বিশেষ প্রস্তুতি সংখ্যা: এইচএসসি পরীক্ষা-২০২২

প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, ৬ নভেম্বর থেকে তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। তোমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখতে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। এসব পরামর্শসহ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে তোমাদের জন্য থাকছে ‘এইচএসসি পরীক্ষা-২০২২ প্রস্তুতি’।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

 

 

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পরামর্শ
প্রশ্নফাঁসের গুজবে কান দেবে নাঅধ্যাপক তপন কুমার সরকার, চেয়ারম্যান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও সভাপতি আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হবে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা।

এই পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করার আগের ধাপ। এ পরীক্ষার ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরীক্ষার ফল নিয়ে অযথা টেনশন করবে না। পরীক্ষার জন্য এত দিন যে প্রস্তুতি নিয়েছ, সেটাই মনোবল শক্ত করে পরীক্ষার খাতায় লিখবে। অবশ্যই তোমরা কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করবে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে দুই শিফটে। সকালের শিফটের পরীক্ষা শুরু ১১টায়, বিকেলের শিফট ২টা থেকে। তবে পরীক্ষার্থীদের আগের মতোই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হবে ৩০ মিনিট আগে। যানজটের কথা বিবেচনায় রেখে হাতে সময় নিয়ে পরীক্ষার হলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হবে। পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে পরীক্ষার সময় দুই ঘণ্টা, এর মধ্যে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট রচনামূলক এবং ২০ মিনিট এমসিকিউ। এইচএসসি পরীক্ষা নকলমুক্ত করতে ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সরকার যে ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং নিশ্ছিদ্র। তাই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আমার আহ্বান, প্রশ্নফাঁসের গুজবে কান দেবে না। তোমাদের সবার সফলতা কামনা করছি।

মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লামো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা।অধ্যক্ষের পরামর্শ
তোমাদের সাফল্য আসবেই
মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা, অধ্যক্ষ, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডেমরা, ঢাকা,প্রতিষ্ঠাতা, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য আমার আন্তরিক দোয়া রইল। পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। আশা করি তোমরা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল অর্জন করবে। পরীক্ষা নিকটবর্তী, তাই তোমাদের সবার আগে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। অনিয়মের ফলে যেন কোনো রকম স্বাস্থ্যহানি না ঘটে। খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ও ঘুম ঠিক রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। সাহস রাখতে হবে, পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা যাবে না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে আনন্দ মনে পড়াশোনা চালিয়ে যাও। যে বিষয়ে এখনো প্রস্তুতি শেষ হয়নি, সে বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করো। বিষয় শিক্ষকদের সঙ্গে যথাসম্ভব যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকো। পড়বে অবশ্যই, তবে বেশি রাত জেগে না। ঘুমের ব্যাঘাত যাতে না ঘটে। কিছু পরীক্ষার্থী আছে, যারা পরীক্ষা আসন্ন সত্ত্বেও ফেসবুকের নেশা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে না। তাদের বলছি, যেকোনো উপায়ে ফেসবুক পরিহার করো। জীবন মূল্যবান, ফেসবুকের নেশায় পড়ে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে। অতএব, সাবধান! অভিভাবকদের বলব, পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে এই সময়ে যাতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখবে। এবারের পরীক্ষায় পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস সংক্ষিপ্ত, বিষয়ের পরিধি সীমিত এবং সময়ও কম। তাই পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। বলব, তোমরা এই সুযোগ নাও, নিশ্চিত খুব ভালো করবে। সর্বদাই সময় সচেতন থাকবে, বিশেষ করে পরীক্ষার হলে। সচেতনতা ও উপস্থিত বুদ্ধি পরীক্ষাকে সফল করে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার দু-এক দিন আগেই বলপয়েন্ট পেন, অ্যাডমিট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ যাবতীয় পরীক্ষা উপকরণ হাতের কাছে গুছিয়ে রাখো। ছোট জিনিসের জন্য যেন বড় পেরেশানি না হয়। অভিভাবকেরা, পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত ও আশান্বিত রাখুন। কটা দিন শাসন নাইবা করলেন। ফল হবে। সব পরীক্ষার্থীর মনের আশা পূরণ হোক। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা ভালো হোক।

মাহমুদুল হাসানমাহমুদুল হাসান।অধ্যক্ষের পরামর্শ
পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও করণীয়
মাহমুদুল হাসান,অধ্যক্ষ, আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, নরসিংদী।

প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিও। তোমাদের হাতে সময় খুবই কম। করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আইসিটি বিষয় বাদে বাকি ছয়টি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন-কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিষয়ভেদে বহুনির্বাচনি ২৫টি থেকে ১৫টি এবং ৩০টি থেকে ১৫টি প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রেও বিষয়ভেদে ০৮টি প্রশ্ন থেকে ০৩টি এবং ১১টি থেকে ০৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় পাবে। মনে রাখবে, সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনোভাবে সময় অপচয় করা যাবে না। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য তোমাদের করণীয়:

উত্তরপত্রের বিষয়ে সতর্কবার্তা

  • সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি শিটে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সঙ্গে মিলিয়ে সতর্কতার সঙ্গে রোল নম্বর, রেজি. নম্বর, বিষয় কোড ও বোর্ডের নাম ইত্যাদি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
  • ওএমআর শিট বা কভার পেজে কোনো অবাঞ্ছিত দাগ দেয়া বা ভাঁজ করা যাবে না।
  • প্রতিটি উত্তরের শেষে সমাপ্তিসূচক চিহ্ন দিতে হবে এবং পরবর্তী উত্তর ন্যূনতম ২ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে লেখা শুরু করতে হবে।
  • উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠার বাম পাশে কমপক্ষে ১ ইঞ্চি সর্বোচ্চ ১.২৫ ইঞ্চি জায়গা খালি রাখতে হবে।
  • উত্তরপত্রের কোথাও আপত্তিকর কোনো ধরনের মন্তব্য, অনুরোধ কিংবা নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর ইত্যাদি লেখা যাবে না।
  • একই প্রশ্নের বিভিন্ন অংশের উত্তর ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে।
  • হাতের লেখা দ্রুততার সঙ্গে নির্ভুল, স্পষ্ট ও সুন্দর করতে হবে। ভুল হলে কাটাকাটি বা ঘষামাজা না করে একটানে কেটে দিতে হবে।

প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর করণীয় 

  • প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি প্রশ্ন মনোযোগ সহকারে পড়বে এবং ভালো জানা প্রশ্ন নির্বাচন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখতে হবে।
  • প্রশ্নপত্রে কোনো দাগ বা কাটাকাটি করা যাবে না। রাফ করার জন্য উত্তরপত্রের শেষের পৃষ্ঠা ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সময় ব্যবস্থাপনা ঘড়ি দেখে পরিকল্পিত সময় ও মান বণ্টন অনুসারে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।
  • সময় শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৫-৭ মিনিট পূর্বে লেখা শেষ করে রিভিশন দিতে হবে। বহুনির্বাচনির ক্ষেত্রে ২-৩ মিনিট আগেই বৃত্ত ভরাট শেষ করতে হবে।
  • জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হলের বাইরে যাওয়া যাবে না।

পরিশেষে বলব, এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তোমাকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না। তোমাকে সুস্থ সবল ও নীরোগ থাকতে হবে। এইজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, পুষ্টিকর খাবার, ঘুম এবং অল্পস্বল্প শরীরচর্চা অব্যাহত রাখবে। পঠিত বিষয়ের ওপরে আস্থা রেখে যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিজের সর্বোচ্চটা খাতায় উপস্থাপনের চেষ্টা করবে। পরীক্ষার খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে।

নাসরিন আখতার।নাসরিন আখতার।উচ্চতর গণিত
মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দাও
নাসরিন আখতার,বিভাগীয় প্রধান, গণিত বিভাগ,ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা।

গণিত বিষয়টি অন্যরকম। এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে, বিশেষ করে এই বিষয়ের পরীক্ষা দিতে গেলে মাথা ঠান্ডা রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সব পরীক্ষার্থীর গণিত পরীক্ষায় ভালো করার প্রথম এবং অপরিহার্য শর্ত আত্মবিশ্বাস এবং মাথা ঠান্ডা রাখা। এই দুটি গুণ থাকলে অজানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও সহজ হয়ে যায় এবং না থাকলে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল হয়ে যায়। তাই খুব চেনাজানা এবং সহজ মনে হয়, এমন প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে হয়।

এইচএসসি ২০২২ উচ্চতর গণিত প্রতি পত্রে ছয়টি করে অধ্যায় আছে। CQ অংশে আটটি করে প্রশ্ন থাকবে, যেকোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিনটি অধ্যায় ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। আশা করা যায়, এতে তিনটি CQ উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে ইনশা আল্লাহ। বাকি তিনটি অধ্যায় যতটা সম্ভব চর্চা করতে হবে।

কমপক্ষে শিখনফলগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। এতে CQ, MCQ দুটোর জন্য ভালো হবে। বিশেষ করে MCQ উত্তর দেওয়া সহজ হবে। এটি হচ্ছে উচ্চতর গণিতের প্রস্তুতি নেওয়ার ধারাবাহিকতা। এভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষার্থীরা কম সময়ে এবং সহজে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করতে পারবে ইনশা আল্লাহ। তবে অবশ্যই ছয়টি অধ্যায়ই তোমরা ভালো করে রপ্ত করার চেষ্টা করবে। তোমরা অনেক মেধাবী এবং পরিশ্রমী। সময়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাও। অনেক দোয়া ও শুভকামনা এইচএসসি ২০২২ পরীক্ষার্থীদের জন্য।

মোহাম্মদ ফখরুল আলমমোহাম্মদ ফখরুল আলমঅর্থনীতি
চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে নাও
মোহাম্মদ ফখরুল আলম,সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা

আশা করি সবাই ভালো আছ। এখন তোমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা খুব জরুরি। তাই সুস্থতার জন্য নিয়মিত ঘুম ও খাবারের প্রয়োজন। কারণ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তোমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টি অতি নিকটে। তোমাদের সামনে এখন ফসল তোলার সময়। তাই ধৈর্যসহকারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করো। কারণ আল্লাহ ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ীদের সঙ্গে রয়েছেন।

অর্থনীতি প্রথম পত্র
অধ্যায় মোট ছয়টি (১-৪, ৭ -৯)। এ অধ্যায়গুলোর মধ্যে সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
অধ্যায়-১: উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন এবং অর্থব্যবস্থার ধরন ও তুলনাকরণ।
অধ্যায়-২: ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি, চাহিদা সমীকরণ গঠন, স্থিতিস্থাপকতার ভিত্তিতে দ্রব্যের প্রকৃতি নির্ণয় এবং ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ।
অধ্যায়-৩: ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি, মোট ব্যয়, গড় ব্যয়, প্রান্তিক ব্যয় নির্ণয় ও এদের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো এবং মোট আয়, গড় আয় ও প্রান্তিক আয় নির্ণয়।
অধ্যায়-৪: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ও একচেটিয়া বাজারে স্বল্পকালীন দাম নির্ধারণ।
অধ্যায়-৯: ভোগ ও সঞ্চয় রেখা অঙ্কন, জিএনআই নির্ধারণ এবং আবদ্ধ অর্থনীতিতে জাতীয় আয় নির্ধারণ।

অধ্যায়-১০: মুদ্রার পরিমাণ তত্ত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সৃজন এবং উভয় ব্যাংকের কার্যাবলির মধ্যে পার্থক্য। যেহেতু তোমাদের ১১টি প্রশ্ন থেকে মাত্র ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তাহলে প্রশ্ন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তোমরা সহজ প্রশ্ন বাছাই করবে। গাণিতিক ও চিত্রভিত্তিক প্রশ্নগুলোর যারা উত্তর দেবে তারা ধীরস্থিরভাবে উত্তর করবে যেন ভুল না হয়। তত্ত্বভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নভাবে উপযুক্ত উত্তর করবে।

মুহাম্মদ নাঈমুর রহমানমুহাম্মদ নাঈমুর রহমানহিসাববিজ্ঞান
ক্যালকুলেটর ব্যবহার ও সময় সম্পর্কে সতর্ক থাকবে
মুহাম্মদ নাঈমুর রহমান,প্রভাষক, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা।

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, আজ হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের মানবণ্টন, অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা এবং পরীক্ষায় ভালো করার কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো।

হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের মানবণ্টন নিয়ে ধারণা সৃজনশীল অংশ: ক’ ও ‘খ’ বিভাগ থেকে ১১টি প্রশ্ন থেকে যেকোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। কোনো বাধ্যতামূলক প্রশ্ন থাকবে না। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমে তোমরা যেকোনো তিনটি অধ্যায় খুব ভালোভাবে শেষ করে পরে বাকি অধ্যায়গুলো করবে। যদি সব অধ্যায় করার সময় না থাকে, তাহলে সৃজনশীল অংশের জন্য যেকোনো একটি বা দুটি অধ্যায় বাদ দিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারো। সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেকোনো ভালো মানের বইয়ের সৃজনশীল অংশ (উদাহরণ) এবং বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রশ্ন নির্বাচন। সহজ ও কম সময়ে উত্তর করা যাবে এমন প্রশ্ন নির্বাচন করতে হবে। উত্তর করার সময় অবশ্যই যে প্রশ্নটি ভালো পারবে, সেটি দিয়ে শুরু করবে। ছকের জন্য পেনসিল ব্যবহার করবে। খাতার উপস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখবে। ক্যালকুলেটর ব্যবহার ও সময় সম্পর্কে সতর্ক থাকবে।

বহুনির্বাচনি অংশ
৩০টি প্রশ্নের মধ্যে যেকোনো ১৫টির উত্তর দিতে হবে ২০ মিনিটে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের সব অধ্যায় ভালোভাবে পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অধ্যায় বাদ না দেওয়াই শ্রেয়। বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করার জন্য যেকোনো ভালো মানের বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা পড়ে অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি অংশ এবং বিগত বছরের বোর্ডের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

বহুনির্বাচনি অংশের ক্ষেত্রে প্রতিটা মিনিট অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ৩০টি প্রশ্ন থেকে ১৫টির ২০ মিনিটে উত্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বহুনির্বাচনি অংশে থিওরিটাইপের প্রশ্নগুলো থেকে যে কয়টি প্রশ্ন পারবে, সেগুলো প্রথমে দাগিয়ে ফেলবে, পরে গাণিতিক সমস্যাসংক্রান্ত প্রশ্নে যাবে এবং দাগাবে। আর ১৫টি প্রশ্ন দাগানো হয়ে গেলে তো হয়েই গেল। কোনো প্রশ্ন বাদ দিলে সেটির নম্বর ভালোভাবে খেয়াল রাখবে তা না হলে, একটির জায়গায় আরেকটি দাগানোর আশঙ্কা আছে। সর্বোপরি সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে।

সৃজনশীল অংশ
অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা
হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্র
প্রথমে তোমরা তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম অধ্যায়ের ওপর প্রস্তুতি নিতে পারো এবং পরে প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম এবং নবম অধ্যায় করতে পারো। প্রয়োজনে যেকোনো একটি বা দুটি অধ্যায় বাদ দিতে পারো। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রতিটি অধ্যায়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:

প্রথম অধ্যায় (হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি): এ অধ্যায় থেকে হিসাব সমীকরণ এবং হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব, টেবুলার ছক, হিসাব ও হিসাবের শ্রেণিবিভাগসংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

দ্বিতীয় অধ্যায় (হিসাবের বই): এ অধ্যায় থেকে দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ, হিসাব সমীকরণ, হিসাব সমীকরণের ওপর লেনদেনের প্রভাব, হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়, জাবেদা, জাবেদার প্রকারভেদ (ক্রয় জাবেদা; বিক্রয় জাবেদা), খতিয়ান, নগদ প্রাপ্তি ও নগদ প্রদান জাবেদা, তিনঘরা নগদান বই এবং অগ্রদত্ত পদ্ধতিতে খুচরা নগদান বইসংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

তৃতীয় অধ্যায় (ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী): এ অধ্যায় থেকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতকরণ সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। বকেয়া চেক, ট্রানজিটে জমা, ডেবিট মেমোরেন্ডাম, ক্রেডিট মেমোরেন্ডামের পরিমাণ নির্ণয় এবং ব্যাংকে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিন্তু নগদান বইতে লিপিবদ্ধ হয়নি—এমন লেনদেনের জাবেদা ভালোভাবে দেখে যেয়ো।

চতুর্থ অধ্যায় (রেওয়ামিল): এ অধ্যায় থেকে রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ, অশুদ্ধি সংশোধন জাবেদা…

মো. আব্দুল মোত্তালেবমো. আব্দুল মোত্তালেবরসায়ন
রসায়নের মূল হলো সমীকরণ
মো. আব্দুল মোত্তালেব,সহকারী অধ্যাপক,বিএএফ শাহীন কলেজ,কুর্মিটোলা, ঢাকা।

তোমাদের জন্য আমার শুভকামনা ও দোয়া রইল। রসায়নের পড়া সম্পূর্ণ মিশ্রণ। এখানে প্রতীক, সংকেত, সমীকরণ, ব্যাখ্যা ও অঙ্ক সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হয়। এর একটি ভুল হলে অপরটিও ভুল হয়। তাই সবকিছু সঠিকভাবে লিখতে হবে, তাহলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যাবে। তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন—

প্রথম পত্র
জ্ঞানমূলক 
১) আইসোটোপ কী?
২) আইসোবার কী?
৩) আইসোটোন কী?
৪) বর্ণালি কী?
৫) কোয়ান্টাম সংখ্যা কী?
৬) অরবিট কী?
৭) অরবিটাল কী?
৮) আউফবাউ নীতি কী?
৯) হুন্ডের নীতি কী?
১০) পলির বর্জন নীতি কী?
১১) দ্রাব্যতা কী?
১২) দ্রাব্যতা গুণফল নীতি কী?
১৩) আয়নিক গুণফল কী?
১৪) সমআয়ন প্রভাব কী?
১৫) আধুনিক পর্যায় সূত্র কী?
১৬) অবস্থান্তর মৌল কী?
১৭) লিগ্যান্ড কী?
১৮) মৌলের আয়নিকরণ শক্তি কী?
১৯) মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি কী?
২০) মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা কী?
২১) সংকরণ কী?
২২) সিগমা বন্ধন কী?
২৩) পাই বন্ধন কী?
২৪) হাইড্রোজেন বন্ধন কী?
২৫) পোলার যৌগ কী?
২৬) পোলারিটি কী?
২৭) পোলারায়ন কী?
২৮) s/p/d/f ব্লক মৌল কী?
২৯) সবুজ রসায়ন কী?
৩০) রাসায়নিক সাম্যবস্থা কী?
৩১) লা-শাতেলিয়ার নীতিটি লেখ?
৩২) ভরক্রিয়ার সূত্র লেখ।
৩৩) সাম‌্যাঙ্ক কী?
৩৪) পানির আয়নিক গুণফল কী?
৩৫) অসওয়াল্ডের লঘুকরণ সূত্রটি লেখ।
৩৬) বাফার দ্রবণ কী?
৩৭) বাফার ক্রিয়া কী?
৩৮) pH কী?
৩৯) ‌প্রিজারভেটিভস কী?
৪০)‌ ভিনেগার কী?

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১) 1p/2d/2f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন?
২) NaCl এর দ্রাব্যতা 36 বলতে কী বোঝো?
৩) 25°C তাপমাত্রায় BaSO4 এর দ্রাব‌্যতাগুণফল 1.1×10-11 বল‌তে কী বোঝো?
৪) চিকিৎসার ক্ষেত্রে IR রশির ব্যবহার লেখ।
৫) MRI এর মূলনীতি লেখ।
৬) সমআয়নের প্রভাবে মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষণের দ্রাব্যতা হ্রাস পায় কেন?
৭) Cr ও Cu এর  ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কেন?
৮) সকল অবস্থানটার মৌল d ব্লক মৌল কিন্তু সকল d  ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয় কেন?
৯) Na+ ও F- এর মধ্যে কোনটির আকার ছোট ব্যাখ্যা কর?
১০) Na+ সম্ভব হলেও Na1+ কেন সম্ভব নয়? ব্যাখ্যা কর।
১১) অক্সিজেনের আয়নীকরণ শক্তি নাইট্রোজেন অপেক্ষা কম—
ব্যাখ্যা কর?
১২) ফ্লো‌রিন সর্বাধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল—ব্যাখ্যা কর।
১৩) CaCl2 ও AlCl3 লবণদ্ব‌য়ের  মধ্যে কোনটি পানিতে বেশি দ্রবণীয় এবং কেন? ব্যাখ্যা কর।
১৪) কক্ষ তাপমাত্রায় H2O তরল কিন্তু H2S গ্যাসীয় কারণ
ব্যাখ্যা কর।
১৫) দেখাও যে বিশুদ্ধ পানির PH=7?
১৬) H2SO4, HClO4, HNO3, H2PO4 কোনটি তীব্র অম্ল ব্যাখ্যা কর।
১৭) রক্তের বাফার ক্রিয়ার বর্ণনা দাও।
১৮) রাসায়নিক সাম্যবস্থার গতিশীলতা বলতে কী বোঝো?
১৯) সাম‌্যাং‌ঙ্কের মান শূন‌্য বা অসীম হ‌তে পা‌রে কি?
২০) ভিনেগার কীভাবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, ব্যাখ্যা কর।

দ্বিতীয় পত্র
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১) অনুবন্ধী ক্ষারক কী?
২) অ্যামাগা বক্র কী?
৩) নাইট্রোজেন ফিক্সেশন কী?
৪) RMS বেগ কী?
৫) আদর্শ গ্যাস কী?
৬) বাস্তব গ্যাস কী?
৭) মোল ভগ্নাংশ কী?

মো. ডালিমমো. ডালিমজীববিজ্ঞান
ভালো ফলাফলের জন্য করণীয়
মো. ডালিম,প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শেষ মুহূর্তের পড়াশোনায় তোমরা সবাই ব্যস্ত। প্রত্যেকের লক্ষ্য ভালো ফলাফল অর্জন। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে কিছু করণীয় বিষয় নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।

ভালো ফলাফলের জন্য অবশ্য করণীয়
জীববিজ্ঞান উভয় পত্রে (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) ১২টি অধ্যায় থেকে ৭টি অধ্যায় সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য প্রতিটি অধ্যায় ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন (প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা, অর্থাৎ ৩ ও ৪ নম্বরের জন্য) আকারে আসতে পারে, সেগুলোর উত্তর বারবার লিখে অনুশীলন করতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোর্ড অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে নিজ নিজ বোর্ডে আসা গত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলোর সমাধান বা ওই জাতীয় বিষয় যেগুলো দিয়ে প্রশ্ন হতে পারে বা এযাবৎ কলেজ পরীক্ষায় যেসব বিষয় দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তবে অধ্যায়গুলোর সব বিষয়ই প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার জন্য সৃজনশীল প্রশ্ন আকারে থাকতে পারে—এ কথা সঠিক নয়। প্রতিটি অধ্যায়ের সব জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের (১ ও ২ নম্বরের জন্য) উত্তর লিখে অনুশীলন করতে হবে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য সিলেবাসভুক্ত প্রতিটি অধ্যায় রিডিং পড়ে পরীক্ষায় থাকতে পারে এরূপ তথ্য শিখতে হবে। বহুনির্বাচনি ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে ১৫টির উত্তর করতে হবে। কাজেই বইয়ের সব তথ্যই মুখস্থ থাকতে হবে—এ রকম নয়। তবে অধ্যায়গুলোর মৌলিক তথ্য ধারণ করতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য যেসব বিষয় আয়ত্ত করা হয়েছে, সেখান থেকেও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করা যাবে। কাজেই বাকি বিষয়গুলো বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য রিডিং পড়ে তথ্য নিতে হবে। এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে বোর্ড পরীক্ষায় প্রায় পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব যদি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রয়োজনীয় চিত্র, তথ্যসমৃদ্ধ করে উপস্থাপন করা যায় এবং খাতার পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।

আমরা অনেকে মনে করতে পারি, ৮টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে ৩টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে, তাহলে সব অধ্যায় না পড়লেও হয়—এটিও সঠিক নয়। কারণ একটি সৃজনশীল প্রশ্নের সব অংশ (ক, খ, গ, ঘ) একই অধ্যায় হতে না-ও হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, সামনে ভর্তি পরীক্ষা অপেক্ষমাণ এবং সেখানে প্রতিটি অধ্যায়ের যেকোনো স্থান থেকে প্রশ্ন হতে পারে। কাজেই এখন কোনো অধ্যায় বর্জন করা মানে ভবিষ্যৎ বিপদ ডেকে আনা। কাজেই ভালো ফলাফলের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকে আরও সংক্ষিপ্ত করার কোনো অবকাশ নেই।

বিশেষ প্রস্তুতি সংখ্যা: এইচএসসি পরীক্ষা-২০২২

প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, ৬ নভেম্বর থেকে তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। তোমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখতে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। এসব পরামর্শসহ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে তোমাদের জন্য থাকছে ‘এইচএসসি পরীক্ষা-২০২২ প্রস্তুতি’।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

 

 

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পরামর্শ
প্রশ্নফাঁসের গুজবে কান দেবে নাঅধ্যাপক তপন কুমার সরকার, চেয়ারম্যান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও সভাপতি আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হবে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা।

এই পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করার আগের ধাপ। এ পরীক্ষার ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরীক্ষার ফল নিয়ে অযথা টেনশন করবে না। পরীক্ষার জন্য এত দিন যে প্রস্তুতি নিয়েছ, সেটাই মনোবল শক্ত করে পরীক্ষার খাতায় লিখবে। অবশ্যই তোমরা কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করবে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে দুই শিফটে। সকালের শিফটের পরীক্ষা শুরু ১১টায়, বিকেলের শিফট ২টা থেকে। তবে পরীক্ষার্থীদের আগের মতোই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হবে ৩০ মিনিট আগে। যানজটের কথা বিবেচনায় রেখে হাতে সময় নিয়ে পরীক্ষার হলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হবে। পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে পরীক্ষার সময় দুই ঘণ্টা, এর মধ্যে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট রচনামূলক এবং ২০ মিনিট এমসিকিউ। এইচএসসি পরীক্ষা নকলমুক্ত করতে ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সরকার যে ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং নিশ্ছিদ্র। তাই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আমার আহ্বান, প্রশ্নফাঁসের গুজবে কান দেবে না। তোমাদের সবার সফলতা কামনা করছি।

মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লামো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা।অধ্যক্ষের পরামর্শ
তোমাদের সাফল্য আসবেই
মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা, অধ্যক্ষ, সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডেমরা, ঢাকা,প্রতিষ্ঠাতা, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য আমার আন্তরিক দোয়া রইল। পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। আশা করি তোমরা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল অর্জন করবে। পরীক্ষা নিকটবর্তী, তাই তোমাদের সবার আগে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। অনিয়মের ফলে যেন কোনো রকম স্বাস্থ্যহানি না ঘটে। খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ও ঘুম ঠিক রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। সাহস রাখতে হবে, পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা যাবে না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে আনন্দ মনে পড়াশোনা চালিয়ে যাও। যে বিষয়ে এখনো প্রস্তুতি শেষ হয়নি, সে বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করো। বিষয় শিক্ষকদের সঙ্গে যথাসম্ভব যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকো। পড়বে অবশ্যই, তবে বেশি রাত জেগে না। ঘুমের ব্যাঘাত যাতে না ঘটে। কিছু পরীক্ষার্থী আছে, যারা পরীক্ষা আসন্ন সত্ত্বেও ফেসবুকের নেশা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে না। তাদের বলছি, যেকোনো উপায়ে ফেসবুক পরিহার করো। জীবন মূল্যবান, ফেসবুকের নেশায় পড়ে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে। অতএব, সাবধান! অভিভাবকদের বলব, পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে এই সময়ে যাতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখবে। এবারের পরীক্ষায় পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস সংক্ষিপ্ত, বিষয়ের পরিধি সীমিত এবং সময়ও কম। তাই পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। বলব, তোমরা এই সুযোগ নাও, নিশ্চিত খুব ভালো করবে। সর্বদাই সময় সচেতন থাকবে, বিশেষ করে পরীক্ষার হলে। সচেতনতা ও উপস্থিত বুদ্ধি পরীক্ষাকে সফল করে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার দু-এক দিন আগেই বলপয়েন্ট পেন, অ্যাডমিট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ যাবতীয় পরীক্ষা উপকরণ হাতের কাছে গুছিয়ে রাখো। ছোট জিনিসের জন্য যেন বড় পেরেশানি না হয়। অভিভাবকেরা, পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত ও আশান্বিত রাখুন। কটা দিন শাসন নাইবা করলেন। ফল হবে। সব পরীক্ষার্থীর মনের আশা পূরণ হোক। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা ভালো হোক।

মাহমুদুল হাসানমাহমুদুল হাসান।অধ্যক্ষের পরামর্শ
পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও করণীয়
মাহমুদুল হাসান,অধ্যক্ষ, আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, নরসিংদী।

প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিও। তোমাদের হাতে সময় খুবই কম। করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আইসিটি বিষয় বাদে বাকি ছয়টি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন-কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিষয়ভেদে বহুনির্বাচনি ২৫টি থেকে ১৫টি এবং ৩০টি থেকে ১৫টি প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রেও বিষয়ভেদে ০৮টি প্রশ্ন থেকে ০৩টি এবং ১১টি থেকে ০৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় পাবে। মনে রাখবে, সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনোভাবে সময় অপচয় করা যাবে না। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য তোমাদের করণীয়:

উত্তরপত্রের বিষয়ে সতর্কবার্তা

  • সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি শিটে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সঙ্গে মিলিয়ে সতর্কতার সঙ্গে রোল নম্বর, রেজি. নম্বর, বিষয় কোড ও বোর্ডের নাম ইত্যাদি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
  • ওএমআর শিট বা কভার পেজে কোনো অবাঞ্ছিত দাগ দেয়া বা ভাঁজ করা যাবে না।
  • প্রতিটি উত্তরের শেষে সমাপ্তিসূচক চিহ্ন দিতে হবে এবং পরবর্তী উত্তর ন্যূনতম ২ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে লেখা শুরু করতে হবে।
  • উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠার বাম পাশে কমপক্ষে ১ ইঞ্চি সর্বোচ্চ ১.২৫ ইঞ্চি জায়গা খালি রাখতে হবে।
  • উত্তরপত্রের কোথাও আপত্তিকর কোনো ধরনের মন্তব্য, অনুরোধ কিংবা নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর ইত্যাদি লেখা যাবে না।
  • একই প্রশ্নের বিভিন্ন অংশের উত্তর ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে।
  • হাতের লেখা দ্রুততার সঙ্গে নির্ভুল, স্পষ্ট ও সুন্দর করতে হবে। ভুল হলে কাটাকাটি বা ঘষামাজা না করে একটানে কেটে দিতে হবে।

প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর করণীয় 

  • প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি প্রশ্ন মনোযোগ সহকারে পড়বে এবং ভালো জানা প্রশ্ন নির্বাচন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখতে হবে।
  • প্রশ্নপত্রে কোনো দাগ বা কাটাকাটি করা যাবে না। রাফ করার জন্য উত্তরপত্রের শেষের পৃষ্ঠা ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সময় ব্যবস্থাপনা ঘড়ি দেখে পরিকল্পিত সময় ও মান বণ্টন অনুসারে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।
  • সময় শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৫-৭ মিনিট পূর্বে লেখা শেষ করে রিভিশন দিতে হবে। বহুনির্বাচনির ক্ষেত্রে ২-৩ মিনিট আগেই বৃত্ত ভরাট শেষ করতে হবে।
  • জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হলের বাইরে যাওয়া যাবে না।

পরিশেষে বলব, এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তোমাকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না। তোমাকে সুস্থ সবল ও নীরোগ থাকতে হবে। এইজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, পুষ্টিকর খাবার, ঘুম এবং অল্পস্বল্প শরীরচর্চা অব্যাহত রাখবে। পঠিত বিষয়ের ওপরে আস্থা রেখে যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিজের সর্বোচ্চটা খাতায় উপস্থাপনের চেষ্টা করবে। পরীক্ষার খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে।

নাসরিন আখতার।নাসরিন আখতার।উচ্চতর গণিত
মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দাও
নাসরিন আখতার,বিভাগীয় প্রধান, গণিত বিভাগ,ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা।

গণিত বিষয়টি অন্যরকম। এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে, বিশেষ করে এই বিষয়ের পরীক্ষা দিতে গেলে মাথা ঠান্ডা রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সব পরীক্ষার্থীর গণিত পরীক্ষায় ভালো করার প্রথম এবং অপরিহার্য শর্ত আত্মবিশ্বাস এবং মাথা ঠান্ডা রাখা। এই দুটি গুণ থাকলে অজানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও সহজ হয়ে যায় এবং না থাকলে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল হয়ে যায়। তাই খুব চেনাজানা এবং সহজ মনে হয়, এমন প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে হয়।

এইচএসসি ২০২২ উচ্চতর গণিত প্রতি পত্রে ছয়টি করে অধ্যায় আছে। CQ অংশে আটটি করে প্রশ্ন থাকবে, যেকোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিনটি অধ্যায় ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। আশা করা যায়, এতে তিনটি CQ উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে ইনশা আল্লাহ। বাকি তিনটি অধ্যায় যতটা সম্ভব চর্চা করতে হবে।

কমপক্ষে শিখনফলগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। এতে CQ, MCQ দুটোর জন্য ভালো হবে। বিশেষ করে MCQ উত্তর দেওয়া সহজ হবে। এটি হচ্ছে উচ্চতর গণিতের প্রস্তুতি নেওয়ার ধারাবাহিকতা। এভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষার্থীরা কম সময়ে এবং সহজে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করতে পারবে ইনশা আল্লাহ। তবে অবশ্যই ছয়টি অধ্যায়ই তোমরা ভালো করে রপ্ত করার চেষ্টা করবে। তোমরা অনেক মেধাবী এবং পরিশ্রমী। সময়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাও। অনেক দোয়া ও শুভকামনা এইচএসসি ২০২২ পরীক্ষার্থীদের জন্য।

মোহাম্মদ ফখরুল আলমমোহাম্মদ ফখরুল আলমঅর্থনীতি
চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে নাও
মোহাম্মদ ফখরুল আলম,সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা

আশা করি সবাই ভালো আছ। এখন তোমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা খুব জরুরি। তাই সুস্থতার জন্য নিয়মিত ঘুম ও খাবারের প্রয়োজন। কারণ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তোমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টি অতি নিকটে। তোমাদের সামনে এখন ফসল তোলার সময়। তাই ধৈর্যসহকারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করো। কারণ আল্লাহ ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ীদের সঙ্গে রয়েছেন।

অর্থনীতি প্রথম পত্র
অধ্যায় মোট ছয়টি (১-৪, ৭ -৯)। এ অধ্যায়গুলোর মধ্যে সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
অধ্যায়-১: উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা অঙ্কন এবং অর্থব্যবস্থার ধরন ও তুলনাকরণ।
অধ্যায়-২: ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি, চাহিদা সমীকরণ গঠন, স্থিতিস্থাপকতার ভিত্তিতে দ্রব্যের প্রকৃতি নির্ণয় এবং ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ।
অধ্যায়-৩: ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি, মোট ব্যয়, গড় ব্যয়, প্রান্তিক ব্যয় নির্ণয় ও এদের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো এবং মোট আয়, গড় আয় ও প্রান্তিক আয় নির্ণয়।
অধ্যায়-৪: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ও একচেটিয়া বাজারে স্বল্পকালীন দাম নির্ধারণ।
অধ্যায়-৯: ভোগ ও সঞ্চয় রেখা অঙ্কন, জিএনআই নির্ধারণ এবং আবদ্ধ অর্থনীতিতে জাতীয় আয় নির্ধারণ।

অধ্যায়-১০: মুদ্রার পরিমাণ তত্ত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সৃজন এবং উভয় ব্যাংকের কার্যাবলির মধ্যে পার্থক্য। যেহেতু তোমাদের ১১টি প্রশ্ন থেকে মাত্র ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তাহলে প্রশ্ন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তোমরা সহজ প্রশ্ন বাছাই করবে। গাণিতিক ও চিত্রভিত্তিক প্রশ্নগুলোর যারা উত্তর দেবে তারা ধীরস্থিরভাবে উত্তর করবে যেন ভুল না হয়। তত্ত্বভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নভাবে উপযুক্ত উত্তর করবে।

মুহাম্মদ নাঈমুর রহমানমুহাম্মদ নাঈমুর রহমানহিসাববিজ্ঞান
ক্যালকুলেটর ব্যবহার ও সময় সম্পর্কে সতর্ক থাকবে
মুহাম্মদ নাঈমুর রহমান,প্রভাষক, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা।

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, আজ হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের মানবণ্টন, অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা এবং পরীক্ষায় ভালো করার কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো।

হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের মানবণ্টন নিয়ে ধারণা সৃজনশীল অংশ: ক’ ও ‘খ’ বিভাগ থেকে ১১টি প্রশ্ন থেকে যেকোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। কোনো বাধ্যতামূলক প্রশ্ন থাকবে না। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমে তোমরা যেকোনো তিনটি অধ্যায় খুব ভালোভাবে শেষ করে পরে বাকি অধ্যায়গুলো করবে। যদি সব অধ্যায় করার সময় না থাকে, তাহলে সৃজনশীল অংশের জন্য যেকোনো একটি বা দুটি অধ্যায় বাদ দিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারো। সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেকোনো ভালো মানের বইয়ের সৃজনশীল অংশ (উদাহরণ) এবং বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রশ্ন নির্বাচন। সহজ ও কম সময়ে উত্তর করা যাবে এমন প্রশ্ন নির্বাচন করতে হবে। উত্তর করার সময় অবশ্যই যে প্রশ্নটি ভালো পারবে, সেটি দিয়ে শুরু করবে। ছকের জন্য পেনসিল ব্যবহার করবে। খাতার উপস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখবে। ক্যালকুলেটর ব্যবহার ও সময় সম্পর্কে সতর্ক থাকবে।

বহুনির্বাচনি অংশ
৩০টি প্রশ্নের মধ্যে যেকোনো ১৫টির উত্তর দিতে হবে ২০ মিনিটে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের সব অধ্যায় ভালোভাবে পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অধ্যায় বাদ না দেওয়াই শ্রেয়। বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করার জন্য যেকোনো ভালো মানের বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা পড়ে অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি অংশ এবং বিগত বছরের বোর্ডের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

বহুনির্বাচনি অংশের ক্ষেত্রে প্রতিটা মিনিট অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ৩০টি প্রশ্ন থেকে ১৫টির ২০ মিনিটে উত্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বহুনির্বাচনি অংশে থিওরিটাইপের প্রশ্নগুলো থেকে যে কয়টি প্রশ্ন পারবে, সেগুলো প্রথমে দাগিয়ে ফেলবে, পরে গাণিতিক সমস্যাসংক্রান্ত প্রশ্নে যাবে এবং দাগাবে। আর ১৫টি প্রশ্ন দাগানো হয়ে গেলে তো হয়েই গেল। কোনো প্রশ্ন বাদ দিলে সেটির নম্বর ভালোভাবে খেয়াল রাখবে তা না হলে, একটির জায়গায় আরেকটি দাগানোর আশঙ্কা আছে। সর্বোপরি সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে।

সৃজনশীল অংশ
অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা
হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্র
প্রথমে তোমরা তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম অধ্যায়ের ওপর প্রস্তুতি নিতে পারো এবং পরে প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম এবং নবম অধ্যায় করতে পারো। প্রয়োজনে যেকোনো একটি বা দুটি অধ্যায় বাদ দিতে পারো। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রতিটি অধ্যায়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:

প্রথম অধ্যায় (হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি): এ অধ্যায় থেকে হিসাব সমীকরণ এবং হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব, টেবুলার ছক, হিসাব ও হিসাবের শ্রেণিবিভাগসংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

দ্বিতীয় অধ্যায় (হিসাবের বই): এ অধ্যায় থেকে দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ, হিসাব সমীকরণ, হিসাব সমীকরণের ওপর লেনদেনের প্রভাব, হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়, জাবেদা, জাবেদার প্রকারভেদ (ক্রয় জাবেদা; বিক্রয় জাবেদা), খতিয়ান, নগদ প্রাপ্তি ও নগদ প্রদান জাবেদা, তিনঘরা নগদান বই এবং অগ্রদত্ত পদ্ধতিতে খুচরা নগদান বইসংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

তৃতীয় অধ্যায় (ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী): এ অধ্যায় থেকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতকরণ সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। বকেয়া চেক, ট্রানজিটে জমা, ডেবিট মেমোরেন্ডাম, ক্রেডিট মেমোরেন্ডামের পরিমাণ নির্ণয় এবং ব্যাংকে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিন্তু নগদান বইতে লিপিবদ্ধ হয়নি—এমন লেনদেনের জাবেদা ভালোভাবে দেখে যেয়ো।

চতুর্থ অধ্যায় (রেওয়ামিল): এ অধ্যায় থেকে রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ, অশুদ্ধি সংশোধন জাবেদা…

মো. আব্দুল মোত্তালেবমো. আব্দুল মোত্তালেবরসায়ন
রসায়নের মূল হলো সমীকরণ
মো. আব্দুল মোত্তালেব,সহকারী অধ্যাপক,বিএএফ শাহীন কলেজ,কুর্মিটোলা, ঢাকা।

তোমাদের জন্য আমার শুভকামনা ও দোয়া রইল। রসায়নের পড়া সম্পূর্ণ মিশ্রণ। এখানে প্রতীক, সংকেত, সমীকরণ, ব্যাখ্যা ও অঙ্ক সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হয়। এর একটি ভুল হলে অপরটিও ভুল হয়। তাই সবকিছু সঠিকভাবে লিখতে হবে, তাহলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া যাবে। তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন—

প্রথম পত্র
জ্ঞানমূলক 
১) আইসোটোপ কী?
২) আইসোবার কী?
৩) আইসোটোন কী?
৪) বর্ণালি কী?
৫) কোয়ান্টাম সংখ্যা কী?
৬) অরবিট কী?
৭) অরবিটাল কী?
৮) আউফবাউ নীতি কী?
৯) হুন্ডের নীতি কী?
১০) পলির বর্জন নীতি কী?
১১) দ্রাব্যতা কী?
১২) দ্রাব্যতা গুণফল নীতি কী?
১৩) আয়নিক গুণফল কী?
১৪) সমআয়ন প্রভাব কী?
১৫) আধুনিক পর্যায় সূত্র কী?
১৬) অবস্থান্তর মৌল কী?
১৭) লিগ্যান্ড কী?
১৮) মৌলের আয়নিকরণ শক্তি কী?
১৯) মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি কী?
২০) মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা কী?
২১) সংকরণ কী?
২২) সিগমা বন্ধন কী?
২৩) পাই বন্ধন কী?
২৪) হাইড্রোজেন বন্ধন কী?
২৫) পোলার যৌগ কী?
২৬) পোলারিটি কী?
২৭) পোলারায়ন কী?
২৮) s/p/d/f ব্লক মৌল কী?
২৯) সবুজ রসায়ন কী?
৩০) রাসায়নিক সাম্যবস্থা কী?
৩১) লা-শাতেলিয়ার নীতিটি লেখ?
৩২) ভরক্রিয়ার সূত্র লেখ।
৩৩) সাম‌্যাঙ্ক কী?
৩৪) পানির আয়নিক গুণফল কী?
৩৫) অসওয়াল্ডের লঘুকরণ সূত্রটি লেখ।
৩৬) বাফার দ্রবণ কী?
৩৭) বাফার ক্রিয়া কী?
৩৮) pH কী?
৩৯) ‌প্রিজারভেটিভস কী?
৪০)‌ ভিনেগার কী?

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১) 1p/2d/2f অরবিটাল সম্ভব নয় কেন?
২) NaCl এর দ্রাব্যতা 36 বলতে কী বোঝো?
৩) 25°C তাপমাত্রায় BaSO4 এর দ্রাব‌্যতাগুণফল 1.1×10-11 বল‌তে কী বোঝো?
৪) চিকিৎসার ক্ষেত্রে IR রশির ব্যবহার লেখ।
৫) MRI এর মূলনীতি লেখ।
৬) সমআয়নের প্রভাবে মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষণের দ্রাব্যতা হ্রাস পায় কেন?
৭) Cr ও Cu এর  ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কেন?
৮) সকল অবস্থানটার মৌল d ব্লক মৌল কিন্তু সকল d  ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয় কেন?
৯) Na+ ও F- এর মধ্যে কোনটির আকার ছোট ব্যাখ্যা কর?
১০) Na+ সম্ভব হলেও Na1+ কেন সম্ভব নয়? ব্যাখ্যা কর।
১১) অক্সিজেনের আয়নীকরণ শক্তি নাইট্রোজেন অপেক্ষা কম—
ব্যাখ্যা কর?
১২) ফ্লো‌রিন সর্বাধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল—ব্যাখ্যা কর।
১৩) CaCl2 ও AlCl3 লবণদ্ব‌য়ের  মধ্যে কোনটি পানিতে বেশি দ্রবণীয় এবং কেন? ব্যাখ্যা কর।
১৪) কক্ষ তাপমাত্রায় H2O তরল কিন্তু H2S গ্যাসীয় কারণ
ব্যাখ্যা কর।
১৫) দেখাও যে বিশুদ্ধ পানির PH=7?
১৬) H2SO4, HClO4, HNO3, H2PO4 কোনটি তীব্র অম্ল ব্যাখ্যা কর।
১৭) রক্তের বাফার ক্রিয়ার বর্ণনা দাও।
১৮) রাসায়নিক সাম্যবস্থার গতিশীলতা বলতে কী বোঝো?
১৯) সাম‌্যাং‌ঙ্কের মান শূন‌্য বা অসীম হ‌তে পা‌রে কি?
২০) ভিনেগার কীভাবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, ব্যাখ্যা কর।

দ্বিতীয় পত্র
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১) অনুবন্ধী ক্ষারক কী?
২) অ্যামাগা বক্র কী?
৩) নাইট্রোজেন ফিক্সেশন কী?
৪) RMS বেগ কী?
৫) আদর্শ গ্যাস কী?
৬) বাস্তব গ্যাস কী?
৭) মোল ভগ্নাংশ কী?

মো. ডালিমমো. ডালিমজীববিজ্ঞান
ভালো ফলাফলের জন্য করণীয়
মো. ডালিম,প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শেষ মুহূর্তের পড়াশোনায় তোমরা সবাই ব্যস্ত। প্রত্যেকের লক্ষ্য ভালো ফলাফল অর্জন। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে কিছু করণীয় বিষয় নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।

ভালো ফলাফলের জন্য অবশ্য করণীয়
জীববিজ্ঞান উভয় পত্রে (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) ১২টি অধ্যায় থেকে ৭টি অধ্যায় সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য প্রতিটি অধ্যায় ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন (প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা, অর্থাৎ ৩ ও ৪ নম্বরের জন্য) আকারে আসতে পারে, সেগুলোর উত্তর বারবার লিখে অনুশীলন করতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোর্ড অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে নিজ নিজ বোর্ডে আসা গত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলোর সমাধান বা ওই জাতীয় বিষয় যেগুলো দিয়ে প্রশ্ন হতে পারে বা এযাবৎ কলেজ পরীক্ষায় যেসব বিষয় দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তবে অধ্যায়গুলোর সব বিষয়ই প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার জন্য সৃজনশীল প্রশ্ন আকারে থাকতে পারে—এ কথা সঠিক নয়। প্রতিটি অধ্যায়ের সব জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের (১ ও ২ নম্বরের জন্য) উত্তর লিখে অনুশীলন করতে হবে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য সিলেবাসভুক্ত প্রতিটি অধ্যায় রিডিং পড়ে পরীক্ষায় থাকতে পারে এরূপ তথ্য শিখতে হবে। বহুনির্বাচনি ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে ১৫টির উত্তর করতে হবে। কাজেই বইয়ের সব তথ্যই মুখস্থ থাকতে হবে—এ রকম নয়। তবে অধ্যায়গুলোর মৌলিক তথ্য ধারণ করতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য যেসব বিষয় আয়ত্ত করা হয়েছে, সেখান থেকেও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করা যাবে। কাজেই বাকি বিষয়গুলো বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য রিডিং পড়ে তথ্য নিতে হবে। এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে বোর্ড পরীক্ষায় প্রায় পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব যদি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রয়োজনীয় চিত্র, তথ্যসমৃদ্ধ করে উপস্থাপন করা যায় এবং খাতার পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।

আমরা অনেকে মনে করতে পারি, ৮টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে ৩টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে, তাহলে সব অধ্যায় না পড়লেও হয়—এটিও সঠিক নয়। কারণ একটি সৃজনশীল প্রশ্নের সব অংশ (ক, খ, গ, ঘ) একই অধ্যায় হতে না-ও হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, সামনে ভর্তি পরীক্ষা অপেক্ষমাণ এবং সেখানে প্রতিটি অধ্যায়ের যেকোনো স্থান থেকে প্রশ্ন হতে পারে। কাজেই এখন কোনো অধ্যায় বর্জন করা মানে ভবিষ্যৎ বিপদ ডেকে আনা। কাজেই ভালো ফলাফলের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকে আরও সংক্ষিপ্ত করার কোনো অবকাশ নেই।