বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা ও গবেষণায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স খ্যাত

মো. আশিকুর রহমান

বাংলাদেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২২ নভেম্বর, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) পথচলা শুরু। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক ইনস্টিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন অ্যাগ্রিকালচার (ইপসা) পুনর্গঠন করে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষার প্রসার এবং কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত আনুষঙ্গিক বিষয়ে উন্নত শিক্ষাদান, গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকেই। সে সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষিতে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণায় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।

যাত্রা শুরু
ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর বিশাল খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক, যুগোপযোগী ও লাগসই প্রযুক্তি, উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আধুনিক কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য সামনে রেখে আজ থেকে প্রায় তিন যুগ আগে ১৯৮৫ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন অ্যাগ্রিকালচার (ইপসা) প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষিক্ষেত্রে অল্প সময়েই তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে ইপসার দ্বিতীয় সমাবর্তনে (১৯ জুন ১৯৯৭) প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। পরে ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) আইন গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে দেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

অনুষদ ও বিভাগ
বশেমুরকৃবিতে রয়েছে গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ, কৃষি, মৎস্য, ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৪৪টি বিভাগ। রয়েছে তিনটি ইনস্টিটিউশন।

ভৌত সুবিধা
ভৌত সুবিধাদি শিক্ষা, গবেষণা ও সহায়ক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে রয়েছে অনুষদ ভবন, অডিও ভিজুয়াল (audio-visual) সুবিধাসহ শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার, মাঠ গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডরমিটরি ইত্যাদি। অন্যান্য ভৌত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, মসজিদ, ব্যাংক, ডাকঘর ইত্যাদি।

বিশেষত্ব
নর্থ আমেরিকান কারিকুলাম ক্রেডিট সিস্টেমে পরিচালিত দেশের প্রথম এবং একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে বছরে তিন সেমিস্টার: সামার, অটাম, উইন্টার। শতভাগ আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গ্র্যাজুয়েট ও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ক্যাটালগ।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি নিয়মিত এবং নির্ধারিত গ্র্যাজুয়েশন ডে পালন করা হয়। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত (করোনা সময় ব্যতীত) এক দিনের জন্যও কোনো সেশনজট নেই।

অবদান
কৃষি ও কৃষি-সম্পর্কিত মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কৃষি, মৎস্য, পশুপালন এবং পশুচিকিৎসাবিজ্ঞানে মৌলিক জ্ঞান সৃজনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রেখে চলেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আধুনিক কৃষির নানা বিষয়ে অনেকগুলো গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশিষ্ট জার্নালে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স বা সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। শিক্ষকের মৌলিক গবেষণায় অর্জিত ফলাফল থেকে তিন সহস্রাধিক প্রকাশনা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় জার্নাল এবং পুস্তকে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ২০০টির বেশি জনপ্রিয় নিবন্ধ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ধানসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল, সবজি ও তেলজাতীয় ফসলের ৬৮টি উচ্চফলনশীল জাত ও ১৪টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিগুলো কৃষি উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখেছে, বিশেষ করে বিইউ ধান ১ এবং মুগডালের জাত বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মঙ্গা দূরীকরণে; সয়াবিন, লাউ, শিম, পেঁপে, কুলের (আপেলকুল) জাতগুলো দেশের কৃষি উৎপাদনে অসামান্য অবদান রাখছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির মধ্যেও এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিম, চেরি টমেটো, সয়াবিন, ফুলসহ অন্যান্য ফসলের ১৪টি জাত কৃষকের চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের দুই শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন উচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশিষ্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

অর্জন
মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বোৎকৃষ্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক আন্তর্জাতিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পুরস্কার অর্জন করে। ২০১৫ সালে বৃক্ষরোপণ ও কৃষি বনায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৪ অর্জন। ২০১৭ সালে শিক্ষা, গবেষণা ও বহিরাঙ্গন কার্যক্রমে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২২ (স্বর্ণ) অর্জন। ব্যক্তিগত গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক, ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পদক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো, ইউজিসি প্রফেসর ইত্যাদি জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ২০২১ সালে বিশ্বখ্যাত স্কোপাস ও সিমাগো ইনডেক্স জরিপে বশেমুরকৃবি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থানে তিন সূচকে প্রথম স্থান লাভ করে।

প্রকাশনা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরার জন্য নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল এনালস্ অব বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার, রিসার্চ অ্যাবস্ট্রাক্ট, বুক অব ডির্সাটেশন  এবস্ট্রাক্ট   (১৯৮৫-২০১৮), বার্ষিক প্রতিবেদন, বশেমুরকৃবি বার্তা, দীর্ঘমেয়াদি কোর্স প্ল্যান ও পরিমার্জিত গ্র্যাজুয়েট ক্যাটালগ নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ স্মরণিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতগুলোর উৎপাদন মৌসুম, জীবনকাল, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ফলন, চাষাবাদ পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিগুলোর বর্ণনা ও উপকারিতা সন্নিবেশ করে বশেমুরকৃবি প্রযুক্তি বই নামে একটি সংকলন প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি দ্বারা কৃষি শিক্ষার্থী, কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, গবেষক, সম্প্রসারণবিদ ও এনজিওকর্মী এবং সর্বোপরি কৃষকেরা উপকৃত হবেন।

ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়াড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া

মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণায় উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে জাতির উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় একটি দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা, যা জাতির সার্বিক এবং বিশেষ করে কৃষি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষি গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে খামার অর্থনীতির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অনন্য প্রতিষ্ঠান। সমাজের টেকসই উন্নয়নে কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে অবদান রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

লেখক: ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা ও গবেষণায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স খ্যাত

মো. আশিকুর রহমান

বাংলাদেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২২ নভেম্বর, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) পথচলা শুরু। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক ইনস্টিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন অ্যাগ্রিকালচার (ইপসা) পুনর্গঠন করে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষার প্রসার এবং কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত আনুষঙ্গিক বিষয়ে উন্নত শিক্ষাদান, গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকেই। সে সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষিতে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণায় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।

যাত্রা শুরু
ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর বিশাল খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক, যুগোপযোগী ও লাগসই প্রযুক্তি, উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আধুনিক কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য সামনে রেখে আজ থেকে প্রায় তিন যুগ আগে ১৯৮৫ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন অ্যাগ্রিকালচার (ইপসা) প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষিক্ষেত্রে অল্প সময়েই তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে ইপসার দ্বিতীয় সমাবর্তনে (১৯ জুন ১৯৯৭) প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। পরে ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) আইন গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে দেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

অনুষদ ও বিভাগ
বশেমুরকৃবিতে রয়েছে গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ, কৃষি, মৎস্য, ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৪৪টি বিভাগ। রয়েছে তিনটি ইনস্টিটিউশন।

ভৌত সুবিধা
ভৌত সুবিধাদি শিক্ষা, গবেষণা ও সহায়ক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে রয়েছে অনুষদ ভবন, অডিও ভিজুয়াল (audio-visual) সুবিধাসহ শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার, মাঠ গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডরমিটরি ইত্যাদি। অন্যান্য ভৌত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, মসজিদ, ব্যাংক, ডাকঘর ইত্যাদি।

বিশেষত্ব
নর্থ আমেরিকান কারিকুলাম ক্রেডিট সিস্টেমে পরিচালিত দেশের প্রথম এবং একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে বছরে তিন সেমিস্টার: সামার, অটাম, উইন্টার। শতভাগ আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গ্র্যাজুয়েট ও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ক্যাটালগ।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি নিয়মিত এবং নির্ধারিত গ্র্যাজুয়েশন ডে পালন করা হয়। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত (করোনা সময় ব্যতীত) এক দিনের জন্যও কোনো সেশনজট নেই।

অবদান
কৃষি ও কৃষি-সম্পর্কিত মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কৃষি, মৎস্য, পশুপালন এবং পশুচিকিৎসাবিজ্ঞানে মৌলিক জ্ঞান সৃজনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রেখে চলেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আধুনিক কৃষির নানা বিষয়ে অনেকগুলো গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশিষ্ট জার্নালে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স বা সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। শিক্ষকের মৌলিক গবেষণায় অর্জিত ফলাফল থেকে তিন সহস্রাধিক প্রকাশনা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় জার্নাল এবং পুস্তকে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ২০০টির বেশি জনপ্রিয় নিবন্ধ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ধানসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল, সবজি ও তেলজাতীয় ফসলের ৬৮টি উচ্চফলনশীল জাত ও ১৪টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিগুলো কৃষি উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখেছে, বিশেষ করে বিইউ ধান ১ এবং মুগডালের জাত বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মঙ্গা দূরীকরণে; সয়াবিন, লাউ, শিম, পেঁপে, কুলের (আপেলকুল) জাতগুলো দেশের কৃষি উৎপাদনে অসামান্য অবদান রাখছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির মধ্যেও এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিম, চেরি টমেটো, সয়াবিন, ফুলসহ অন্যান্য ফসলের ১৪টি জাত কৃষকের চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের দুই শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন উচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশিষ্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

অর্জন
মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বোৎকৃষ্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক আন্তর্জাতিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পুরস্কার অর্জন করে। ২০১৫ সালে বৃক্ষরোপণ ও কৃষি বনায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৪ অর্জন। ২০১৭ সালে শিক্ষা, গবেষণা ও বহিরাঙ্গন কার্যক্রমে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২২ (স্বর্ণ) অর্জন। ব্যক্তিগত গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক, ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পদক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো, ইউজিসি প্রফেসর ইত্যাদি জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ২০২১ সালে বিশ্বখ্যাত স্কোপাস ও সিমাগো ইনডেক্স জরিপে বশেমুরকৃবি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থানে তিন সূচকে প্রথম স্থান লাভ করে।

প্রকাশনা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরার জন্য নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল এনালস্ অব বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার, রিসার্চ অ্যাবস্ট্রাক্ট, বুক অব ডির্সাটেশন  এবস্ট্রাক্ট   (১৯৮৫-২০১৮), বার্ষিক প্রতিবেদন, বশেমুরকৃবি বার্তা, দীর্ঘমেয়াদি কোর্স প্ল্যান ও পরিমার্জিত গ্র্যাজুয়েট ক্যাটালগ নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ স্মরণিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতগুলোর উৎপাদন মৌসুম, জীবনকাল, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ফলন, চাষাবাদ পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিগুলোর বর্ণনা ও উপকারিতা সন্নিবেশ করে বশেমুরকৃবি প্রযুক্তি বই নামে একটি সংকলন প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি দ্বারা কৃষি শিক্ষার্থী, কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, গবেষক, সম্প্রসারণবিদ ও এনজিওকর্মী এবং সর্বোপরি কৃষকেরা উপকৃত হবেন।

ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়াড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া

মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণায় উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে জাতির উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় একটি দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা, যা জাতির সার্বিক এবং বিশেষ করে কৃষি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষি গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে খামার অর্থনীতির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অনন্য প্রতিষ্ঠান। সমাজের টেকসই উন্নয়নে কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে অবদান রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

লেখক: ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়