প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে যা করা প্রয়োজন

 মো. সিদ্দিকুর রহমান

‘শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে’-এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়েছে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। একমাত্র শিক্ষকরাই পারেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে। বর্তমান সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রণয়ন করেছে নতুন শিক্ষাক্রম। তবে শিক্ষার উন্নয়নে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণের পরও প্রাথমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি। অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ জনবল না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেভাবে এগোচ্ছে না।

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ মোটেই নেই। তৃণমূলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি উপ-পরিচালক পর্যন্ত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের জনবলের চেয়ে বেশি। তারপরও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার সার্ভিস আছে। শুধু ক্যাডার সার্ভিসবিহীন অবস্থায় চলছে সর্বাধিক জনবলসম্পন্ন মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা। শিশুশিক্ষাকে অধিকতর আকর্ষণীয় ও সফল করার জন্য দরকার প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস। ক্যাডার সার্ভিস না থাকায় অনেক মেধাবী ও চৌকশ ব্যক্তি এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অনেকে শিক্ষকতা বা শিক্ষা প্রশাসন ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যান। এ অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি ধরে শতভাগ নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় এক নবজাগরণের সৃষ্টি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে থাকেন, যা শিশু মনোবিজ্ঞানসম্মত। এতে শিশুর মেধা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। অথচ শিশুশিক্ষা অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত থাকায় শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের বিষয়টি তাদের উপলব্ধিতে আসে না। কারণ তাদের নেই শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন ধারণা। নেই শিশুর পাঠ উন্নয়নের অভিজ্ঞতা।

শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদন নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকের শ্রেণির কার্যক্রম দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন, যাতে শিশু বাড়িতে ফিরে গরম খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকাল ৪টায় খেলাধুলা বা বিনোদনের সুযোগ পায়। বিশ্রামের পর খেলাধুলা করে সজীবতা ও নবপ্রেরণা লাভ করে। এতে শিশু সুস্থ মস্তিষ্কে লেখাপড়ায় মন বসাতে পারবে। শিশুদের বিদ্যালয়ের সময় ৩০/৪০/৫০ মিনিটের পরিবর্তে ১ ঘণ্টা করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষক পাঠের বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিশুদের ভালোভাবে ধারণা দিতে পারেন। রাতে তাদের পাঠের জন্য বেশি সময় ব্যয় হওয়ার কথা নয়। বিদ্যালয়ের সাত পিরিয়ডের পরিবর্তে দৈনিক তিন/চার পিরিয়ডের বেশি হওয়া কাম্য নয়।

প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হলে তাদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে। বছরের পর বছর সমস্যাগুলো ঝুলিয়ে রাখলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডারবিহীনভাবে চলে আসছে। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষা সঠিক পথে এগোতে পারছে না। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। এ উপলদ্ধি সবার মাঝে জাগ্রত হোক।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে যা করা প্রয়োজন

 মো. সিদ্দিকুর রহমান

‘শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে’-এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়েছে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। একমাত্র শিক্ষকরাই পারেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে। বর্তমান সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রণয়ন করেছে নতুন শিক্ষাক্রম। তবে শিক্ষার উন্নয়নে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণের পরও প্রাথমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি। অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ জনবল না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেভাবে এগোচ্ছে না।

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ মোটেই নেই। তৃণমূলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি উপ-পরিচালক পর্যন্ত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের জনবলের চেয়ে বেশি। তারপরও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার সার্ভিস আছে। শুধু ক্যাডার সার্ভিসবিহীন অবস্থায় চলছে সর্বাধিক জনবলসম্পন্ন মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা। শিশুশিক্ষাকে অধিকতর আকর্ষণীয় ও সফল করার জন্য দরকার প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস। ক্যাডার সার্ভিস না থাকায় অনেক মেধাবী ও চৌকশ ব্যক্তি এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অনেকে শিক্ষকতা বা শিক্ষা প্রশাসন ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যান। এ অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি ধরে শতভাগ নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় এক নবজাগরণের সৃষ্টি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে থাকেন, যা শিশু মনোবিজ্ঞানসম্মত। এতে শিশুর মেধা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। অথচ শিশুশিক্ষা অভিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত থাকায় শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের বিষয়টি তাদের উপলব্ধিতে আসে না। কারণ তাদের নেই শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন ধারণা। নেই শিশুর পাঠ উন্নয়নের অভিজ্ঞতা।

শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদন নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকের শ্রেণির কার্যক্রম দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন, যাতে শিশু বাড়িতে ফিরে গরম খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকাল ৪টায় খেলাধুলা বা বিনোদনের সুযোগ পায়। বিশ্রামের পর খেলাধুলা করে সজীবতা ও নবপ্রেরণা লাভ করে। এতে শিশু সুস্থ মস্তিষ্কে লেখাপড়ায় মন বসাতে পারবে। শিশুদের বিদ্যালয়ের সময় ৩০/৪০/৫০ মিনিটের পরিবর্তে ১ ঘণ্টা করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষক পাঠের বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিশুদের ভালোভাবে ধারণা দিতে পারেন। রাতে তাদের পাঠের জন্য বেশি সময় ব্যয় হওয়ার কথা নয়। বিদ্যালয়ের সাত পিরিয়ডের পরিবর্তে দৈনিক তিন/চার পিরিয়ডের বেশি হওয়া কাম্য নয়।

প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হলে তাদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে। বছরের পর বছর সমস্যাগুলো ঝুলিয়ে রাখলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডারবিহীনভাবে চলে আসছে। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষা সঠিক পথে এগোতে পারছে না। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। এ উপলদ্ধি সবার মাঝে জাগ্রত হোক।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ