সাবেক উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গড়িমসি

  • খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আওয়াল শেখখুলনা ব্যুরো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধের পর ৫ জুন ওই কমিটি গঠন করা হয়। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগের ঘটনা তদন্ত করতে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাবেক অধ্যাপক বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ। কমিটির সদস্য সচিব ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. গোলাম দস্তগীর। সদস্য হিসেবে আছেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান। কমিটিকে অভিযোগের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ দিতে বলা হয়েছিল।

জানতে চাইলে ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘কী কারণে তদন্তে দেরি হচ্ছে, তা আমি বলতে পারব না। আপনারা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ককে জিজ্ঞাসা করেন।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কেউ কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। তারা অনেক আগে কিছু কাগজপত্র চেয়েছিলেন। তার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চেয়েছিলেন। পরে আর কিছু জানাননি। তারা তদন্ত করবেন কি না, তা বলতে পারছি না।’

অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। ২০১০ সালে ২৮ নভেম্বর তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক মো. শাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ সালের অক্টোবরে তার মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফায়েক উজ্জামান। ২০১৩ সালে ১০ জানুয়ারি তিনি পূর্ণ উপাচার্যের দায়িত্ব পান। সেখান থেকে পরপর দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু কাগজ দৈনিক বাংলার হাতে এসেছে। ওই কাগজ বিশ্লেষণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ালিউল হাসনাত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য সব যোগ্যতা ও শর্তের সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক পদে কমপক্ষে চার বছরের বাস্তব শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ওয়ালিউল হাসানাতকে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়ার সময় তা মানা হয়নি।

তার নিজ হাতে লেখা অধ্যাপক পদের আবেদনপত্রে দেখা যায়, সহযোগী অধ্যাপক পদে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা তিন বছর ছয় মাস সাত দিন। তিনি ১০ মাস ১৪ দিন লিয়েনে (শর্তসাপেক্ষে ছুটি) ছিলেন। ওই কার্যকালকে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখিয়ে তাকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্র স্ক্রুটিনিও (যাচাই-বাছাই) করা হয়নি।

ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ প্রক্রিয়াও হয়েছে খুব দ্রুততার সঙ্গে। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওই ডিসিপ্লিনের একটি মাত্র অধ্যাপক পদের বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের ১৮৯তম সভায় সেটি উপস্থাপন করে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। পরদিন ১ জানুয়ারি তিনি ডিসিপ্লিনে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের পর সেটি রেজ্যুলেশন করতে হয়। তারপর শিক্ষককে যোগদান করার জন্য চিঠি পাঠাতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কিছুই করা হয়নি। রেজ্যুলেশন করার আগেই ওয়ালিউল হাসানাত রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছেন।

জানতে চাইলে খুবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে দুদক থেকে চিঠি পাঠিয়ে ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগসংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়। ওই কাগজগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে কিছু অনিয়মের তথ্য দেখা যায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লিয়েনে থাকা সময়কে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা দেখানো হয়েছিল। অন্যদিকে রেজ্যুলেশন না করেই তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়।’

সাবেক উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গড়িমসি

  • খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আওয়াল শেখখুলনা ব্যুরো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধের পর ৫ জুন ওই কমিটি গঠন করা হয়। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগের ঘটনা তদন্ত করতে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাবেক অধ্যাপক বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ। কমিটির সদস্য সচিব ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. গোলাম দস্তগীর। সদস্য হিসেবে আছেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান। কমিটিকে অভিযোগের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ দিতে বলা হয়েছিল।

জানতে চাইলে ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘কী কারণে তদন্তে দেরি হচ্ছে, তা আমি বলতে পারব না। আপনারা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ককে জিজ্ঞাসা করেন।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কেউ কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। তারা অনেক আগে কিছু কাগজপত্র চেয়েছিলেন। তার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চেয়েছিলেন। পরে আর কিছু জানাননি। তারা তদন্ত করবেন কি না, তা বলতে পারছি না।’

অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। ২০১০ সালে ২৮ নভেম্বর তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক মো. শাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ সালের অক্টোবরে তার মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফায়েক উজ্জামান। ২০১৩ সালে ১০ জানুয়ারি তিনি পূর্ণ উপাচার্যের দায়িত্ব পান। সেখান থেকে পরপর দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু কাগজ দৈনিক বাংলার হাতে এসেছে। ওই কাগজ বিশ্লেষণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ালিউল হাসনাত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য সব যোগ্যতা ও শর্তের সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক পদে কমপক্ষে চার বছরের বাস্তব শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ওয়ালিউল হাসানাতকে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়ার সময় তা মানা হয়নি।

তার নিজ হাতে লেখা অধ্যাপক পদের আবেদনপত্রে দেখা যায়, সহযোগী অধ্যাপক পদে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা তিন বছর ছয় মাস সাত দিন। তিনি ১০ মাস ১৪ দিন লিয়েনে (শর্তসাপেক্ষে ছুটি) ছিলেন। ওই কার্যকালকে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখিয়ে তাকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্র স্ক্রুটিনিও (যাচাই-বাছাই) করা হয়নি।

ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ প্রক্রিয়াও হয়েছে খুব দ্রুততার সঙ্গে। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওই ডিসিপ্লিনের একটি মাত্র অধ্যাপক পদের বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের ১৮৯তম সভায় সেটি উপস্থাপন করে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। পরদিন ১ জানুয়ারি তিনি ডিসিপ্লিনে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের পর সেটি রেজ্যুলেশন করতে হয়। তারপর শিক্ষককে যোগদান করার জন্য চিঠি পাঠাতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কিছুই করা হয়নি। রেজ্যুলেশন করার আগেই ওয়ালিউল হাসানাত রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছেন।

জানতে চাইলে খুবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে দুদক থেকে চিঠি পাঠিয়ে ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগসংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়। ওই কাগজগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে কিছু অনিয়মের তথ্য দেখা যায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লিয়েনে থাকা সময়কে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা দেখানো হয়েছিল। অন্যদিকে রেজ্যুলেশন না করেই তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়।’