৫০ হাজার কোটি টাকার কাজ পাঁচজনের কবজায়

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

রাহুল শর্মা, ঢাকা

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫টি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি সেখানে আছেন ১৭ জন। অথচ মাত্র ৫ জন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সব প্রকল্পে। অন্যরা করে যাচ্ছেন রুটিন কাজ।

সরকারি বিধান অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তার একটির বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসনও রয়েছে। কিন্তু বিধিবিধান ও অনুশাসনের তোয়াক্কা না করেই চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই অধিদপ্তর। পিছিয়ে নেই প্রধান প্রকৌশলীও। প্রধান প্রকৌশলীর কোনো প্রকল্পের দায়িত্বে না থাকার রীতি না থাকলেও তিনিও একটি প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এক কর্মকর্তার একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকাকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা সরকারি নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। এর ফলে এক দিকে সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্য দিকে অর্থের অপচয় হওয়ার সুযোগ থাকে। একই সঙ্গে আশঙ্কা থাকে অনিয়ম-দুর্নীতির।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনগুলোর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার এবং আসবাবপত্র সরবরাহের কাজ করে থাকে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, আইসিটি-সুবিধা সরবরাহের কাজও তারা করে থাকে।

বিধান কী বলে
সরকারি নিয়মে একাধিক প্রকল্পে এক কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগের সুযোগ নেই। ২০২২ সালের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি খাতে উন্নয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতিসংক্রান্ত নির্দেশিকার ২১.২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘এক কর্মকর্তাকে কেবল একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে’। ২০১৬ সালের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকায়ও একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে।

এ ছাড়া, এক ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পে দায়িত্ব না দিতে গত বছরের ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক শামীম আহম্মেদের সই করা চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, একজন কর্মকর্তার ১০-১৪টি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। চিঠিতে যেসব কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে পিডি আছেন, তাঁদের অতিরিক্ত প্রকল্পের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।

কার হাতে কয়টি প্রকল্প 
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রধান কার্যালয়ে বর্তমানে নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন সাতজন। এছাড়া প্রধান কার্যালয় ও অন্য জায়গা মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আছেন ১০ জন। যোগ্যতা অনুযায়ী এই ১৭ জন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পেতে পারেন। অথচ চলমান ২৫ প্রকল্পের মধ্যে ২৪টির নেতৃত্বে আছেন ৪ নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁরা হলেন—মো. আবুল হাসেম সরদার, মীর মুয়াজ্জেম হুসেন, মো. মাহাবুবর রহমান ও মো. রফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে আবুল হাসেম ১১টি প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন, যার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার বেশি। একই ভাবে মুয়াজ্জেম হুসেনের ৭টি প্রকল্পের ব্যয় ২৪ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা, মাহাবুবর রহমান ৪টিতে ব্যয় ৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা এবং রফিকুল ইসলামের ২টি ব্যয় ৫ হাজার ৬২০ কোটি। সব মিলিয়ে এই চার কর্মকর্তার হাতে আছে ৩৯ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার কাজ।

এ ছাড়া রীতি ভেঙে একটি প্রকল্পের পরিচালক হয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী শাহ্‌ নইমুল কাদের। ওই প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অথচ অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন আরও তিনজন। তাঁরা হলেন জয়নাল আবেদীন, সুমী দেবী ও এস এম সাফিন আহমেদ। তাঁরা কোনো প্রকল্পের দায়িত্ব পাননি। বিভাগের কিছু রুটিন কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া আরও ১০ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আছেন, তাঁরাও প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে পারতেন, কিন্তু পাননি।

এক কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চার নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তাঁদের মন্তব্য ‘অফিস দায়িত্ব দিলে আমরা কী করব?’

অধিদপ্তরের একাধিক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, এক কর্মকর্তার একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নিয়ে সম্প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। একই সঙ্গে তিনি প্রধান প্রকৌশলীকে প্রকল্পের দায়িত্ব ছাড়ারও নির্দেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সে নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি।

প্রধান প্রকৌশলীও প্রকল্পের দায়িত্বে
কাজ বণ্টনের নথিতে দেখা যায়, প্রধান প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের ‘বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। এ প্রকল্পের নকশাকারকও ছিলেন তিনি। এ প্রকল্পের অধীন খুলনার ডুমুরিয়ায় নির্মাণাধীন পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন হেলে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিষয়টির এখনো কোনো সমাধান হয়নি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তি অভিযোগ করেন প্রকল্পের মূল ‘প্রোটোটাইপ ডিজাইন’ (একই রকম নির্মাণের নকশা) থাকলেও ডিজাইন ছাড়াই নিময় বহির্ভূতভাবে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে কাজ শুরু করতে নতুন করে প্রতিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশার অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া নতুন নকশার অনুমোদন মেলে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের সোমবার তাঁর দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আপনার সঙ্গে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পারমিশন লাগবে।’

প্রকল্পে কী মধু?
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যত বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা যায়, তত বেশি অবৈধ অর্থের ভাগ-বাঁটোয়ারা পাওয়া যায়। এ জন্য কিছু কর্মকর্তা একের অধিক প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী হন। এ ছাড়া বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকলে পুরো ইইডি নিয়ন্ত্রণও সহজ হয়। সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় সবাই এদের তোয়াজ করে চলে।

খুঁটির জোর কোথায়?
ইইডি থেকে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে যে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁরা নিজেদের সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দেন। একজন নিজেকে সরকারের এক মন্ত্রীর বাল্যবন্ধু আরেকজন নিজেকে এক মন্ত্রীর ভাগনে বলে পরিচয় দেন। আর বাকি দুই নির্বাহী প্রকৌশলী মূলত যখন যে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের ‘আশীর্বাদেই’ কাজ করে যান।

জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে।’

৫০ হাজার কোটি টাকার কাজ পাঁচজনের কবজায়

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

রাহুল শর্মা, ঢাকা

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫টি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি সেখানে আছেন ১৭ জন। অথচ মাত্র ৫ জন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সব প্রকল্পে। অন্যরা করে যাচ্ছেন রুটিন কাজ।

সরকারি বিধান অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তার একটির বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসনও রয়েছে। কিন্তু বিধিবিধান ও অনুশাসনের তোয়াক্কা না করেই চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই অধিদপ্তর। পিছিয়ে নেই প্রধান প্রকৌশলীও। প্রধান প্রকৌশলীর কোনো প্রকল্পের দায়িত্বে না থাকার রীতি না থাকলেও তিনিও একটি প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এক কর্মকর্তার একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকাকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা সরকারি নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। এর ফলে এক দিকে সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্য দিকে অর্থের অপচয় হওয়ার সুযোগ থাকে। একই সঙ্গে আশঙ্কা থাকে অনিয়ম-দুর্নীতির।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনগুলোর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার এবং আসবাবপত্র সরবরাহের কাজ করে থাকে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, আইসিটি-সুবিধা সরবরাহের কাজও তারা করে থাকে।

বিধান কী বলে
সরকারি নিয়মে একাধিক প্রকল্পে এক কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগের সুযোগ নেই। ২০২২ সালের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি খাতে উন্নয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতিসংক্রান্ত নির্দেশিকার ২১.২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘এক কর্মকর্তাকে কেবল একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে’। ২০১৬ সালের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকায়ও একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে।

এ ছাড়া, এক ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পে দায়িত্ব না দিতে গত বছরের ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক শামীম আহম্মেদের সই করা চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, একজন কর্মকর্তার ১০-১৪টি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। চিঠিতে যেসব কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে পিডি আছেন, তাঁদের অতিরিক্ত প্রকল্পের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।

কার হাতে কয়টি প্রকল্প 
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রধান কার্যালয়ে বর্তমানে নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন সাতজন। এছাড়া প্রধান কার্যালয় ও অন্য জায়গা মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আছেন ১০ জন। যোগ্যতা অনুযায়ী এই ১৭ জন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পেতে পারেন। অথচ চলমান ২৫ প্রকল্পের মধ্যে ২৪টির নেতৃত্বে আছেন ৪ নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁরা হলেন—মো. আবুল হাসেম সরদার, মীর মুয়াজ্জেম হুসেন, মো. মাহাবুবর রহমান ও মো. রফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে আবুল হাসেম ১১টি প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন, যার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার বেশি। একই ভাবে মুয়াজ্জেম হুসেনের ৭টি প্রকল্পের ব্যয় ২৪ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা, মাহাবুবর রহমান ৪টিতে ব্যয় ৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা এবং রফিকুল ইসলামের ২টি ব্যয় ৫ হাজার ৬২০ কোটি। সব মিলিয়ে এই চার কর্মকর্তার হাতে আছে ৩৯ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার কাজ।

এ ছাড়া রীতি ভেঙে একটি প্রকল্পের পরিচালক হয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী শাহ্‌ নইমুল কাদের। ওই প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অথচ অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন আরও তিনজন। তাঁরা হলেন জয়নাল আবেদীন, সুমী দেবী ও এস এম সাফিন আহমেদ। তাঁরা কোনো প্রকল্পের দায়িত্ব পাননি। বিভাগের কিছু রুটিন কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া আরও ১০ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আছেন, তাঁরাও প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে পারতেন, কিন্তু পাননি।

এক কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চার নির্বাহী প্রকৌশলী। তাঁরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তাঁদের মন্তব্য ‘অফিস দায়িত্ব দিলে আমরা কী করব?’

অধিদপ্তরের একাধিক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, এক কর্মকর্তার একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নিয়ে সম্প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। একই সঙ্গে তিনি প্রধান প্রকৌশলীকে প্রকল্পের দায়িত্ব ছাড়ারও নির্দেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সে নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি।

প্রধান প্রকৌশলীও প্রকল্পের দায়িত্বে
কাজ বণ্টনের নথিতে দেখা যায়, প্রধান প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের ‘বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। এ প্রকল্পের নকশাকারকও ছিলেন তিনি। এ প্রকল্পের অধীন খুলনার ডুমুরিয়ায় নির্মাণাধীন পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন হেলে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিষয়টির এখনো কোনো সমাধান হয়নি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তি অভিযোগ করেন প্রকল্পের মূল ‘প্রোটোটাইপ ডিজাইন’ (একই রকম নির্মাণের নকশা) থাকলেও ডিজাইন ছাড়াই নিময় বহির্ভূতভাবে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে কাজ শুরু করতে নতুন করে প্রতিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশার অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া নতুন নকশার অনুমোদন মেলে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের সোমবার তাঁর দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আপনার সঙ্গে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পারমিশন লাগবে।’

প্রকল্পে কী মধু?
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যত বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা যায়, তত বেশি অবৈধ অর্থের ভাগ-বাঁটোয়ারা পাওয়া যায়। এ জন্য কিছু কর্মকর্তা একের অধিক প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী হন। এ ছাড়া বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকলে পুরো ইইডি নিয়ন্ত্রণও সহজ হয়। সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় সবাই এদের তোয়াজ করে চলে।

খুঁটির জোর কোথায়?
ইইডি থেকে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে যে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁরা নিজেদের সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দেন। একজন নিজেকে সরকারের এক মন্ত্রীর বাল্যবন্ধু আরেকজন নিজেকে এক মন্ত্রীর ভাগনে বলে পরিচয় দেন। আর বাকি দুই নির্বাহী প্রকৌশলী মূলত যখন যে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের ‘আশীর্বাদেই’ কাজ করে যান।

জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে।’