বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শিক্ষা কবজায় নিতে আমলাদের ছক

পরিচালনার মূল দায়িত্বে আমলাদের বসানোর উদ্যোগ। মতামত চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডে চিঠি। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এটা ভালো ফল দেবে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার তাঁদের।

 

রাহুল শর্মা, ঢাকা

দেশের বেসরকারি খাতের নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূল দায়িত্বে আমলাদের বসাতে চায় সরকার। প্রস্তাবিত ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা’য় এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে এরই মধ্যে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

এর আগে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন দিতে উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে আমলা বা অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের বসানোর উদ্যোগ ভালো ফল দেবে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে আছে। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা তৈরির অংশ হিসেবে এই মতামত চাওয়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

এই পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ভূমিকা ও প্রভাব বাড়ছে। গত ১ নভেম্বর প্রকাশিত ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে প্রাক্‌-প্রাথমিক স্তরের শতকরা ৫৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া প্রাথমিক স্তরের শতকরা ২৪ ভাগ, মাধ্যমিক স্তরের ৯৪ ভাগ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে শতকরা ৩৬ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতের।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৩৬ হাজার ৭১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪ হাজার ৮১৬টিই বেসরকারি।

‘ক্ষমতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে’
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। এখানে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার তাঁদের। সরকারি কর্মকর্তাদের বসালে এর ফল ভালো হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘দেশে আমলাদের ক্ষমতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে। সব জায়গায় আমলা বসাতে হবে— এই সংস্কৃতি থেকে বেরোতে না পারলে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা পুরোপুরি অনুভব করা যাবে না।’ তবে যোগ্য আমলা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।

আগের উদ্যোগ
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মনোনয়ন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) গত অক্টোবর মাসে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সে বিষয়টিও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডে চিঠি
২০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের সই করা এক চিঠিতে প্রস্তাবিত ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২২’ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই ‘প্রবিধানমালায় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব বা সমমানের কর্মকর্তা (পঞ্চম গ্রেডভুক্ত) এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে মনোনয়ন প্রদান করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সে বিষয়ে পত্র প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে মতামত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।’

চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবকেও।

এই চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

বেসরকারি উদ্যোগে ভাটা পড়ার শঙ্কা
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস হচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং কমিটির সভাপতি বাছাই হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এখন যদি সরকার আমলাদের এ পদে নিযুক্ত করে, তাহলে এর ফল খুব একটা ভালো হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁদের সহায়তায় পরিচালিত হয়। তাই কমিটির সদস্য কিংবা সভাপতি হওয়ার অধিকার তাঁদের আছে। এখন যদি তাঁদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাঁদের সহায়তা না-ও পাওয়া যেতে পারে।’

আমলারা সর্বকাজের কাজি হলেই সর্বনাশ
অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমলা ছাড়া দেশ চলবে না, এটা ঠিক। কিন্তু আমলারা যখন সর্বকাজের কাজি হয়ে যায়, তখনই দেশের সর্বনাশ হয়। পাকিস্তান এর জ্বলন্ত প্রমাণ। সুতরাং আমলারা আমলাদের কাজ করুক, শিক্ষাবিদেরা শিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক।’

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে শিক্ষাবিদদেরই রাখা উচিত। কেননা, শিক্ষাবিদেরা থাকলে শিক্ষার পরিবেশসহ সার্বিক সব বিষয়ের সঙ্গে তাঁরা সহজে মানিয়ে নিতে পারবেন।’

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান অবশ্য বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরই থাকা উচিত। এতে একধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ চর্চা রয়েছে।’ তবে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিও ইতিবাচক বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শিক্ষা কবজায় নিতে আমলাদের ছক

পরিচালনার মূল দায়িত্বে আমলাদের বসানোর উদ্যোগ। মতামত চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডে চিঠি। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এটা ভালো ফল দেবে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার তাঁদের।

 

রাহুল শর্মা, ঢাকা

দেশের বেসরকারি খাতের নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূল দায়িত্বে আমলাদের বসাতে চায় সরকার। প্রস্তাবিত ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা’য় এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে এরই মধ্যে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

এর আগে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন দিতে উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে আমলা বা অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের বসানোর উদ্যোগ ভালো ফল দেবে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে আছে। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা তৈরির অংশ হিসেবে এই মতামত চাওয়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

এই পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ভূমিকা ও প্রভাব বাড়ছে। গত ১ নভেম্বর প্রকাশিত ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে প্রাক্‌-প্রাথমিক স্তরের শতকরা ৫৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া প্রাথমিক স্তরের শতকরা ২৪ ভাগ, মাধ্যমিক স্তরের ৯৪ ভাগ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে শতকরা ৩৬ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতের।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৩৬ হাজার ৭১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪ হাজার ৮১৬টিই বেসরকারি।

‘ক্ষমতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে’
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। এখানে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার তাঁদের। সরকারি কর্মকর্তাদের বসালে এর ফল ভালো হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘দেশে আমলাদের ক্ষমতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে। সব জায়গায় আমলা বসাতে হবে— এই সংস্কৃতি থেকে বেরোতে না পারলে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা পুরোপুরি অনুভব করা যাবে না।’ তবে যোগ্য আমলা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।

আগের উদ্যোগ
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মনোনয়ন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) গত অক্টোবর মাসে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সে বিষয়টিও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডে চিঠি
২০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের সই করা এক চিঠিতে প্রস্তাবিত ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২২’ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই ‘প্রবিধানমালায় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব বা সমমানের কর্মকর্তা (পঞ্চম গ্রেডভুক্ত) এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে মনোনয়ন প্রদান করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সে বিষয়ে পত্র প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে মতামত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।’

চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবকেও।

এই চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

বেসরকারি উদ্যোগে ভাটা পড়ার শঙ্কা
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস হচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং কমিটির সভাপতি বাছাই হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এখন যদি সরকার আমলাদের এ পদে নিযুক্ত করে, তাহলে এর ফল খুব একটা ভালো হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁদের সহায়তায় পরিচালিত হয়। তাই কমিটির সদস্য কিংবা সভাপতি হওয়ার অধিকার তাঁদের আছে। এখন যদি তাঁদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাঁদের সহায়তা না-ও পাওয়া যেতে পারে।’

আমলারা সর্বকাজের কাজি হলেই সর্বনাশ
অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমলা ছাড়া দেশ চলবে না, এটা ঠিক। কিন্তু আমলারা যখন সর্বকাজের কাজি হয়ে যায়, তখনই দেশের সর্বনাশ হয়। পাকিস্তান এর জ্বলন্ত প্রমাণ। সুতরাং আমলারা আমলাদের কাজ করুক, শিক্ষাবিদেরা শিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক।’

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে শিক্ষাবিদদেরই রাখা উচিত। কেননা, শিক্ষাবিদেরা থাকলে শিক্ষার পরিবেশসহ সার্বিক সব বিষয়ের সঙ্গে তাঁরা সহজে মানিয়ে নিতে পারবেন।’

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান অবশ্য বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরই থাকা উচিত। এতে একধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ চর্চা রয়েছে।’ তবে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিও ইতিবাচক বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরবে।