স্কুলে স্কুলে নিম্নমানের বই, ক্ষোভ-অসন্তোষ

আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের

বই উৎসব হয়ে গেলেও রাজধানীর পাশাপাশি জেলা-উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই গেছে নিম্নমানের বই। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। অনলাইন-অফলাইনে চলছে সমালোচনা। তাদের মতে এসব বই ছয় মাসের মধ্যেই ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, যারা নিম্নমানের বই ছাপিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়া প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে শ্রেণিকক্ষে শেখানোর ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভেতরেই অধিকাংশ শেখার কাজ করতে হবে; কিন্তু বেশিরভাগ বইয়ের লেখা অস্পষ্ট, আবার পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কালো কালির দাগ। তাদের আশঙ্কা, নিম্নমানের কাগজ দিয়ে তৈরি করায় এসব বইয়ে লেখালেখি করলে দু-তিন মাসে নষ্ট হয়ে যাবে। শুধু নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নয়, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেশিরভাগ বইয়ের অবস্থা খারাপ।

রাজধানীর ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফরোজা মুবাশশিরাহ বলেন, ‘সংকটের বছরে বই ছাপানোয় কিছুটা নিম্নমানের কাগজ হলেও হতো। কিন্তু আমার বোনের বইগুলো দেখলাম, এগুলো এতটাই নিম্নমানের যে, নিউজপ্রিন্ট বললে ভুল হবে না। এসব বই ছয় মাসের বেশি টিকবে বলে মনে হয় না।’

শিক্ষকরা বলছেন, স্কুলে এখন পর্যন্ত সব বই আসেনি। যেগুলো এসেছে বেশিরভাগ বইয়ের মান অত্যন্ত খারাপ। কয়েক মাসের মধ্যেই এসব বই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অনেক স্কুলই পুরোনো বই সংগ্রহে রাখছে। তবে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়া শ্রেণিগুলোতে এসব বই দিয়ে চালিয়ে নেওয়া কষ্টকর হবে।

রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, বই যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা ছাপানোর আগে আমাদের মনে থাকে না। এনসিটিবি অনেক প্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও নিম্নমানের বই দেওয়া হয়েছে। যারা এসব করেছে, এনসিটিবির উচিত তাদের খুঁজে বের করা।

জানা যায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে রিজার্ভ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। বন্ধ হয়ে যায় বিদেশ থেকে কাগজ ও কাগজের পাল্প আমদানি। গত মে মাসে বিনামূল্যে ছাপার পাঠ্যবইয়ের টেন্ডার হলেও, মাধ্যমিকের বইয়ের কার্যাদেশে দেরি করে এনসিটিবি। অক্টোবরে বই ছাপানো শুরু হয়। আর প্রাথমিকের বই ছাপানো শুরু হয় ডিসেম্বরে।

শুরুতে পরিস্থিতি ততটা অস্বাভাবিক না হলেও কাগজের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় সংকট ঘনীভূত হয়। কাগজের সংকটের সঙ্গে যোগ হয় কালির সংকট, লোডশেডিং; বেড়ে যায় ছাপা সরঞ্জামের দাম। এলসি করতে না পারায় দেশি কাগজের দাম বেড়ে যায় দেড় থেকে দ্বিগুণ। বই ছাপানোর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কাগজের উজ্জ্বলতায় ছাড় দেয় এনসিটিবি। করোনার কারণে রিসাইকেল কাগজ দেশে না থাকায় বাফার স্টকের পুরোনো বইও বিক্রি করে দেয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে বই উৎসবের পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর বই নিশ্চিতে এনসিটিবি কাগজের মানে ছাড় দিলেও, এই সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়। এনসিটিবি ৮৫ শতাংশের জায়গায় ৮২ শতাংশ উজ্জ্বলতা দিতে বললেও ৮০ শতাংশ বা ক্ষেত্রবিশেষে তারও কম উজ্জ্বলতার বই দেয় প্রেসগুলো। এসব বইয়ের কাগজ নিউজপ্রিন্টের মতোই। আগে কিনে রাখা কাগজ দিয়ে কিছু প্রেস ভালো মানের বই দিলেও, শেষের দিকের ছাপানো বইগুলো একদমই নিম্নমানের। সরেজমিন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের বই দেখা গেছে।

নিম্নমানের বই সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক লুৎফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। টেন্ডারে কী কী বিষয়ে প্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেগুলোর স্পষ্ট উল্লেখ আছে। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। গত বছর ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছি, এবারও হবে। তবে এবার হয়তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের একটু মানবিক হতে হবে। এবার কতটুকু কালো তালিকাভুক্ত করতে পারব জানি না। তবে, জরিমানা করা হবেই।

স্কুলে স্কুলে নিম্নমানের বই, ক্ষোভ-অসন্তোষ

আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের

বই উৎসব হয়ে গেলেও রাজধানীর পাশাপাশি জেলা-উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই গেছে নিম্নমানের বই। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। অনলাইন-অফলাইনে চলছে সমালোচনা। তাদের মতে এসব বই ছয় মাসের মধ্যেই ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, যারা নিম্নমানের বই ছাপিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়া প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে শ্রেণিকক্ষে শেখানোর ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভেতরেই অধিকাংশ শেখার কাজ করতে হবে; কিন্তু বেশিরভাগ বইয়ের লেখা অস্পষ্ট, আবার পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কালো কালির দাগ। তাদের আশঙ্কা, নিম্নমানের কাগজ দিয়ে তৈরি করায় এসব বইয়ে লেখালেখি করলে দু-তিন মাসে নষ্ট হয়ে যাবে। শুধু নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নয়, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেশিরভাগ বইয়ের অবস্থা খারাপ।

রাজধানীর ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফরোজা মুবাশশিরাহ বলেন, ‘সংকটের বছরে বই ছাপানোয় কিছুটা নিম্নমানের কাগজ হলেও হতো। কিন্তু আমার বোনের বইগুলো দেখলাম, এগুলো এতটাই নিম্নমানের যে, নিউজপ্রিন্ট বললে ভুল হবে না। এসব বই ছয় মাসের বেশি টিকবে বলে মনে হয় না।’

শিক্ষকরা বলছেন, স্কুলে এখন পর্যন্ত সব বই আসেনি। যেগুলো এসেছে বেশিরভাগ বইয়ের মান অত্যন্ত খারাপ। কয়েক মাসের মধ্যেই এসব বই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অনেক স্কুলই পুরোনো বই সংগ্রহে রাখছে। তবে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়া শ্রেণিগুলোতে এসব বই দিয়ে চালিয়ে নেওয়া কষ্টকর হবে।

রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, বই যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা ছাপানোর আগে আমাদের মনে থাকে না। এনসিটিবি অনেক প্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও নিম্নমানের বই দেওয়া হয়েছে। যারা এসব করেছে, এনসিটিবির উচিত তাদের খুঁজে বের করা।

জানা যায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে রিজার্ভ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। বন্ধ হয়ে যায় বিদেশ থেকে কাগজ ও কাগজের পাল্প আমদানি। গত মে মাসে বিনামূল্যে ছাপার পাঠ্যবইয়ের টেন্ডার হলেও, মাধ্যমিকের বইয়ের কার্যাদেশে দেরি করে এনসিটিবি। অক্টোবরে বই ছাপানো শুরু হয়। আর প্রাথমিকের বই ছাপানো শুরু হয় ডিসেম্বরে।

শুরুতে পরিস্থিতি ততটা অস্বাভাবিক না হলেও কাগজের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় সংকট ঘনীভূত হয়। কাগজের সংকটের সঙ্গে যোগ হয় কালির সংকট, লোডশেডিং; বেড়ে যায় ছাপা সরঞ্জামের দাম। এলসি করতে না পারায় দেশি কাগজের দাম বেড়ে যায় দেড় থেকে দ্বিগুণ। বই ছাপানোর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কাগজের উজ্জ্বলতায় ছাড় দেয় এনসিটিবি। করোনার কারণে রিসাইকেল কাগজ দেশে না থাকায় বাফার স্টকের পুরোনো বইও বিক্রি করে দেয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে বই উৎসবের পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর বই নিশ্চিতে এনসিটিবি কাগজের মানে ছাড় দিলেও, এই সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়। এনসিটিবি ৮৫ শতাংশের জায়গায় ৮২ শতাংশ উজ্জ্বলতা দিতে বললেও ৮০ শতাংশ বা ক্ষেত্রবিশেষে তারও কম উজ্জ্বলতার বই দেয় প্রেসগুলো। এসব বইয়ের কাগজ নিউজপ্রিন্টের মতোই। আগে কিনে রাখা কাগজ দিয়ে কিছু প্রেস ভালো মানের বই দিলেও, শেষের দিকের ছাপানো বইগুলো একদমই নিম্নমানের। সরেজমিন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের বই দেখা গেছে।

নিম্নমানের বই সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক লুৎফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। টেন্ডারে কী কী বিষয়ে প্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেগুলোর স্পষ্ট উল্লেখ আছে। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। গত বছর ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছি, এবারও হবে। তবে এবার হয়তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের একটু মানবিক হতে হবে। এবার কতটুকু কালো তালিকাভুক্ত করতে পারব জানি না। তবে, জরিমানা করা হবেই।