১১ মাস ধরে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক, বোর্ডের নির্দেশ মানছে না কমিটি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর নীলক্ষেত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীকে গত ১১ মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে তাকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিলেও যোগদান করতে দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো শিক্ষা বোর্ডে নিষ্পত্তি হওয়া পুরোনো মিথ্যা অভিযোগ নতুন করে তুলে বিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করার চেষ্টা চলছে। তিন মাসের বেশি শিক্ষককে বরখাস্ত না রাখতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতি, যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে রাজধানীর নীলক্ষেত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীকে বিদ্যালয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ম্যানেজিং কমিটির সভায় নামে-বেনামে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগকারীদের দিয়েই সেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পরে আরও কিছু অভিযোগ তুলে চলতি বছর ৯ মে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন। ঢাকা বোর্ডের তদন্তে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হওয়ায় এই শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ পুনর্বহাল দেওয়া হয়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আর্বিট্রেশন বোর্ড এই নির্দেশনা দিলেও এখন পর্যন্ত তাকে পুনর্বহাল করা হয়নি। এমপিওভুক্ত এই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে নীলক্ষেত হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ যোগদান করতে না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, জাল-জালিয়াতি আছে, নারীদের সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য আছে, অর্থ আত্মসাতের বিষয় আছে। এত খারাপ চরিত্রের মানুষকে দিয়ে প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আর্বিট্রেশন কমিটি পুনর্বহালের নির্দেশ থাকার পরও কেন পুনর্বহাল করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ডে রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর সংস্থা প্রধান, তার সঙ্গে আমরা বসছি। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ নিয়ে রিভিউয়ের জন্য বসছি।

বিদ্যালয়টি সংস্থা পরিচালিত কি না জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। তবে তিনি বলেন, সংস্থা প্রধানই গুরুত্বপূর্ণ। উনিই সভাপতি দেন।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, নীলক্ষেত হাই স্কুলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সভাপতি দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সম্মান জানিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইন ও বিধানে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি সংস্থা পরিচালিত না হলেও ম্যানেজিং কমিটি সংস্থা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করে। ম্যানেজিং কমিটির অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহারের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে এক নিয়োগ পরীক্ষায় নির্বাচিত প্রধান শিক্ষককে তাড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির মেয়াদ দুবছর হলেও গত তিন দফায় সভাপতি ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা ক্ষমতা আখরে ধরে রেখেছেন।

প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, কিছু মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে গত ১১ মাস ধরে আমাকে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমার পদে পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে কমিটির সভাপতিকে লিখিত আদেশ দিয়েছেন। আমাকে প্রধান শিক্ষকের পদে পুনর্বহালের অনুরোধ করে ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী সভাপতিকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানালেও তিনি আমলে নিচ্ছে না।

১১ মাস ধরে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক, বোর্ডের নির্দেশ মানছে না কমিটি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর নীলক্ষেত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীকে গত ১১ মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে তাকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিলেও যোগদান করতে দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো শিক্ষা বোর্ডে নিষ্পত্তি হওয়া পুরোনো মিথ্যা অভিযোগ নতুন করে তুলে বিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করার চেষ্টা চলছে। তিন মাসের বেশি শিক্ষককে বরখাস্ত না রাখতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতি, যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে রাজধানীর নীলক্ষেত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীকে বিদ্যালয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ম্যানেজিং কমিটির সভায় নামে-বেনামে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগকারীদের দিয়েই সেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পরে আরও কিছু অভিযোগ তুলে চলতি বছর ৯ মে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন। ঢাকা বোর্ডের তদন্তে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হওয়ায় এই শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ পুনর্বহাল দেওয়া হয়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আর্বিট্রেশন বোর্ড এই নির্দেশনা দিলেও এখন পর্যন্ত তাকে পুনর্বহাল করা হয়নি। এমপিওভুক্ত এই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে নীলক্ষেত হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ যোগদান করতে না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, জাল-জালিয়াতি আছে, নারীদের সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য আছে, অর্থ আত্মসাতের বিষয় আছে। এত খারাপ চরিত্রের মানুষকে দিয়ে প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আর্বিট্রেশন কমিটি পুনর্বহালের নির্দেশ থাকার পরও কেন পুনর্বহাল করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ডে রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর সংস্থা প্রধান, তার সঙ্গে আমরা বসছি। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ নিয়ে রিভিউয়ের জন্য বসছি।

বিদ্যালয়টি সংস্থা পরিচালিত কি না জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। তবে তিনি বলেন, সংস্থা প্রধানই গুরুত্বপূর্ণ। উনিই সভাপতি দেন।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, নীলক্ষেত হাই স্কুলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সভাপতি দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সম্মান জানিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইন ও বিধানে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি সংস্থা পরিচালিত না হলেও ম্যানেজিং কমিটি সংস্থা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করে। ম্যানেজিং কমিটির অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহারের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে এক নিয়োগ পরীক্ষায় নির্বাচিত প্রধান শিক্ষককে তাড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির মেয়াদ দুবছর হলেও গত তিন দফায় সভাপতি ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা ক্ষমতা আখরে ধরে রেখেছেন।

প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, কিছু মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে গত ১১ মাস ধরে আমাকে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমার পদে পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে কমিটির সভাপতিকে লিখিত আদেশ দিয়েছেন। আমাকে প্রধান শিক্ষকের পদে পুনর্বহালের অনুরোধ করে ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী সভাপতিকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানালেও তিনি আমলে নিচ্ছে না।