৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি

মতিয়ার রহমান

ছবি: সংগৃহীত

৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদন শেষ হলো গত ৩১ ডিসেম্বর। এবার প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। এতে ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা এই তিন ধাপে হয় বিসিএস। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০টি বিষয়ের ওপর ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। এতে প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর ও ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুলের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা যাবে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মোট ৩৫ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যাকরণ অংশে ১৫ ও বাংলা সাহিত্য অংশে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

  • ব্যাকরণ: বাংলা ব্যাকরণ অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বই ও সঙ্গে বাজারের যেকোনো একটা গাইড বই পড়লে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন শব্দের শ্রেণিবিভাগ, শব্দভান্ডার ও উৎপত্তি, ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়, ধ্বনি পরিবর্তন, সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, ধাতু, পদ-প্রকরণ, বাগ্‌ধারা, বানান, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এবং পারিভাষিক শব্দ ভালোভাবে দেখে যেতে হবে।
  • বাংলা সাহিত্য: এখানে তিনটি অংশে প্রস্তুতি নিতে হয়–
  • প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০): চর্যাপদ এখানে প্রধান আলোচ্য বিষয়। এখান থেকে প্রতি বিসিএসেই প্রায় ২-৩টি প্রশ্ন থাকে।
  • মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০): মধ্যযুগের মধ্যে মৌলিক সাহিত্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মঙ্গলকাব্য, জীবনী সাহিত্য, নাথসাহিত্য, মর্সিয়া সাহিত্য, লোকসাহিত্য, অনুবাদ সাহিত্য, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য, অবক্ষয় যুগ ও অন্ধকার যুগ ভালোভাবে পড়ে গেলে ৫-৬টি প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। n  আধুনিক যুগ (১৮০১-বর্তমান): আধুনিক যুগের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেখান থেকে কিছু প্রশ্ন হয়। যেমন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, ইয়ংবেঙ্গল, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমি। কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে পিএসসির নির্বাচিত ১১ জন কবি-সাহিত্যিক সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যেতে হবে। তাঁরা হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মীর মশাররফ হোসেন, দীনবন্ধু মিত্র, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, কায়কোবাদ ও ফররুখ আহমেদ। এ ছাড়া ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জহির রায়হান ও বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব সম্পর্কে জেনে যেতে হবে। বিভিন্ন বাংলা সংবাদপত্রের সম্পাদক, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রচনা ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ে যাওয়া উচিত।

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য অংশে মোট ৩৫ নম্বর থাকে। যেখানে Language (গ্রামার) অংশে ২০ মার্ক ও Literature অংশে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

  • গ্রামার অংশ: গ্রামার অংশ থেকে প্রায় মিডিয়াম ধরনের প্রশ্ন করা হয়। Parts of Speech-এর ৮টি টপিকস Noun, Pronoun, Adjective, Verb, Adverb, Preposition, Conjunction & Interjection থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। এ ছাড়া Gender, Number, Determiner, Sentence Idioms & Phrases, Clauses, Appropriate Preposition, Vocabulary (Synonyms & Antonyms), Spellings Suffixes-Prefixes, Voice, Transformations of Sentence & Correction etc.
  • গ্রামারের এই টপিকগুলো ভালো করে অনুশীলন করে গেলে প্রায় প্রতিটির উত্তর করা যায় এবং ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে।
    ইংরেজি সাহিত্যের ১৫ নম্বর: এই অংশের জন্য ইংরেজি সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সাল ও এলিজাবেথ পিরিয়ড়ের পর থেকে সাহিত্যকর্মগুলো ভালোভাবে পড়ে যাওয়া উচিত। তাঁদের মধ্যে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য কিছু লেখকের নাম দেওয়া হলো, যাঁদের থেকে প্রায়ই প্রশ্ন থাকে। যেমন William Shakespeare, Cristopher Marlowe, Ben Jonson, Jon Milton, Jonathon Swift, Alexander Pope, William Wordsworth, S. T. Coleridge, P B Shelley, John Keats, Charles Dickens, Alferd Lord Tennyson, Robert Browning, George Bernard Shaw, W B Yeats, T S Eliot & Ernest Hemingway. এ ছাড়া ইংরেজি সাহিত্যের কিছু Literary Terms থাকে, সেগুলো থেকে কিছু প্রশ্ন আসে। যেমন Simile, Allegory, Blank Verse, Climax, Comic, Aside, Epitaph, Metaphor, Soliloquy, Sonnet, Irony, Elegy etc সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা বিস্তারিত জেনে যেতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংবিধান, কৃষিসম্পদ, জনসংখ্যা, শিল্প ও বাণিজ্য, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা, জাতীয় অর্জন, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ও সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারণা নিয়ে যেতে হবে। নবম-দশম শ্রেণির আগের সিলেবাসের বিজ্ঞান বিভাগের সামাজিক বিজ্ঞান অথবা বর্তমান সিলেবাসের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই দেখতে হবে। সংবিধান, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি সুশাসন বইটির দ্বিতীয় পত্র এবং সঙ্গে একটি গাইড বই পড়ে যেতে পারেন।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য বিশ্বের ৭টি মহাদেশের ভূরাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও অঞ্চলগুলোর অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সীমারেখা, যুদ্ধ ও বিপ্লব, বিভিন্ন চুক্তি, বিভিন্ন দেশের আইনসভা, রাজধানী, মুদ্রা, বিভিন্ন প্রণালি, সাগর-মহাসাগর, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন (জাতিপুঞ্জ, জাতিসংঘ, WHO, UNDP, ILO, WORLD BANK, IMF, WTO, OIC, GCC, AU, Arab Legue, BRICS, OPEC, ASEAN, SAARC, BIMSTEC, RCEP, IDB, ADB, Redcross International etc) প্রতিষ্ঠানগুলোর হেড অফিসের অবস্থান, কার্যাবলি, গঠন ও সদস্য ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যেতে হবে।

সাধারণ বিজ্ঞান
সাধারণ বিজ্ঞান অংশে বিসিএস প্রিলিমিনারির জন্য ১৫ নম্বর থাকে। এখানে সচরাচর বিগত সালের বিসিএস ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলোই রিপিট হয়। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখানে কম সময় দিলেও ভালো করতে পারেন। তবে বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অষ্টম শ্রেণির আগের সিলেবাসের সাধারণ বিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞান বই থেকে বিসিএস সিলেবাস-সম্পর্কিত চ্যাপ্টারগুলো পড়ে গেলে প্রিলিমিনারি ও লিখিত উভয়ই পরীক্ষার জন্য বেশ ভালো ফল দেবে। এ ছাড়া বাজার থেকে যেকোনো একটি ভালো মানের গাইড বই সংগ্রহ করে পড়া উচিত।

ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বই থেকে মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী, পৃথিবীর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই চ্যাপ্টারগুলো ভালো করে পড়তে হবে। এসব চ্যাপ্টার থেকে হুবহু বিভিন্ন প্রশ্ন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মানচিত্র থেকে বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমানা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন নিয়ামক ও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যেতে হবে।

গাণিতিক যুক্তি
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে গাণিতিক যুক্তি অংশে ১৫ নম্বর থাকে। এই অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারগুলো, যেমন বাস্তব সংখ্যা, সেট, বীজ গাণিতিক সূত্রাবলি, বহুপদী উৎপাদক, সূচক ও লগারিদম, অনুপাত-সমানুপাত, সমীকরণ, সমান্তর ও গুণোত্তর অনুক্রম ও ধারা, রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ ভালো করে দেখে যেতে হবে। পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বই থেকে সরল ও দ্বিপদী অসমতা, সম্ভাব্যতা, সেট ও সূচক এবং লগারিদম দেখতে হবে। এ ছাড়া কোনো গাইড বই থেকে লাভ-ক্ষতি, লসাগু-গসাগু, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফাবিষয়ক চ্যাপ্টারগুলো ভালো করে দেখতে হবে।

মানসিক দক্ষতা
এখানে প্রিলিমিনারিতে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এই অংশে সাধারণত বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো রিপিট আসে। বাজারের গাইড বই থেকে গত বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন অনুশীলন ও নিজস্ব কমনসেন্স কাজে লাগালে ভালো করা যায়।

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এখানে কম্পিউটার অংশের জন্য ১০ ও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য ৫ নম্বর থাকে। কম্পিউটার অংশের জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ড. মাহবুবুর রহমানের কম্পিউটার বইটি এবং তথ্যপ্রযুক্তি অংশের জন্য প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কম্পিউটার বইটা সংগ্রহ করে পড়া উচিত। পাশাপাশি একটা গাইড বই থেকে বিগত বছরের বিসিএস, ব্যাংক ও নন-ক্যাডার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করে গেলে অনেক উত্তর কমন পাওয়া যায়।

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
এই অংশে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ অংশে ভালো করার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মোজাম্মেল হক স্যারের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের সিলেবাস-সম্পর্কিত চ্যাপ্টারগুলো, যেমন সুশাসন, মূল্যবোধ, আইন স্বাধীনতা ও সাম্য, ই-গভর্ন্যান্স ও সুশাসন, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার। এগুলো ভালোভাবে পড়ে যেতে হবে। এ ছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তির বিভিন্ন উক্তি ও বিগত প্রশ্নগুলো পড়ে গেলে ভালো করা যায়।

লেখক: ৪০তম বিসিএস, শিক্ষা ক্যাডার (হিসাববিজ্ঞান) মেধাক্রম-০২

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি

মতিয়ার রহমান

ছবি: সংগৃহীত

৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদন শেষ হলো গত ৩১ ডিসেম্বর। এবার প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। এতে ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা এই তিন ধাপে হয় বিসিএস। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০টি বিষয়ের ওপর ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। এতে প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর ও ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুলের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা যাবে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মোট ৩৫ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যাকরণ অংশে ১৫ ও বাংলা সাহিত্য অংশে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

  • ব্যাকরণ: বাংলা ব্যাকরণ অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বই ও সঙ্গে বাজারের যেকোনো একটা গাইড বই পড়লে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন শব্দের শ্রেণিবিভাগ, শব্দভান্ডার ও উৎপত্তি, ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়, ধ্বনি পরিবর্তন, সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, ধাতু, পদ-প্রকরণ, বাগ্‌ধারা, বানান, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এবং পারিভাষিক শব্দ ভালোভাবে দেখে যেতে হবে।
  • বাংলা সাহিত্য: এখানে তিনটি অংশে প্রস্তুতি নিতে হয়–
  • প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০): চর্যাপদ এখানে প্রধান আলোচ্য বিষয়। এখান থেকে প্রতি বিসিএসেই প্রায় ২-৩টি প্রশ্ন থাকে।
  • মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০): মধ্যযুগের মধ্যে মৌলিক সাহিত্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মঙ্গলকাব্য, জীবনী সাহিত্য, নাথসাহিত্য, মর্সিয়া সাহিত্য, লোকসাহিত্য, অনুবাদ সাহিত্য, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য, অবক্ষয় যুগ ও অন্ধকার যুগ ভালোভাবে পড়ে গেলে ৫-৬টি প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। n  আধুনিক যুগ (১৮০১-বর্তমান): আধুনিক যুগের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেখান থেকে কিছু প্রশ্ন হয়। যেমন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, ইয়ংবেঙ্গল, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমি। কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে পিএসসির নির্বাচিত ১১ জন কবি-সাহিত্যিক সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যেতে হবে। তাঁরা হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মীর মশাররফ হোসেন, দীনবন্ধু মিত্র, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, কায়কোবাদ ও ফররুখ আহমেদ। এ ছাড়া ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জহির রায়হান ও বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব সম্পর্কে জেনে যেতে হবে। বিভিন্ন বাংলা সংবাদপত্রের সম্পাদক, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রচনা ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ে যাওয়া উচিত।

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য অংশে মোট ৩৫ নম্বর থাকে। যেখানে Language (গ্রামার) অংশে ২০ মার্ক ও Literature অংশে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

  • গ্রামার অংশ: গ্রামার অংশ থেকে প্রায় মিডিয়াম ধরনের প্রশ্ন করা হয়। Parts of Speech-এর ৮টি টপিকস Noun, Pronoun, Adjective, Verb, Adverb, Preposition, Conjunction & Interjection থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। এ ছাড়া Gender, Number, Determiner, Sentence Idioms & Phrases, Clauses, Appropriate Preposition, Vocabulary (Synonyms & Antonyms), Spellings Suffixes-Prefixes, Voice, Transformations of Sentence & Correction etc.
  • গ্রামারের এই টপিকগুলো ভালো করে অনুশীলন করে গেলে প্রায় প্রতিটির উত্তর করা যায় এবং ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে।
    ইংরেজি সাহিত্যের ১৫ নম্বর: এই অংশের জন্য ইংরেজি সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সাল ও এলিজাবেথ পিরিয়ড়ের পর থেকে সাহিত্যকর্মগুলো ভালোভাবে পড়ে যাওয়া উচিত। তাঁদের মধ্যে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য কিছু লেখকের নাম দেওয়া হলো, যাঁদের থেকে প্রায়ই প্রশ্ন থাকে। যেমন William Shakespeare, Cristopher Marlowe, Ben Jonson, Jon Milton, Jonathon Swift, Alexander Pope, William Wordsworth, S. T. Coleridge, P B Shelley, John Keats, Charles Dickens, Alferd Lord Tennyson, Robert Browning, George Bernard Shaw, W B Yeats, T S Eliot & Ernest Hemingway. এ ছাড়া ইংরেজি সাহিত্যের কিছু Literary Terms থাকে, সেগুলো থেকে কিছু প্রশ্ন আসে। যেমন Simile, Allegory, Blank Verse, Climax, Comic, Aside, Epitaph, Metaphor, Soliloquy, Sonnet, Irony, Elegy etc সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা বিস্তারিত জেনে যেতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংবিধান, কৃষিসম্পদ, জনসংখ্যা, শিল্প ও বাণিজ্য, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা, জাতীয় অর্জন, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ও সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারণা নিয়ে যেতে হবে। নবম-দশম শ্রেণির আগের সিলেবাসের বিজ্ঞান বিভাগের সামাজিক বিজ্ঞান অথবা বর্তমান সিলেবাসের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই দেখতে হবে। সংবিধান, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি সুশাসন বইটির দ্বিতীয় পত্র এবং সঙ্গে একটি গাইড বই পড়ে যেতে পারেন।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য বিশ্বের ৭টি মহাদেশের ভূরাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও অঞ্চলগুলোর অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সীমারেখা, যুদ্ধ ও বিপ্লব, বিভিন্ন চুক্তি, বিভিন্ন দেশের আইনসভা, রাজধানী, মুদ্রা, বিভিন্ন প্রণালি, সাগর-মহাসাগর, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন (জাতিপুঞ্জ, জাতিসংঘ, WHO, UNDP, ILO, WORLD BANK, IMF, WTO, OIC, GCC, AU, Arab Legue, BRICS, OPEC, ASEAN, SAARC, BIMSTEC, RCEP, IDB, ADB, Redcross International etc) প্রতিষ্ঠানগুলোর হেড অফিসের অবস্থান, কার্যাবলি, গঠন ও সদস্য ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যেতে হবে।

সাধারণ বিজ্ঞান
সাধারণ বিজ্ঞান অংশে বিসিএস প্রিলিমিনারির জন্য ১৫ নম্বর থাকে। এখানে সচরাচর বিগত সালের বিসিএস ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলোই রিপিট হয়। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখানে কম সময় দিলেও ভালো করতে পারেন। তবে বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অষ্টম শ্রেণির আগের সিলেবাসের সাধারণ বিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞান বই থেকে বিসিএস সিলেবাস-সম্পর্কিত চ্যাপ্টারগুলো পড়ে গেলে প্রিলিমিনারি ও লিখিত উভয়ই পরীক্ষার জন্য বেশ ভালো ফল দেবে। এ ছাড়া বাজার থেকে যেকোনো একটি ভালো মানের গাইড বই সংগ্রহ করে পড়া উচিত।

ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বই থেকে মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী, পৃথিবীর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই চ্যাপ্টারগুলো ভালো করে পড়তে হবে। এসব চ্যাপ্টার থেকে হুবহু বিভিন্ন প্রশ্ন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মানচিত্র থেকে বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমানা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন নিয়ামক ও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যেতে হবে।

গাণিতিক যুক্তি
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে গাণিতিক যুক্তি অংশে ১৫ নম্বর থাকে। এই অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারগুলো, যেমন বাস্তব সংখ্যা, সেট, বীজ গাণিতিক সূত্রাবলি, বহুপদী উৎপাদক, সূচক ও লগারিদম, অনুপাত-সমানুপাত, সমীকরণ, সমান্তর ও গুণোত্তর অনুক্রম ও ধারা, রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ ভালো করে দেখে যেতে হবে। পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বই থেকে সরল ও দ্বিপদী অসমতা, সম্ভাব্যতা, সেট ও সূচক এবং লগারিদম দেখতে হবে। এ ছাড়া কোনো গাইড বই থেকে লাভ-ক্ষতি, লসাগু-গসাগু, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফাবিষয়ক চ্যাপ্টারগুলো ভালো করে দেখতে হবে।

মানসিক দক্ষতা
এখানে প্রিলিমিনারিতে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এই অংশে সাধারণত বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো রিপিট আসে। বাজারের গাইড বই থেকে গত বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন অনুশীলন ও নিজস্ব কমনসেন্স কাজে লাগালে ভালো করা যায়।

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এখানে কম্পিউটার অংশের জন্য ১০ ও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য ৫ নম্বর থাকে। কম্পিউটার অংশের জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ড. মাহবুবুর রহমানের কম্পিউটার বইটি এবং তথ্যপ্রযুক্তি অংশের জন্য প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কম্পিউটার বইটা সংগ্রহ করে পড়া উচিত। পাশাপাশি একটা গাইড বই থেকে বিগত বছরের বিসিএস, ব্যাংক ও নন-ক্যাডার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করে গেলে অনেক উত্তর কমন পাওয়া যায়।

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
এই অংশে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ অংশে ভালো করার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মোজাম্মেল হক স্যারের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের সিলেবাস-সম্পর্কিত চ্যাপ্টারগুলো, যেমন সুশাসন, মূল্যবোধ, আইন স্বাধীনতা ও সাম্য, ই-গভর্ন্যান্স ও সুশাসন, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার। এগুলো ভালোভাবে পড়ে যেতে হবে। এ ছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তির বিভিন্ন উক্তি ও বিগত প্রশ্নগুলো পড়ে গেলে ভালো করা যায়।

লেখক: ৪০তম বিসিএস, শিক্ষা ক্যাডার (হিসাববিজ্ঞান) মেধাক্রম-০২

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম