শিশুদের দুরন্ত শৈশব আর বর্ণিল কৈশোর ফিরিয়ে দিন

রেফায়েত উল্যাহ রুপক

রেফায়েত উল্যাহ রুপক।

রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাটানো দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি ভুলতে বসেছি অনেকে। বর্তমান সময়ের শিশুদের সাথে আমাদের শৈশবের লব্ধ অভিজ্ঞতার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আমাদের শৈশব ছিল আনন্দঘন আর পারিবারিক আবহে কাটানো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদি, ফুফা-ফুফি কিংবা আত্মীয়-পরিজন নিয়ে গড়ে উঠা একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যাও বিরল পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

একসময় বিদ্যালয় থেকে ফিরেই শিশুরা খেলাধুলায় মেতে উঠতো। কানামাছি, বৌছি, হা-ডু-ডু, পাক্ষি খেলা, গোল্লাছুট, ঢাংগুলি, মারবেল, হাঁসধরা, রশিটানা, ইচিং-বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, লাঠিখেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, লুকোচুরি, মোরগ লড়াই, কড়ি, ধাপ্পা, কুতকুত, বিস্কুট খেলা, যেমন খুশি তেমন সাঁজ, পুতুলের বিয়ে, চড়ুইভাতি, এলাডিং বেলাডিং, সাত চাড়াসহ কত-কত খেলায় যে আমাদের শৈশব রঙ্গিন ছিল তা আজ হিসেব কষে বের করতে হবে।

পাড়ার বন্ধুদের সাথে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলে এসে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দ কখনই সুইমিংপুলে নেই। কত শত রকমের বাহারি পিঠার ঘ্রাণে ভরপুর ছিল আমাদের শৈশব। সকালের মক্তব আর শুক্রবারের বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে পরিবারের সবাই একসাথে বসে ছয়াছবি দেখা, সাপ্তাহিক নাটক, ইত্যাদি, আনন্দমেলা দেখা কিংবা দাদা -দাদি, নানা – নানির কোলে বসে গল্প শোনা, বাবার সাথে বসে রেডিওতে খবর শোনা, বাবার বই পড়ে শোনানো, খেজুর রস, তালের পিঠা, ফিরনি -পায়েস সেসব যেন আজ শুধুই পৌরাণিক কাহিনীতে ডাঁসা কল্পকাহিনী।

এখন শিশুরা বাইরের পরিবেশে যায় না, খেলাধুলায় মেতে উঠে না। তাদের শৈশব অনলাইন গেইমস, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে সীমাবদ্ধ। বাবা- মায়ের চাকুরির সুবাদে একা থাকতে হয় বেশির ভাগ সময়। তাদের জীবনে কোন আনন্দ নেই, সকালে ঘুম থেকে উঠেই যেতে হয় বিদ্যালয়ে। বাসায় ফিরে করতে হয় হোমওয়ার্ক, এসাইনম্যান্ট বা টিউটরের ক্লাস, রাতে আবার বাবা মায়ের কড়া শাসনে পড়তে বসা, এ যেন এক কয়েদির অসহ্য জীবনের গল্প যা কেড়ে নিয়েছে তাদের দুরন্ত শৈশব আর বর্ণিল কৈশোরকে করেছে বিষাদময়।

আগে শিশুরা বৃষ্টিতে ভিজে কলা গাছের ভেলায় চড়ত, শাপলা শালুক তুলতো অথচ এখন শিশুরা বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পারে না, অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফাস্টফুড খেয়ে স্থূলতাসহ নানাবিধ সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে তারা। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। যার কারনে তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদক এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। অতিদ্রুত আমাদের এব্যাপারে সচেতন হয়ে শিশুদের জন্য সুস্থ ও সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করা জরুরি অন্যথায় এ পরিস্থিতি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শিশুদের দুরন্ত শৈশব আর বর্ণিল কৈশোর ফিরিয়ে দিন

রেফায়েত উল্যাহ রুপক

রেফায়েত উল্যাহ রুপক।

রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাটানো দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি ভুলতে বসেছি অনেকে। বর্তমান সময়ের শিশুদের সাথে আমাদের শৈশবের লব্ধ অভিজ্ঞতার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আমাদের শৈশব ছিল আনন্দঘন আর পারিবারিক আবহে কাটানো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদি, ফুফা-ফুফি কিংবা আত্মীয়-পরিজন নিয়ে গড়ে উঠা একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যাও বিরল পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

একসময় বিদ্যালয় থেকে ফিরেই শিশুরা খেলাধুলায় মেতে উঠতো। কানামাছি, বৌছি, হা-ডু-ডু, পাক্ষি খেলা, গোল্লাছুট, ঢাংগুলি, মারবেল, হাঁসধরা, রশিটানা, ইচিং-বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, লাঠিখেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, লুকোচুরি, মোরগ লড়াই, কড়ি, ধাপ্পা, কুতকুত, বিস্কুট খেলা, যেমন খুশি তেমন সাঁজ, পুতুলের বিয়ে, চড়ুইভাতি, এলাডিং বেলাডিং, সাত চাড়াসহ কত-কত খেলায় যে আমাদের শৈশব রঙ্গিন ছিল তা আজ হিসেব কষে বের করতে হবে।

পাড়ার বন্ধুদের সাথে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলে এসে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দ কখনই সুইমিংপুলে নেই। কত শত রকমের বাহারি পিঠার ঘ্রাণে ভরপুর ছিল আমাদের শৈশব। সকালের মক্তব আর শুক্রবারের বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে পরিবারের সবাই একসাথে বসে ছয়াছবি দেখা, সাপ্তাহিক নাটক, ইত্যাদি, আনন্দমেলা দেখা কিংবা দাদা -দাদি, নানা – নানির কোলে বসে গল্প শোনা, বাবার সাথে বসে রেডিওতে খবর শোনা, বাবার বই পড়ে শোনানো, খেজুর রস, তালের পিঠা, ফিরনি -পায়েস সেসব যেন আজ শুধুই পৌরাণিক কাহিনীতে ডাঁসা কল্পকাহিনী।

এখন শিশুরা বাইরের পরিবেশে যায় না, খেলাধুলায় মেতে উঠে না। তাদের শৈশব অনলাইন গেইমস, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে সীমাবদ্ধ। বাবা- মায়ের চাকুরির সুবাদে একা থাকতে হয় বেশির ভাগ সময়। তাদের জীবনে কোন আনন্দ নেই, সকালে ঘুম থেকে উঠেই যেতে হয় বিদ্যালয়ে। বাসায় ফিরে করতে হয় হোমওয়ার্ক, এসাইনম্যান্ট বা টিউটরের ক্লাস, রাতে আবার বাবা মায়ের কড়া শাসনে পড়তে বসা, এ যেন এক কয়েদির অসহ্য জীবনের গল্প যা কেড়ে নিয়েছে তাদের দুরন্ত শৈশব আর বর্ণিল কৈশোরকে করেছে বিষাদময়।

আগে শিশুরা বৃষ্টিতে ভিজে কলা গাছের ভেলায় চড়ত, শাপলা শালুক তুলতো অথচ এখন শিশুরা বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পারে না, অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফাস্টফুড খেয়ে স্থূলতাসহ নানাবিধ সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে তারা। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। যার কারনে তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদক এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। অতিদ্রুত আমাদের এব্যাপারে সচেতন হয়ে শিশুদের জন্য সুস্থ ও সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করা জরুরি অন্যথায় এ পরিস্থিতি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।