পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কেন সংবেদনশীল বিষয়?

গ্রাফিক্স: ইত্তেফাক

চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বড় দুইটি অসংগতি লইয়া সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে বিতর্ক চলিতেছে। প্রথমত বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হইতে পারে—এমন এক প্রশ্ন করা হইয়াছে। প্রশ্ন প্রণয়নকারী উদ্দীপক অংশে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে গিয়া একধরনের সূক্ষ্ম মতলববাজির আশ্রয় লইয়াছেন। ইহার মাধ্যমে নিশ্চয়ই তিনি বা তাহারা বাড়াবাড়ি করিয়াছেন; কিন্তু ইহা কি ধরার কেহ ছিল না? এমনটি নহে যে, এই প্রক্রিয়ার সহিত মাত্র একজন ব্যক্তি জড়িত। এই জন্য বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করিতে হয় এবং যাচাই-বাছাইসহ ইহাতে সম্পৃক্ত থাকেন একাধিক ব্যক্তি। তাই ইহা কাহারো একার ভুল বলিবার অবকাশ নাই। ইহার সহিত যাহারাই জড়িত থাকুন না কেন, তাহাদের চিহ্নিত করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, কারিগরি বোর্ডে একটি পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর পুরাতন সিলেবাসে প্রশ্ন করায় তাহা বাতিল করা হইয়াছে। এমন ভুলের পুনরাবৃত্তিও কাম্য নহে।

বিশেষ করিয়া, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হইবে কেন? এই ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দুঃখ প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন যে, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে কোনো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির মতো কোনো কিছু থাকা খুবই দুঃখজনক ও একেবারেই গ্রহণযোগ্য নহে। এখানে শিক্ষামন্ত্রীর দায় কতটা? আবার ইহার সহিত নাই ইসলামের ন্যূনতম কোনো সম্পর্কও। ইসলাম বরাবরই অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাহাদের সহিত বিনয় আচরণে বিশ্বাসী এবং তাহাদের অধিকার রক্ষা করিবার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্রে নেপাল, গোপাল ও আবদুলের নাম উল্লেখ করা হইয়াছে। এই নামগুলি অনেকটাই শ্লেষাত্মক। কোনো মুসলমানের নাম শুধু আবদুল হয় না। জমিজমার বিরোধ ও কোরবানির প্রসঙ্গ যেভাবে আসিয়াছে, তাহা কোনো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাজ নহে। অধার্মিক বা বকধার্মিক ছাড়া কেহ এইভাবে প্রতিবেশী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে কষ্ট দিতে পারে না। বরং ইসলাম ধর্মে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হইলেও প্রতিবেশীর সহিত সদ্ব্যবহার ও নিয়মিত খোঁজখবর রাখিবার কথা বলা হইয়াছে। সুতরাং যাহারা এই প্রশ্ন করিয়াছেন, তাহাদের মূর্খতার সীমা নাই। মতলববাজ এই প্রশ্নকর্তা বা মডারেটরদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া অবিলম্বে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হইবে। এই জন্য আইনের অভাব থাকিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনে নূতন আইন তৈরি করিতে হইবে।

অতএব শিক্ষামন্ত্রীর উচিত, প্রধানমন্ত্রীর সহিত আলোচনা করিয়া এই ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া এবং সেই পদক্ষেপের কথা দেশবাসীকে জানাইয়া দেওয়া স্পষ্টভাবে। সকল কিছুকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নহে। তাহা হইলে এমন ঘটনা বারংবার ঘটিতেই থাকিবে। ইহার পিছনে যাহারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাহাদের আইনের আওতায় আনিতে হইবে। মতলববাজদের মতলবটা কী ছিল, তাহাও জানিতে হইবে। প্রয়োজনে তাহাদের রিমান্ডে লইবার সুপারিশ করিতে হইবে। কেননা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এই দেশের মানুষ সেই পাকিস্তান আমল হইতে সংগ্রাম করিয়া আসিতেছে। তাই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাহাতে না হয়, সেই দিকে আমাদের সর্বদা খেয়াল রাখিতে হইবে। নিকট অতীতে দেখা গিয়াছে, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে ঘটিয়াছে বিক্ষোভ ও হতাহতের ঘটনা। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি যাহাতে আর তৈরি না হইতে পারে, এই জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে।

ইত্তেফাক/ইআ

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কেন সংবেদনশীল বিষয়?

গ্রাফিক্স: ইত্তেফাক

চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বড় দুইটি অসংগতি লইয়া সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে বিতর্ক চলিতেছে। প্রথমত বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হইতে পারে—এমন এক প্রশ্ন করা হইয়াছে। প্রশ্ন প্রণয়নকারী উদ্দীপক অংশে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে গিয়া একধরনের সূক্ষ্ম মতলববাজির আশ্রয় লইয়াছেন। ইহার মাধ্যমে নিশ্চয়ই তিনি বা তাহারা বাড়াবাড়ি করিয়াছেন; কিন্তু ইহা কি ধরার কেহ ছিল না? এমনটি নহে যে, এই প্রক্রিয়ার সহিত মাত্র একজন ব্যক্তি জড়িত। এই জন্য বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করিতে হয় এবং যাচাই-বাছাইসহ ইহাতে সম্পৃক্ত থাকেন একাধিক ব্যক্তি। তাই ইহা কাহারো একার ভুল বলিবার অবকাশ নাই। ইহার সহিত যাহারাই জড়িত থাকুন না কেন, তাহাদের চিহ্নিত করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, কারিগরি বোর্ডে একটি পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর পুরাতন সিলেবাসে প্রশ্ন করায় তাহা বাতিল করা হইয়াছে। এমন ভুলের পুনরাবৃত্তিও কাম্য নহে।

বিশেষ করিয়া, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হইবে কেন? এই ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দুঃখ প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন যে, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে কোনো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির মতো কোনো কিছু থাকা খুবই দুঃখজনক ও একেবারেই গ্রহণযোগ্য নহে। এখানে শিক্ষামন্ত্রীর দায় কতটা? আবার ইহার সহিত নাই ইসলামের ন্যূনতম কোনো সম্পর্কও। ইসলাম বরাবরই অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাহাদের সহিত বিনয় আচরণে বিশ্বাসী এবং তাহাদের অধিকার রক্ষা করিবার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্রে নেপাল, গোপাল ও আবদুলের নাম উল্লেখ করা হইয়াছে। এই নামগুলি অনেকটাই শ্লেষাত্মক। কোনো মুসলমানের নাম শুধু আবদুল হয় না। জমিজমার বিরোধ ও কোরবানির প্রসঙ্গ যেভাবে আসিয়াছে, তাহা কোনো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাজ নহে। অধার্মিক বা বকধার্মিক ছাড়া কেহ এইভাবে প্রতিবেশী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে কষ্ট দিতে পারে না। বরং ইসলাম ধর্মে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হইলেও প্রতিবেশীর সহিত সদ্ব্যবহার ও নিয়মিত খোঁজখবর রাখিবার কথা বলা হইয়াছে। সুতরাং যাহারা এই প্রশ্ন করিয়াছেন, তাহাদের মূর্খতার সীমা নাই। মতলববাজ এই প্রশ্নকর্তা বা মডারেটরদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া অবিলম্বে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হইবে। এই জন্য আইনের অভাব থাকিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনে নূতন আইন তৈরি করিতে হইবে।

অতএব শিক্ষামন্ত্রীর উচিত, প্রধানমন্ত্রীর সহিত আলোচনা করিয়া এই ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া এবং সেই পদক্ষেপের কথা দেশবাসীকে জানাইয়া দেওয়া স্পষ্টভাবে। সকল কিছুকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নহে। তাহা হইলে এমন ঘটনা বারংবার ঘটিতেই থাকিবে। ইহার পিছনে যাহারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাহাদের আইনের আওতায় আনিতে হইবে। মতলববাজদের মতলবটা কী ছিল, তাহাও জানিতে হইবে। প্রয়োজনে তাহাদের রিমান্ডে লইবার সুপারিশ করিতে হইবে। কেননা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এই দেশের মানুষ সেই পাকিস্তান আমল হইতে সংগ্রাম করিয়া আসিতেছে। তাই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাহাতে না হয়, সেই দিকে আমাদের সর্বদা খেয়াল রাখিতে হইবে। নিকট অতীতে দেখা গিয়াছে, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে ঘটিয়াছে বিক্ষোভ ও হতাহতের ঘটনা। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি যাহাতে আর তৈরি না হইতে পারে, এই জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে।

ইত্তেফাক/ইআ