ছাত্ররাজনীতির এ কোন রূপ

শেখ আদনান ফাহাদ

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ জাতিকে তাদের যে রূপ দেখাল, তাকে কী নামে অভিহিত করা যায়? এটা নিশ্চয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো রূপ নয়। তাদের এই বিশ্রী মারামারি এবং অভিযোগ দেখা-শোনার পর থেকে মাথা থেকে বিষয়টা কিছুতেই যাচ্ছে না। এই ছাত্রীদের নিয়ে আমাদের চিন্তা এই কারণে বেশি যে এরা ছাত্রলীগের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের পদধারী সদস্য হলে তার মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ এসেছে সেটি উল্লেখ করাও খুব বিব্রতকর এবং লজ্জার। এই মারাত্মক লজ্জাজনক অভিযোগ কতখানি সত্য সেটি বলতে পারবে দেশের পুলিশ এবং ডিবির লোকজন। কারণ সমাজের অন্ধকার অংশের নানা খবর তাদের কাছেই বেশি থাকে। সঠিক তদন্ত হলে হয়তো প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। আমরাও চাই এই মারাত্মক লজ্জাজনক অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হোক। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া এত বড় একটা অভিযোগ অস্বীকার করার প্রবণতাও কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ কলেজের প্রিন্সিপাল অভিযোগ অস্বীকার করেই দায়িত্ব সেরেছেন বলে মনে হচ্ছে।

ইডেন কলেজ-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দুটো সত্তা প্রাধান্য পাবে আমার কাছে। প্রথমত ছাত্রলীগ, দ্বিতীয়ত ইডেন কলেজ।

ছাত্রলীগ আমার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। কারণ ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যার নেতাকর্মীরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্য মুজিব বাহিনী নামে পুরো একটা বাহিনী গঠন করে অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বের আর কয়টা ছাত্র সংগঠনের এমন ইতিহাস আছে আমার জানা নেই। পাকিস্তান থেকে বের করে এনে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করবেন বলে বাঙালির নতুন প্রজন্মকে সাহসী আর বীরের শক্তিতে নির্মাণ করার পরিকল্পনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ উদ্যোগে ১৯৪৯ সালে ছাত্রলীগের জন্ম দেন। ছাত্রলীগের বর্তমান যতই বিতর্কিত হোক না কেন, এর গৌরবময় অতীত বাংলাদেশপ্রেমী যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য।

ছাত্রলীগ অন্তঃপ্রাণ একজন মানুষ কেমন হয় তার প্রমাণ আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের প্রতি শেখ হাসিনার ভালোবাসার গভীরতা আমরা অনুধাবন করতে পারি তারই কিছু কথা থেকে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘কখনো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হতে না পারার’ দুঃখের কথা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে কখনো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা করা হয়নি। এটা আমার দুঃখ। বাঙালি জাতির যত অর্জন আছে প্রতিটি অর্জনের আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ছাত্রলীগের আজ যারা নেতৃত্বে আছেন বা আসবেন আগামীতে তারাই দেশের চালিকা শক্তি। আমরা সবাই ছাত্রলীগ করেই এখানে এসেছি। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম, নেতা ছিলাম না। আমি কখনো ছাত্রলীগের নেতা হতে পারিনি। আমি বদরুন্নেছা কলেজের (তৎকালীন ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজ) ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল যেহেতু আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে তাই আমি যেন নির্বাচিত হতে না পারি। কিন্তু আমি নির্বাচিত হই। এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলাম। আমার দুঃখ আমাকে কখনো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়নি। এটা আমি সব সময়ই বলি। তবে আমি ওই সময় প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে ছিলাম। ’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাবৎ বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হয়ে নিজেকে ছাত্রলীগের একজন ‘কর্মী’ হিসেবে পরিচয় দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। এর চেয়ে বড় পাওয়া সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের জন্য আর কী হতে পারে! এই উচ্চমর্যাদার মূল্য কি বর্তমান ছাত্রলীগ দিতে পারছে? ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ দিতে পারছে?

ইডেন কলেজের সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহে শুধু ছাত্রলীগের না, দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজের নাক কাটা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিগুলো টার্গেট করেছে ছাত্রলীগকে। এই ঘটনাপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে পুরো ছাত্রলীগকেই কালিমা লেপন করতে চায়। কারণ আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি জানে ছাত্রলীগ ধ্বংস হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ আপনা-আপনিই ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ ছাত্রলীগ হলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। ছাত্রলীগ নামের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, এই অতি ভয়ানক সত্যটা শত্রুরা ঠিকই জানে। কিন্তু বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা কি অনুধাবন করেন? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ সম্পর্কে বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কয়জন কতটুকু জানেন? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং জীবনাচরণ সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা নেই এমন অনেককে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব নিতে দেখা যায়।

একটা বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের সব কর্মীকে নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তবে টিভি, ফেইসবুক, পত্রিকা, অডিও, ভিডিও দেখে আমার মনে হয়েছে ইডেন কলেজের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের ইমেজকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন ছাত্রদল, শিবির ছাত্রলীগবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা করার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ যারা করে দিল তাদের কী বিচার করার সাহস আছে বর্তমান ছাত্রলীগ নেতৃত্বের? ছাত্রলীগের মতাদর্শিক মূল সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের? তাহলে তো আমরা দেখতে পারতাম এদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আনা হয়নি। অথচ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির দায়ী মেয়েদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ পুরো দেশে একটা বার্তা দিতে পারত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ইডেন কলেজের ঘটনায় এমন প্রকাশ্য দাবির পরেও বিষয়টির তদন্ত ও বিচারে কলেজ প্রশাসন কিংবা সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? একটি মামলা হয়েছে আদালতে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইডেন কলেজ এবং ছাত্রলীগ-উভয় প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

ছাত্ররাজনীতির এ কোন রূপ

শেখ আদনান ফাহাদ

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ জাতিকে তাদের যে রূপ দেখাল, তাকে কী নামে অভিহিত করা যায়? এটা নিশ্চয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো রূপ নয়। তাদের এই বিশ্রী মারামারি এবং অভিযোগ দেখা-শোনার পর থেকে মাথা থেকে বিষয়টা কিছুতেই যাচ্ছে না। এই ছাত্রীদের নিয়ে আমাদের চিন্তা এই কারণে বেশি যে এরা ছাত্রলীগের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের পদধারী সদস্য হলে তার মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ এসেছে সেটি উল্লেখ করাও খুব বিব্রতকর এবং লজ্জার। এই মারাত্মক লজ্জাজনক অভিযোগ কতখানি সত্য সেটি বলতে পারবে দেশের পুলিশ এবং ডিবির লোকজন। কারণ সমাজের অন্ধকার অংশের নানা খবর তাদের কাছেই বেশি থাকে। সঠিক তদন্ত হলে হয়তো প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। আমরাও চাই এই মারাত্মক লজ্জাজনক অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হোক। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া এত বড় একটা অভিযোগ অস্বীকার করার প্রবণতাও কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ কলেজের প্রিন্সিপাল অভিযোগ অস্বীকার করেই দায়িত্ব সেরেছেন বলে মনে হচ্ছে।

ইডেন কলেজ-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দুটো সত্তা প্রাধান্য পাবে আমার কাছে। প্রথমত ছাত্রলীগ, দ্বিতীয়ত ইডেন কলেজ।

ছাত্রলীগ আমার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। কারণ ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন যার নেতাকর্মীরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্য মুজিব বাহিনী নামে পুরো একটা বাহিনী গঠন করে অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বের আর কয়টা ছাত্র সংগঠনের এমন ইতিহাস আছে আমার জানা নেই। পাকিস্তান থেকে বের করে এনে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করবেন বলে বাঙালির নতুন প্রজন্মকে সাহসী আর বীরের শক্তিতে নির্মাণ করার পরিকল্পনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ উদ্যোগে ১৯৪৯ সালে ছাত্রলীগের জন্ম দেন। ছাত্রলীগের বর্তমান যতই বিতর্কিত হোক না কেন, এর গৌরবময় অতীত বাংলাদেশপ্রেমী যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য।

ছাত্রলীগ অন্তঃপ্রাণ একজন মানুষ কেমন হয় তার প্রমাণ আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের প্রতি শেখ হাসিনার ভালোবাসার গভীরতা আমরা অনুধাবন করতে পারি তারই কিছু কথা থেকে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘কখনো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হতে না পারার’ দুঃখের কথা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে কখনো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা করা হয়নি। এটা আমার দুঃখ। বাঙালি জাতির যত অর্জন আছে প্রতিটি অর্জনের আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ছাত্রলীগের আজ যারা নেতৃত্বে আছেন বা আসবেন আগামীতে তারাই দেশের চালিকা শক্তি। আমরা সবাই ছাত্রলীগ করেই এখানে এসেছি। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম, নেতা ছিলাম না। আমি কখনো ছাত্রলীগের নেতা হতে পারিনি। আমি বদরুন্নেছা কলেজের (তৎকালীন ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজ) ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল যেহেতু আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে তাই আমি যেন নির্বাচিত হতে না পারি। কিন্তু আমি নির্বাচিত হই। এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলাম। আমার দুঃখ আমাকে কখনো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়নি। এটা আমি সব সময়ই বলি। তবে আমি ওই সময় প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে ছিলাম। ’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাবৎ বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হয়ে নিজেকে ছাত্রলীগের একজন ‘কর্মী’ হিসেবে পরিচয় দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। এর চেয়ে বড় পাওয়া সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের জন্য আর কী হতে পারে! এই উচ্চমর্যাদার মূল্য কি বর্তমান ছাত্রলীগ দিতে পারছে? ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ দিতে পারছে?

ইডেন কলেজের সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহে শুধু ছাত্রলীগের না, দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজের নাক কাটা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিগুলো টার্গেট করেছে ছাত্রলীগকে। এই ঘটনাপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে পুরো ছাত্রলীগকেই কালিমা লেপন করতে চায়। কারণ আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি জানে ছাত্রলীগ ধ্বংস হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ আপনা-আপনিই ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ ছাত্রলীগ হলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। ছাত্রলীগ নামের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, এই অতি ভয়ানক সত্যটা শত্রুরা ঠিকই জানে। কিন্তু বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা কি অনুধাবন করেন? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ সম্পর্কে বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কয়জন কতটুকু জানেন? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং জীবনাচরণ সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা নেই এমন অনেককে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব নিতে দেখা যায়।

একটা বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের সব কর্মীকে নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তবে টিভি, ফেইসবুক, পত্রিকা, অডিও, ভিডিও দেখে আমার মনে হয়েছে ইডেন কলেজের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের ইমেজকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন ছাত্রদল, শিবির ছাত্রলীগবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা করার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ যারা করে দিল তাদের কী বিচার করার সাহস আছে বর্তমান ছাত্রলীগ নেতৃত্বের? ছাত্রলীগের মতাদর্শিক মূল সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের? তাহলে তো আমরা দেখতে পারতাম এদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আনা হয়নি। অথচ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির দায়ী মেয়েদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ পুরো দেশে একটা বার্তা দিতে পারত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ইডেন কলেজের ঘটনায় এমন প্রকাশ্য দাবির পরেও বিষয়টির তদন্ত ও বিচারে কলেজ প্রশাসন কিংবা সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? একটি মামলা হয়েছে আদালতে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইডেন কলেজ এবং ছাত্রলীগ-উভয় প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়