৩৩ বছর ধরে অচলাবস্থায় চবি ছাত্র সংসদ

রেফায়েত উল্যাহ রুপক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ। 

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। প্রতিষ্ঠার পরপরই শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় চাকসুর প্রথম নির্বাচন। প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছরে মাত্র ৬ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৩৩ বছর কেটে গেলেও এ নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষের। ফলে অচলাবস্থায় আছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এই সংসদটি।

শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা, শিক্ষার মান, অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব প্রদান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অবদান রাখতে সক্ষম ব্যক্তিত্ব তৈরির মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল চাকসু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে অন্যান্য সংগঠনগুলোর নির্বাচন আয়োজন করলেও চাকসু নির্বাচনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এবং ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকারগুলো যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর ও আদায় করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী হাসিবুর রহমান তুর্জয় বলেন, চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ পাচ্ছি না। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। চাকসু নির্বাচন হলে আমরা আমাদের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারতাম, যারা আমাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী টিটু ধর আবির বলেন, চাকসু না থাকায় আমরা আমাদের অধিকারগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারছি না। শাটলে বগি স্বল্পতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা তুলে ধরার মতো কোনো প্রতিনিধি না থাকায়, প্রশাসনের কাছে আমাদের কথাগুলো বলতে পারছি না।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, আমরা বারবার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, চাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য কিন্তুু প্রশাসন কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমরা মনে করি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে চাকসু নির্বাচন হওয়া জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক বলেন, আমরা অনেক বার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি চাকসু নির্বাচনের জন্য কিন্তুু এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চাকসু মূলত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে তাদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরতে পারতো।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমি মনে করি নিয়মিত চাকসু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক যে কোনো দাবি আদায়ে আমি এবং শিক্ষক সমিতি পাশে আছি।

চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, এটা একমাত্র উপাচার্য মহোদয়ের এখতিয়ার। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

তবে এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

৩৩ বছর ধরে অচলাবস্থায় চবি ছাত্র সংসদ

রেফায়েত উল্যাহ রুপক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ। 

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। প্রতিষ্ঠার পরপরই শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় চাকসুর প্রথম নির্বাচন। প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছরে মাত্র ৬ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৩৩ বছর কেটে গেলেও এ নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষের। ফলে অচলাবস্থায় আছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এই সংসদটি।

শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা, শিক্ষার মান, অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব প্রদান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অবদান রাখতে সক্ষম ব্যক্তিত্ব তৈরির মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল চাকসু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে অন্যান্য সংগঠনগুলোর নির্বাচন আয়োজন করলেও চাকসু নির্বাচনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এবং ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকারগুলো যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর ও আদায় করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী হাসিবুর রহমান তুর্জয় বলেন, চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ পাচ্ছি না। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। চাকসু নির্বাচন হলে আমরা আমাদের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারতাম, যারা আমাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী টিটু ধর আবির বলেন, চাকসু না থাকায় আমরা আমাদের অধিকারগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারছি না। শাটলে বগি স্বল্পতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা তুলে ধরার মতো কোনো প্রতিনিধি না থাকায়, প্রশাসনের কাছে আমাদের কথাগুলো বলতে পারছি না।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, আমরা বারবার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, চাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য কিন্তুু প্রশাসন কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমরা মনে করি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে চাকসু নির্বাচন হওয়া জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক বলেন, আমরা অনেক বার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি চাকসু নির্বাচনের জন্য কিন্তুু এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চাকসু মূলত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে তাদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরতে পারতো।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমি মনে করি নিয়মিত চাকসু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক যে কোনো দাবি আদায়ে আমি এবং শিক্ষক সমিতি পাশে আছি।

চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, এটা একমাত্র উপাচার্য মহোদয়ের এখতিয়ার। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

তবে এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।