স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

ফারুক হোসেন, মেহেরপুর

মেহেরপুরে ১৪৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থ্য হলেও বাকি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে পান করছে আর্সেনিকযুক্ত পানি।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুরা দীর্ঘদিন এ পানি পান করলে চামড়া, কিডনি, লিভারসহ মস্তিস্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পুরো জেলায় বিদ্যালয়গুলোতে আর্সেনিকের পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬টি এবং ৩০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১২টিতে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। যেখানে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ৫০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা। তবে কোথাও কোথাও ৩০০ পিপিবি মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে।

তবে কিছু বিদ্যালয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও বেশ কিছু নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে আছে।
সদর উপজেলার আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসা জান্নাত, হূদি, শাফিন, অন্তর জানায়, দেড় কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসে তারা। বিদ্যালয়সহ আশপাশের কোথাও আর্সেনিকমুক্ত পানি না থাকায় জেনেশুনে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। বিদ্যালয়ে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হলেও তা বিকল হওয়ায় এখন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।

শোলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিকা ও সজীব বলে, ‘আমরা বাড়িতে নিরাপদ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করলেও বিদ্যালয়ে তা পাই না। সরকার থেকে যে নলকূপ দিয়েছিল তা অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলে লাল চিহ্নিত আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানিই পান করতে হয়। আমরা সব সময় আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকি।’

শোলমারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হোসেন জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ের নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়ায় ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ একটি আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ দিয়েছিল। এটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও নানা জায়গায় আবেদন করে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা হয়নি।

সদর উপজেলার শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ও হিতিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেনেশুনেই আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। বিদ্যালয় দুটিতে প্রায় সাড়ে ৩০০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে আছেন তাঁরা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলসহ বিভিন্ন এনজিওর কাছে আবেদন করেও সুফল পাননি।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (শিশু বিশেষজ্ঞ) কানিজ নাঈমা বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে চামড়া, কিডনি, লিভারের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি আঘাত হানতে পারে মস্তিস্কেও। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভুপেশ রঞ্জন রায় বলেন, নানা জায়গায় আবেদন করে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলগুলোর অন্তত অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা গেছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু বিদ্যালয়ের নলকূপে আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়ায় সেগুলোতে নতুন পানির উৎস ঠিক করতে বলা হয়েছে। সরকারি বা বিভিন্ন এনজিও থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে দ্রুত সমাধান করা হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ্‌ উদ্দিন বলেন, জেলার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা গেছে। বাকি বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে দ্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হবে।

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

ফারুক হোসেন, মেহেরপুর

মেহেরপুরে ১৪৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থ্য হলেও বাকি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে পান করছে আর্সেনিকযুক্ত পানি।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুরা দীর্ঘদিন এ পানি পান করলে চামড়া, কিডনি, লিভারসহ মস্তিস্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পুরো জেলায় বিদ্যালয়গুলোতে আর্সেনিকের পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬টি এবং ৩০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১২টিতে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। যেখানে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ৫০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা। তবে কোথাও কোথাও ৩০০ পিপিবি মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে।

তবে কিছু বিদ্যালয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও বেশ কিছু নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে আছে।
সদর উপজেলার আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসা জান্নাত, হূদি, শাফিন, অন্তর জানায়, দেড় কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসে তারা। বিদ্যালয়সহ আশপাশের কোথাও আর্সেনিকমুক্ত পানি না থাকায় জেনেশুনে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। বিদ্যালয়ে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হলেও তা বিকল হওয়ায় এখন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।

শোলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিকা ও সজীব বলে, ‘আমরা বাড়িতে নিরাপদ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করলেও বিদ্যালয়ে তা পাই না। সরকার থেকে যে নলকূপ দিয়েছিল তা অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলে লাল চিহ্নিত আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানিই পান করতে হয়। আমরা সব সময় আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকি।’

শোলমারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হোসেন জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ের নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়ায় ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ একটি আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ দিয়েছিল। এটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও নানা জায়গায় আবেদন করে আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা হয়নি।

সদর উপজেলার শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ও হিতিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেনেশুনেই আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। বিদ্যালয় দুটিতে প্রায় সাড়ে ৩০০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে আছেন তাঁরা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলসহ বিভিন্ন এনজিওর কাছে আবেদন করেও সুফল পাননি।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (শিশু বিশেষজ্ঞ) কানিজ নাঈমা বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে চামড়া, কিডনি, লিভারের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি আঘাত হানতে পারে মস্তিস্কেও। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভুপেশ রঞ্জন রায় বলেন, নানা জায়গায় আবেদন করে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলগুলোর অন্তত অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা গেছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু বিদ্যালয়ের নলকূপে আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়ায় সেগুলোতে নতুন পানির উৎস ঠিক করতে বলা হয়েছে। সরকারি বা বিভিন্ন এনজিও থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে দ্রুত সমাধান করা হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ্‌ উদ্দিন বলেন, জেলার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা গেছে। বাকি বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে দ্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হবে।