মাঝে জব পোস্টে কোন রিক্রুটার দায়িত্বে আছে, তা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সরাসরি রিক্রুটারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ইন্টারভিউ কল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইন্টারভিউয়ারের প্রশ্নটি ঠিকঠাক বুঝেছেন কি না, এটি আগে নিশ্চিত হোন। পরে উত্তর দিন। কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা না থাকে, তাহলে যেই সমাধান মাথায় আসে, সেটা নিয়েই সামনে এগিয়ে যান।

যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন 
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনেক সাবসেক্টর, যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং, রোবটিকস, ডেটা অ্যানালিসিস, মেশিন লার্নিং এগুলো এক্সপ্লোর করলে ভবিষ্যতে কিসের ওপর কাজ করলে ভালো হয়, তা বোঝা যায়। অ্যালগরিদম এবং ডেটা স্ট্রাকচার সঠিকভাবে শিখুন। সঙ্গে ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কন্ট্রিবিউট করুন। গিটহাবে ওপেন সোর্স প্রজেক্টগুলোতে কন্ট্রিবিউট করা খুবই ভ্যালুয়েবল স্কিল। যেমন আপনি যদি গুগলের একটা প্রজেক্টে কিছু কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করেন এবং সেটা যদি অ্যাকসেপ্ট হয়, তাহলে আপনি আপনার সিভিতে লিখতে পারবেন যে আপনি গুগলের একটা প্রজেক্টে কান্ট্রিবিউট করেছেন। টেক জায়ান্টে সিভি সিলেকশনে এটি বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি স্টুডেন্টের কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে সময় দেওয়া উচিত। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমপ্লেক্স সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা, ভালো কোড রিডিবিলিটি স্কিল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টেস্টিং করার স্কিল গড়ে ওঠে। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করে প্লেস্টোর অথবা অ্যাপ স্টোরে আপলোড করুন। এটি প্রমাণ করবে আপনি লার্জ স্কেল সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারেন এবং অ্যাপ স্টোরে দেওয়ার মাধ্যমে সব সময় কাস্টমারের সন্তুষ্টির জন্য অ্যাপে বিভিন্ন ইমপ্রুভমেন্ট করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

কোনোভাবেই নিজের টার্গেটকে অসম্ভব মনে করা যাবে না। সব সময় চেষ্টা করে যেতে হবে। মেটা, মাইক্রোসফট, আমাজনে অফার পাওয়ার আগে আমি ১৩ বার টেক জায়ান্টগুলোতে ইন্টারভিউয়ে ব্যর্থ হয়েছি। এক জায়গায় ব্যর্থ হওয়া মানে এই নয় যে আপনি পারবেন না। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে যেতে হবে।

নাজমুস সাকিব, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মেটা।

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা

বিদেশে ক্যারিয়ার: মেটায় চাকরি পেতে ইন্টারভিউয়ে এগিয়ে থাকুন

১৩ বার টেক জায়ান্ট ইন্টারভিউয়ে ব্যর্থ হয়েছি। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সবশেষে মেটায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করি। এই অদম্য সফলতার গল্প নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মেটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাজমুস সাকিব।

ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট কোথাও চান্স পাইনি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে সেখানেই লেকচারার হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব পাই। কিন্তু পরে আমেরিকায় চলে আসি। একটি কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি ২০১৬ সালে একবার গুগলে ইন্টারভিউ দিই কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলাম। ২০১৮ সালে জর্জিয়া টেক থেকে মাস্টার্স করি। ২০১৯ সালে আবার গুগল, মাইক্রোসফট ও আমাজনে চেষ্টা করি এবং আবার ব্যর্থ হই। কিন্তু কখনোই চেষ্টা ছেড়ে দিইনি। আমার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের দিকে ঝোঁক থেকেই আবার চেষ্টা করে নেটফ্লিক্স, গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট এবং ফেসবুকে ইন্টারভিউ দিই। অবশেষে মেটা, আমাজন, মাইক্রোসফটে প্রস্তাব পাই। আমি বর্তমানে মেটার প্রাইভেসি টিমে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। আমার কাজের একটা বড় অংশ হলো কোনো প্রোডাক্ট যেন প্রাইভেসি ইস্যুসহ রিলিজ না হয়।

মেটায় সুযোগ-সুবিধা 
মেটা এক অসাধারণ প্রতিষ্ঠান। কর্মীদের অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে আকর্ষণীয় বেতন, অসুস্থতাজনিত দীর্ঘ ছুটি, পারিবারিক অসুস্থতাজনিত দীর্ঘ ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বার্ষিক বোনাস, ইয়ারলি ওয়েলনেসের জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট। এ ছাড়া অফিসে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার ফ্রি। সব রকমের স্ন্যাক্স, বেভারেজের ব্যবস্থা আছে। এমনকি ঘুমানোর জায়গাও আছে!

ইন্টারভিউয়ে এগিয়ে থাকুন
প্রশ্ন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করবেন না। ইন্টারভিউয়ারের প্রশ্নটি ঠিকঠাক বুঝেছেন কি না, এটি আগে নিশ্চিত হোন। পরে উত্তর দিন। কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা না থাকে, তাহলে যেই সমাধান মাথায় আসে, সেটা নিয়েই সামনে এগিয়ে যান।

ইন্টারভিউয়ারের কাছে কোম্পানিতে নতুন কী আবিষ্কার হয়েছে, গোল এবং ভিশন কী, কালচার কেমন—এগুলো জানতে চাইলে কোম্পানিতে কাজ করার জন্য আপনি কতটা আগ্রহী তা বোঝাতে সহজ হয়। শেষে ইন্টারভিউয়ারকে জানান তাঁর সঙ্গে কথা বলে আপনার খুবই ভালো লেগেছে। তাঁর সঙ্গে ভবিষৎতে কাজ করতে আগ্রহী।

যেসব ইন্টারনেটভিত্তিক সহায়তা নিতে পারেন 
মেটা ক্যারিয়ার ওয়েবসাইটে খুব ডিটেলসে জব ডেসক্রিপশন দেওয়া থাকে। আপনার যোগ্যতা যদি ডেসক্রিপশনের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে আপনার সিভি সিলেকশন রাউন্ডে টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। লিংকেডিন. কমে মেটার জব সার্কুলারগুলো দেওয়া হয়। লিংকেডিনে একটা বড় সুবিধা হচ্ছে মাঝে মাঝে জব পোস্টে কোন রিক্রুটার দায়িত্বে আছে, তা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সরাসরি রিক্রুটারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ইন্টারভিউ কল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইন্টারভিউয়ারের প্রশ্নটি ঠিকঠাক বুঝেছেন কি না, এটি আগে নিশ্চিত হোন। পরে উত্তর দিন। কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা না থাকে, তাহলে যেই সমাধান মাথায় আসে, সেটা নিয়েই সামনে এগিয়ে যান।

যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন 
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনেক সাবসেক্টর, যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং, রোবটিকস, ডেটা অ্যানালিসিস, মেশিন লার্নিং এগুলো এক্সপ্লোর করলে ভবিষ্যতে কিসের ওপর কাজ করলে ভালো হয়, তা বোঝা যায়। অ্যালগরিদম এবং ডেটা স্ট্রাকচার সঠিকভাবে শিখুন। সঙ্গে ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কন্ট্রিবিউট করুন। গিটহাবে ওপেন সোর্স প্রজেক্টগুলোতে কন্ট্রিবিউট করা খুবই ভ্যালুয়েবল স্কিল। যেমন আপনি যদি গুগলের একটা প্রজেক্টে কিছু কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করেন এবং সেটা যদি অ্যাকসেপ্ট হয়, তাহলে আপনি আপনার সিভিতে লিখতে পারবেন যে আপনি গুগলের একটা প্রজেক্টে কান্ট্রিবিউট করেছেন। টেক জায়ান্টে সিভি সিলেকশনে এটি বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি স্টুডেন্টের কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে সময় দেওয়া উচিত। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমপ্লেক্স সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা, ভালো কোড রিডিবিলিটি স্কিল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টেস্টিং করার স্কিল গড়ে ওঠে। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করে প্লেস্টোর অথবা অ্যাপ স্টোরে আপলোড করুন। এটি প্রমাণ করবে আপনি লার্জ স্কেল সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারেন এবং অ্যাপ স্টোরে দেওয়ার মাধ্যমে সব সময় কাস্টমারের সন্তুষ্টির জন্য অ্যাপে বিভিন্ন ইমপ্রুভমেন্ট করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

কোনোভাবেই নিজের টার্গেটকে অসম্ভব মনে করা যাবে না। সব সময় চেষ্টা করে যেতে হবে। মেটা, মাইক্রোসফট, আমাজনে অফার পাওয়ার আগে আমি ১৩ বার টেক জায়ান্টগুলোতে ইন্টারভিউয়ে ব্যর্থ হয়েছি। এক জায়গায় ব্যর্থ হওয়া মানে এই নয় যে আপনি পারবেন না। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে যেতে হবে।

নাজমুস সাকিব, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মেটা।

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা