দেশের বেশির ভাগ যুবসমাজ এখন শিক্ষিত। অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার পাশাপাশি প্রত্যাশা করেন, সন্তান একদিন বড় চাকরি করবে এবং সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু এই শিক্ষিত যুবসমাজের বেশির ভাগই এখনকার দিনে বেকার জীবন পার করেন। উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। একটা চাকরির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান একেকজন শিক্ষিত বেকার। সরকারি চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার সমান। তরুণেরা এখন বিষয়ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা শেষ করে আবার লেখাপড়া শুরু করেন একটা চাকরি পাওয়ার জন্য। চাকরির জন্য তাঁরা আবার নতুন করে ভিন্নধর্মী লেখাপড়া শুরু করেন। দেশ-বিদেশের রাজধানী থেকে শুরু করে মুদ্রার নাম, কোথায় কী বিখ্যাত আছে ইত্যাদি।

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার। যেকোনো বিষয় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ফলে এখনকার যুবসমাজের মাঝে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরি না পেয়ে দেশের সিস্টেমকে দোষারোপ করে কিছুদিন আগে এক যুবক ফেসবুক লাইভে এসে তাঁর সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেছেন। এর আগেও চাকরি না পেয়ে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। অথচ দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তারা দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না। দক্ষ কর্মীর অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। দেশে শিক্ষিত জনশক্তি পর্যাপ্ত থাকলেও দক্ষ জনশক্তির অভাব দিন দিন বাড়ছে। সবাই শুধু প্রথাগত পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করতে চাইছেন। এর বাইরে নিজেকে কাজের মাধ্যমে দক্ষ করার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে জাতি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু দেশ ও জাতি এগোচ্ছে না।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষিত যুবক অনেক আশা নিয়ে লেখাপড়া করেন, যেন পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ না দেওয়ার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার পর দীর্ঘদিন বেকার থাকতে হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ শিক্ষিত যুবক বেকার।

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রের চাহিদা মেটাতে অক্ষম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক বিভাগ রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে চাকরির বাজারের কোনো মিল নেই। ফলে এসব বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষিত বেকার হিসেবে ঘুরে বেড়ান দিনের পর দিন। চাকরি না পেয়ে হতাশায় দিন কাটান। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশ বেকার থাকছেন। অন্যান্য পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও ভিন্ন নয়। দেশের বাজারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা একদিকে যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করছে। এতে শুধু ব্যক্তির লোকসান হচ্ছে এমনটি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র।

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করা চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থেকে যাচ্ছেন এবং চাহিদামতো চাকরি পাচ্ছেন না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যায় এগিয়ে বাংলাদেশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ৪৭। পাকিস্তানে শিক্ষিত বেকারের হার ২৮, নেপালে ২০ এবং শ্রীলঙ্কায় ৮ শতাংশ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। আমাদের এই সমাজব্যবস্থায় চাকরি করে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাওয়াকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলে। অথচ ব্যবসা করে ৫০ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করলেও সমাজের মানুষ বলবে, লেখাপড়া করে কিছু করতে না পেরে এখন এসব করে বেড়াচ্ছে। এই প্রবণতার ফলে দেশে নতুন করে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না।

আমাদের দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে চাইলে এখনই সময় দেশের উচ্চশিক্ষার পরিবর্তন নিয়ে নতুন করে ভাবার। ভালো চাকরির উদ্দেশ্যেই যখন লেখাপড়া করা, তখন চাকরির বাজারে যে শিক্ষার চাহিদা নেই, সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কী লাভ? একজন স্নাতক ডিগ্রিধারীর পেছনে শুধু তাঁর পরিবার ব্যয় করে এমনটি নয়, সেখানে রাষ্ট্রেরও ব্যয় থাকে। সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ২ লাখ ১২ হাজার টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ১ লাখ ৪ হাজার ৯৬ টাকা ব্যয় করে সরকার। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। সেখানে শিক্ষার্থীপ্রতি ৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৭ টাকা ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেছনে একটা ভালো পরিমাণ অর্থ সরকারকে ব্যয় করতে হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য এই ব্যয়ের পরও যদি দেশের বাইরে থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে এই ব্যয়কে অপচয় বলতে হয়। কেননা, এই ব্যয় দেশের উন্নয়নে খরচ করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে।

মো. রেজোয়ান হোসেন
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

দেশের বেশির ভাগ যুবসমাজ এখন শিক্ষিত। অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার পাশাপাশি প্রত্যাশা করেন, সন্তান একদিন বড় চাকরি করবে এবং সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু এই শিক্ষিত যুবসমাজের বেশির ভাগই এখনকার দিনে বেকার জীবন পার করেন। উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। একটা চাকরির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান একেকজন শিক্ষিত বেকার। সরকারি চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার সমান। তরুণেরা এখন বিষয়ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা শেষ করে আবার লেখাপড়া শুরু করেন একটা চাকরি পাওয়ার জন্য। চাকরির জন্য তাঁরা আবার নতুন করে ভিন্নধর্মী লেখাপড়া শুরু করেন। দেশ-বিদেশের রাজধানী থেকে শুরু করে মুদ্রার নাম, কোথায় কী বিখ্যাত আছে ইত্যাদি।

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার। যেকোনো বিষয় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ফলে এখনকার যুবসমাজের মাঝে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরি না পেয়ে দেশের সিস্টেমকে দোষারোপ করে কিছুদিন আগে এক যুবক ফেসবুক লাইভে এসে তাঁর সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেছেন। এর আগেও চাকরি না পেয়ে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। অথচ দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তারা দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না। দক্ষ কর্মীর অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। দেশে শিক্ষিত জনশক্তি পর্যাপ্ত থাকলেও দক্ষ জনশক্তির অভাব দিন দিন বাড়ছে। সবাই শুধু প্রথাগত পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করতে চাইছেন। এর বাইরে নিজেকে কাজের মাধ্যমে দক্ষ করার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে জাতি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু দেশ ও জাতি এগোচ্ছে না।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষিত যুবক অনেক আশা নিয়ে লেখাপড়া করেন, যেন পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ না দেওয়ার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার পর দীর্ঘদিন বেকার থাকতে হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ শিক্ষিত যুবক বেকার।

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রের চাহিদা মেটাতে অক্ষম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক বিভাগ রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে চাকরির বাজারের কোনো মিল নেই। ফলে এসব বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষিত বেকার হিসেবে ঘুরে বেড়ান দিনের পর দিন। চাকরি না পেয়ে হতাশায় দিন কাটান। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশ বেকার থাকছেন। অন্যান্য পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও ভিন্ন নয়। দেশের বাজারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা একদিকে যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করছে। এতে শুধু ব্যক্তির লোকসান হচ্ছে এমনটি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র।

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করা চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থেকে যাচ্ছেন এবং চাহিদামতো চাকরি পাচ্ছেন না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যায় এগিয়ে বাংলাদেশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ৪৭। পাকিস্তানে শিক্ষিত বেকারের হার ২৮, নেপালে ২০ এবং শ্রীলঙ্কায় ৮ শতাংশ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। আমাদের এই সমাজব্যবস্থায় চাকরি করে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাওয়াকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলে। অথচ ব্যবসা করে ৫০ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করলেও সমাজের মানুষ বলবে, লেখাপড়া করে কিছু করতে না পেরে এখন এসব করে বেড়াচ্ছে। এই প্রবণতার ফলে দেশে নতুন করে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না।

আমাদের দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে চাইলে এখনই সময় দেশের উচ্চশিক্ষার পরিবর্তন নিয়ে নতুন করে ভাবার। ভালো চাকরির উদ্দেশ্যেই যখন লেখাপড়া করা, তখন চাকরির বাজারে যে শিক্ষার চাহিদা নেই, সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কী লাভ? একজন স্নাতক ডিগ্রিধারীর পেছনে শুধু তাঁর পরিবার ব্যয় করে এমনটি নয়, সেখানে রাষ্ট্রেরও ব্যয় থাকে। সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ২ লাখ ১২ হাজার টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ১ লাখ ৪ হাজার ৯৬ টাকা ব্যয় করে সরকার। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। সেখানে শিক্ষার্থীপ্রতি ৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৭ টাকা ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেছনে একটা ভালো পরিমাণ অর্থ সরকারকে ব্যয় করতে হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য এই ব্যয়ের পরও যদি দেশের বাইরে থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে এই ব্যয়কে অপচয় বলতে হয়। কেননা, এই ব্যয় দেশের উন্নয়নে খরচ করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে।

মো. রেজোয়ান হোসেন
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ