৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা: গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা

নূর ইসরাত জাহান তাজিন

নূর ইসরাত জাহান তাজিন

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে যাঁরা উত্তীর্ণ হন, তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিসিএস লিখিত প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

আজ থাকছে শেষ পর্ব:
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার মোট ৯০০ নম্বরের মধ্যে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার জন্য বরাদ্দকৃত নম্বর হলো ১০০ (গাণিতিক যুক্তি-৫০ ও মানসিক দক্ষতা-৫০)। প্রতি বিষয়ের জন্য পৃথক পরীক্ষা হয়। এ ক্ষেত্রে গাণিতিক যুক্তি পরীক্ষার সময় হলো ২ ঘণ্টা। এখানে সাধারণত ১২টি প্রশ্নের মধ্যে ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নে আবার একাধিক অংশও থাকতে পারে। নম্বর বণ্টন একেক প্রশ্নের জন্য একেক রকম। অপরদিকে মানসিক দক্ষতা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় ১ ঘণ্টা। এ সময়ে ৫০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের শুদ্ধ উত্তরের জন্য পরীক্ষার্থী ১ নম্বর পাবেন। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে।

গাণিতিক যুক্তি (৫০ নম্বর) 
গাণিতিক যুক্তি অংশের সিলেবাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

  • গুরুত্বপূর্ণ (সবাই চেষ্টা করলে পারবে এমন টপিক) -সরল ও যৌগিক মুনাফা, শতকরা, ঐকিক নিয়ম (একটা প্রশ্ন থাকেই), মান নির্ণয়, উৎপাদক, সমীকরণের সমাধান, সূচক, লগারিদম, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতির দূরত্ব ও উচ্চতাসংক্রান্ত অঙ্ক ইত্যাদি। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী অল্প অনুশীলনের মাধ্যমে সহজেই এ টপিকগুলো থেকে উত্তর করতে পারবে। আর এ টপিকগুলো থেকে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ প্রশ্ন আসে। যারা গণিতে দুর্বল, তারা এ অধ্যায়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে পারে।
  • বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, ধারা, সেট, ভেনচিত্র, পরিমিতি—এ অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ; তবে এসব অধ্যায় থেকে উত্তর করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর বেসিক ক্লিয়ার থাকতে হবে। উল্লিখিত অধ্যায়গুলো সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তর করা সহজ হয়। এ টপিকগুলো থেকে ৩০-৪০ ভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে।
  • কম গুরুত্বপূর্ণ তবে পরীক্ষায় আসে এমন কিছু টপিক হলো ত্রিকোণমিতিক সমাধান ও অসমতা। গণিতে দুর্বল পরীক্ষার্থীরা এসব অধ্যায় বাদ দিতে পারে।
  • বিগত বছরের প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করলে জ্যামিতি অংশের উত্তর করা সহজ হয়।
  • বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির সরলরেখা অধ্যায়গুলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির যেকোনো বই আর গণিতের বাকি সব টপিক নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বই থেকে অনুশীলন করলেই হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সিলেবাসে উল্লিখিত অধ্যায় ধরে অনুশীলন করতে হবে।
  • পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা বা ১০-১৫টি অঙ্ক ভালোভাবে অনুশীলন করা যেতে পারে।
  • গণিতে ভালো করতে হলে খাতায় বারবার অনুশীলন করতে হবে। বিগত প্রশ্নগুলো অবশ্যই টপিক ধরে অনুশীলন করতে হবে; বিশেষ করে পরীক্ষার আগমুহূর্তে বিগত প্রশ্নগুলোই বারবার রিভিশন দেওয়া যেতে পারে।
  • সব সূত্র টপিকভিত্তিক একসঙ্গে লিখে নোট করতে হবে এবং প্রায়ই রিভিশন দিতে হবে।
  • পরীক্ষার হলে সহজ ও জানা ম্যাথ দিয়ে উত্তর শুরু করতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সেটা নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। এতে মানসিক চাপ বাড়ে ও জানা অঙ্কও ভুল হয়।
  • পরীক্ষার প্রথম ঘণ্টায় ৩০ ও দ্বিতীয় ঘণ্টায় বাকি ২০ নম্বরের উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে।

মানসিক দক্ষতা (৫০ নম্বর)

  • মানসিক দক্ষতা অংশের প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই বিগত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ ভালোভাবে বুঝে অনুশীলন করতে হবে।
  • এ বিষয়ের বিগত প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করলে দেখা যায়, ঘড়ি, দিন ও পঞ্জিকা, ত্রিভুজ/চতুর্ভুজ গণনা, কোডিং-ডিকোডিং, সিরিজ, যান্ত্রিক দক্ষতা, পানিতে ও আয়নায় প্রতিবিম্ব, সম্পর্ক নির্ণয়, দিক নির্ণয়, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, বানান প্রভৃতি টপিক থেকে প্রায় প্রতি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। এই টপিকগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। এ জন্য যেকোনো মানসিক দক্ষতার বই থেকে টপিকভিত্তিক নিয়মিত অনুশীলনই যথেষ্ট। উল্লেখ্য, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ এবং বানানের ক্ষেত্রে বাংলা ২য় পত্রের প্রস্তুতি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • উপস্থিত জ্ঞানভিত্তিক কিছু প্রশ্ন থাকে, যেগুলো কমনসেন্স কাজে লাগিয়ে উত্তর করতে হবে।
  • সাধারণত দেখা যায়, মানসিক দক্ষতার অংশের জন্য কম প্রস্তুতি গ্রহণ ও অনুশীলন করার ফলে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এ বিষয়ে খারাপ করে। নিয়মিত অনুশীলন করলে এ বিষয়ে সহজেই ৪৫-৫০ নম্বর তোলা যায়। যারা গাণিতিক যুক্তি অংশে দুর্বল, তারা মানসিক দক্ষতায় ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে সার্বিকভাবে ভালো নম্বর পেতে পারে।

সবশেষে পরীক্ষার হলে নেগেটিভ মার্কিং ও সময়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।

নূর ইসরাত জাহান তাজিন, ৪০তম বিসিএস, শিক্ষা ক্যাডার (ইংরেজি) মেধাক্রম-১

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা: গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা

নূর ইসরাত জাহান তাজিন

নূর ইসরাত জাহান তাজিন

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে যাঁরা উত্তীর্ণ হন, তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিসিএস লিখিত প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

আজ থাকছে শেষ পর্ব:
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার মোট ৯০০ নম্বরের মধ্যে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার জন্য বরাদ্দকৃত নম্বর হলো ১০০ (গাণিতিক যুক্তি-৫০ ও মানসিক দক্ষতা-৫০)। প্রতি বিষয়ের জন্য পৃথক পরীক্ষা হয়। এ ক্ষেত্রে গাণিতিক যুক্তি পরীক্ষার সময় হলো ২ ঘণ্টা। এখানে সাধারণত ১২টি প্রশ্নের মধ্যে ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নে আবার একাধিক অংশও থাকতে পারে। নম্বর বণ্টন একেক প্রশ্নের জন্য একেক রকম। অপরদিকে মানসিক দক্ষতা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় ১ ঘণ্টা। এ সময়ে ৫০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের শুদ্ধ উত্তরের জন্য পরীক্ষার্থী ১ নম্বর পাবেন। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে।

গাণিতিক যুক্তি (৫০ নম্বর) 
গাণিতিক যুক্তি অংশের সিলেবাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

  • গুরুত্বপূর্ণ (সবাই চেষ্টা করলে পারবে এমন টপিক) -সরল ও যৌগিক মুনাফা, শতকরা, ঐকিক নিয়ম (একটা প্রশ্ন থাকেই), মান নির্ণয়, উৎপাদক, সমীকরণের সমাধান, সূচক, লগারিদম, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতির দূরত্ব ও উচ্চতাসংক্রান্ত অঙ্ক ইত্যাদি। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী অল্প অনুশীলনের মাধ্যমে সহজেই এ টপিকগুলো থেকে উত্তর করতে পারবে। আর এ টপিকগুলো থেকে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ প্রশ্ন আসে। যারা গণিতে দুর্বল, তারা এ অধ্যায়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে পারে।
  • বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, ধারা, সেট, ভেনচিত্র, পরিমিতি—এ অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ; তবে এসব অধ্যায় থেকে উত্তর করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর বেসিক ক্লিয়ার থাকতে হবে। উল্লিখিত অধ্যায়গুলো সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তর করা সহজ হয়। এ টপিকগুলো থেকে ৩০-৪০ ভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে।
  • কম গুরুত্বপূর্ণ তবে পরীক্ষায় আসে এমন কিছু টপিক হলো ত্রিকোণমিতিক সমাধান ও অসমতা। গণিতে দুর্বল পরীক্ষার্থীরা এসব অধ্যায় বাদ দিতে পারে।
  • বিগত বছরের প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করলে জ্যামিতি অংশের উত্তর করা সহজ হয়।
  • বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির সরলরেখা অধ্যায়গুলো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির যেকোনো বই আর গণিতের বাকি সব টপিক নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বই থেকে অনুশীলন করলেই হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সিলেবাসে উল্লিখিত অধ্যায় ধরে অনুশীলন করতে হবে।
  • পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা বা ১০-১৫টি অঙ্ক ভালোভাবে অনুশীলন করা যেতে পারে।
  • গণিতে ভালো করতে হলে খাতায় বারবার অনুশীলন করতে হবে। বিগত প্রশ্নগুলো অবশ্যই টপিক ধরে অনুশীলন করতে হবে; বিশেষ করে পরীক্ষার আগমুহূর্তে বিগত প্রশ্নগুলোই বারবার রিভিশন দেওয়া যেতে পারে।
  • সব সূত্র টপিকভিত্তিক একসঙ্গে লিখে নোট করতে হবে এবং প্রায়ই রিভিশন দিতে হবে।
  • পরীক্ষার হলে সহজ ও জানা ম্যাথ দিয়ে উত্তর শুরু করতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সেটা নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। এতে মানসিক চাপ বাড়ে ও জানা অঙ্কও ভুল হয়।
  • পরীক্ষার প্রথম ঘণ্টায় ৩০ ও দ্বিতীয় ঘণ্টায় বাকি ২০ নম্বরের উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে।

মানসিক দক্ষতা (৫০ নম্বর)

  • মানসিক দক্ষতা অংশের প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই বিগত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ ভালোভাবে বুঝে অনুশীলন করতে হবে।
  • এ বিষয়ের বিগত প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করলে দেখা যায়, ঘড়ি, দিন ও পঞ্জিকা, ত্রিভুজ/চতুর্ভুজ গণনা, কোডিং-ডিকোডিং, সিরিজ, যান্ত্রিক দক্ষতা, পানিতে ও আয়নায় প্রতিবিম্ব, সম্পর্ক নির্ণয়, দিক নির্ণয়, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, বানান প্রভৃতি টপিক থেকে প্রায় প্রতি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। এই টপিকগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। এ জন্য যেকোনো মানসিক দক্ষতার বই থেকে টপিকভিত্তিক নিয়মিত অনুশীলনই যথেষ্ট। উল্লেখ্য, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ এবং বানানের ক্ষেত্রে বাংলা ২য় পত্রের প্রস্তুতি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • উপস্থিত জ্ঞানভিত্তিক কিছু প্রশ্ন থাকে, যেগুলো কমনসেন্স কাজে লাগিয়ে উত্তর করতে হবে।
  • সাধারণত দেখা যায়, মানসিক দক্ষতার অংশের জন্য কম প্রস্তুতি গ্রহণ ও অনুশীলন করার ফলে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এ বিষয়ে খারাপ করে। নিয়মিত অনুশীলন করলে এ বিষয়ে সহজেই ৪৫-৫০ নম্বর তোলা যায়। যারা গাণিতিক যুক্তি অংশে দুর্বল, তারা মানসিক দক্ষতায় ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে সার্বিকভাবে ভালো নম্বর পেতে পারে।

সবশেষে পরীক্ষার হলে নেগেটিভ মার্কিং ও সময়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।

নূর ইসরাত জাহান তাজিন, ৪০তম বিসিএস, শিক্ষা ক্যাডার (ইংরেজি) মেধাক্রম-১

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম