সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তাজিদ

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের অস্তিত্বের শুরু থেকেই যে কৌশলগত বিদ্যা জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশলবিদ্যা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেকগুলো শাখা রয়েছে, যার মধ্যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর মধ্যে একটিও বটে, যা বাংলায় পুরকৌশল নামে পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সভ্য সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ভবন, রাস্তা, রেলপথ ও সেতু থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, নৌবন্দর, খনি কিংবা ভূগর্ভস্থ টানেল—সবকিছুই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা নির্মিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, এমনকি বন্যা প্রশমনের কাজগুলোর জন্যও আমাদের আধুনিক সমাজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর নির্ভরশীল। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা এবং পেশাগত জীবনের বৈচিত্র্য। আর এ কারণেই পৃথিবীব্যাপী প্রকৌশলবিদ্যায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের বিষয় নিয়ে বলেছেন তিনি।

পড়ার যোগ্যতা কী
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন যাঁরা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিতের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। মাধ্যমিকে গ্রেড পদ্ধতিতে জিপিএ ৫.০০-এর মধ্যে জিপিএ ৪.০০ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজিতে আলাদাভাবে গ্রেড পয়েন্ট ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। বুয়েটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ ৫.০০-এর মধ্যে ৫.০০ এবং গণিতে ২০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ১৭০, পদার্থ ও রসায়ন বিষয়ে ৪০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৩৭২ পেতে হবে। উল্লেখ্য, যাঁরা গণিতে ও পদার্থবিদ্যার গতিবিদ্যায় ভালো তাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে থাকেন।

কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি হলো ৪ বছরের প্রোগ্রাম। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়ন করা যাবে, সেগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। এ ছাড়া  মিলিটারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এমআইএসটি) রয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও রয়েছে, যেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ানো হয়। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। শাবিপ্রবি অধিভুক্ত সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রংপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এর বাইরেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেকগুলো শাখা রয়েছে, যেগুলোতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তাঁর কাজের স্থান নির্ধারণ করে নেন। প্রধান শাখাগুলো হচ্ছে—স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কাঠামোগত প্রকৌশল। এ শাখাটিতে স্থাপনার নকশা, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা যোগাযোগ প্রকৌশল—এ শাখাটি পরিবহন নেটওয়ার্কের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলোর নকশা ও নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশল শাখায় নির্মাণ প্রকল্পে ভূতাত্ত্বিক গঠনের প্রভাব এবং কাঠামোগত ভিত্তির ডিজাইন ও স্থায়িত্ব নিয়ে কাজ করা হয়। পরিবেশগত প্রকৌশলে পরিবেশের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং এগুলো মোকাবিলায় কার্যকর ও দায়িত্বশীল সমাধান তৈরি করা এ শাখার কাজ। এ ছাড়া অন্য উল্লেখযোগ্য শাখা হচ্ছে—জরিপ কৌশল, পানিসম্পদ প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল ইত্যাদি।

চাকরির সুযোগ কেমন
বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি ও বেসরকারি—উভয় প্রতিষ্ঠানেই নিজেদের জন্য একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন ইত্যাদি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, সেনা, নৌ কিংবা বিমানবাহিনীতে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস, পাওয়ার সেক্টর (বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত, পেট্রোবাংলা) ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার জন্যও রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। চাইলে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নিজস্ব কনসালট্যান্সি ফার্মের মাধ্যমেও নিজেদের ক্যারিয়ারের বিকাশ ঘটাতে পারেন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের মধ্যে বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা কেমন
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শর্তগুলো পূরণ করেছে, এর সঙ্গে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য ভবিষ্যতে অবশ্যই দেশের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিকাশের প্রয়োজন হবে, যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করবে।পড়াশোনার খরচ কেমন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচে রয়েছে বিস্তর ফারাক। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের আয়ে চলে, যে কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্র। এখানে একজন শিক্ষার্থী গড়ে ৬০-৮০ হাজার টাকায় তাঁর চার বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে পারেন। চার বছরের সেমিস্টার ফি ও আনুষঙ্গিক পড়ালেখার উপকরণের ব্যয়মাত্র। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এটি কম বা বেশি হতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচের হার কয়েক গুণ বেশি।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
গবেষণা ও উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হওয়ার কারণে দেশের বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন; বিশেষ করে পেশাগত কিংবা গবেষণাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। বিদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে আশার কথা হচ্ছে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েই মেধাবীদের উচ্চশিক্ষায় আকৃষ্ট করার জন্য রয়েছে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এই স্কলারশিপগুলো কোর্স ফি বহনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত খরচের জন্য মাসিক স্টাইপেন্ডও দিয়ে থাকে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে আর্থিক চাপ কমানোর পাশাপাশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তাজিদ, সহকারী অধ্যাপক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তাজিদ

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের অস্তিত্বের শুরু থেকেই যে কৌশলগত বিদ্যা জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশলবিদ্যা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেকগুলো শাখা রয়েছে, যার মধ্যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর মধ্যে একটিও বটে, যা বাংলায় পুরকৌশল নামে পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সভ্য সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ভবন, রাস্তা, রেলপথ ও সেতু থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, নৌবন্দর, খনি কিংবা ভূগর্ভস্থ টানেল—সবকিছুই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা নির্মিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, এমনকি বন্যা প্রশমনের কাজগুলোর জন্যও আমাদের আধুনিক সমাজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর নির্ভরশীল। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা এবং পেশাগত জীবনের বৈচিত্র্য। আর এ কারণেই পৃথিবীব্যাপী প্রকৌশলবিদ্যায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের বিষয় নিয়ে বলেছেন তিনি।

পড়ার যোগ্যতা কী
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন যাঁরা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিতের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। মাধ্যমিকে গ্রেড পদ্ধতিতে জিপিএ ৫.০০-এর মধ্যে জিপিএ ৪.০০ এবং উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজিতে আলাদাভাবে গ্রেড পয়েন্ট ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। বুয়েটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ ৫.০০-এর মধ্যে ৫.০০ এবং গণিতে ২০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ১৭০, পদার্থ ও রসায়ন বিষয়ে ৪০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৩৭২ পেতে হবে। উল্লেখ্য, যাঁরা গণিতে ও পদার্থবিদ্যার গতিবিদ্যায় ভালো তাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে থাকেন।

কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি হলো ৪ বছরের প্রোগ্রাম। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়ন করা যাবে, সেগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। এ ছাড়া  মিলিটারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এমআইএসটি) রয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও রয়েছে, যেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ানো হয়। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। শাবিপ্রবি অধিভুক্ত সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রংপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এর বাইরেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেকগুলো শাখা রয়েছে, যেগুলোতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তাঁর কাজের স্থান নির্ধারণ করে নেন। প্রধান শাখাগুলো হচ্ছে—স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কাঠামোগত প্রকৌশল। এ শাখাটিতে স্থাপনার নকশা, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা যোগাযোগ প্রকৌশল—এ শাখাটি পরিবহন নেটওয়ার্কের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলোর নকশা ও নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশল শাখায় নির্মাণ প্রকল্পে ভূতাত্ত্বিক গঠনের প্রভাব এবং কাঠামোগত ভিত্তির ডিজাইন ও স্থায়িত্ব নিয়ে কাজ করা হয়। পরিবেশগত প্রকৌশলে পরিবেশের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং এগুলো মোকাবিলায় কার্যকর ও দায়িত্বশীল সমাধান তৈরি করা এ শাখার কাজ। এ ছাড়া অন্য উল্লেখযোগ্য শাখা হচ্ছে—জরিপ কৌশল, পানিসম্পদ প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল ইত্যাদি।

চাকরির সুযোগ কেমন
বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি ও বেসরকারি—উভয় প্রতিষ্ঠানেই নিজেদের জন্য একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন ইত্যাদি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, সেনা, নৌ কিংবা বিমানবাহিনীতে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস, পাওয়ার সেক্টর (বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত, পেট্রোবাংলা) ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার জন্যও রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। চাইলে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নিজস্ব কনসালট্যান্সি ফার্মের মাধ্যমেও নিজেদের ক্যারিয়ারের বিকাশ ঘটাতে পারেন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের মধ্যে বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা কেমন
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শর্তগুলো পূরণ করেছে, এর সঙ্গে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য ভবিষ্যতে অবশ্যই দেশের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিকাশের প্রয়োজন হবে, যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করবে।পড়াশোনার খরচ কেমন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচে রয়েছে বিস্তর ফারাক। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের আয়ে চলে, যে কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্র। এখানে একজন শিক্ষার্থী গড়ে ৬০-৮০ হাজার টাকায় তাঁর চার বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে পারেন। চার বছরের সেমিস্টার ফি ও আনুষঙ্গিক পড়ালেখার উপকরণের ব্যয়মাত্র। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এটি কম বা বেশি হতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচের হার কয়েক গুণ বেশি।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
গবেষণা ও উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হওয়ার কারণে দেশের বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন; বিশেষ করে পেশাগত কিংবা গবেষণাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। বিদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে আশার কথা হচ্ছে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েই মেধাবীদের উচ্চশিক্ষায় আকৃষ্ট করার জন্য রয়েছে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এই স্কলারশিপগুলো কোর্স ফি বহনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত খরচের জন্য মাসিক স্টাইপেন্ডও দিয়ে থাকে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে আর্থিক চাপ কমানোর পাশাপাশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তাজিদ, সহকারী অধ্যাপক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম