মেডিকেল পড়ুয়ারা এগিয়ে থাকবে যেভাবে

সাফওয়ান রহমান

মেডিকেল জীবন যেকোনো মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জীবনের অনিবার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় মেডিকেলে পড়তে মোট পাঁচ বছর সময় লাগে। কারিকুলাম অনুসারে, প্রায় প্রতিদিনই কোনো বিষয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায় বা টপিক পড়ানো শেষ হলে তার ওপর ‘আইটেম’ দিতে হয়। নির্দিষ্ট বেশ কয়েকটি আইটেম শেষ হলে, ‘কার্ড’ দিতে হয়। তারপর আবার টার্ম। আর শিক্ষাবর্ষের শেষে দিতে হয় পুরো সিলেবাসের ওপর ‘প্রফেশনাল বা প্রফ’ পরীক্ষা (এক অর্থে পুরোই বোর্ড পরীক্ষার মতো। প্রফে একটা বিষয়ে লিখিত, নৈর্ব্যক্তিক, প্র‍্যাকটিকাল, ‘ওসপি’, রিপোর্ট ও খাতা জমাদান ও দুটি করে ভাইভা বোর্ডের সম্মুখীন হতে হয়। এমন পরীক্ষণ পদ্ধতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল ওয়ার্ড ক্লাস করতে হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে একদম রোগীর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে ওই রোগীর রোগ সম্পর্কে ক্লাস করতে হয় (যাকে বলা হয় বেড সাইড টিচিং)। সব মিলিয়ে মেডিকেল জীবনে পরীক্ষা ও ক্লাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা অনেক সময়, অনেক শিক্ষার্থীকেই খানিকটা চাপ অনুভব করায়। তারপরও সবার চেষ্টা থাকে কতটা ভালোভাবে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করে আগানো যায়। আজ আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব।

অ্যানাটমির বহুমাত্রিকতা
প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি। এর মধ্যে এখানে অ্যানাটমির বহুমাত্রিকতা সর্বাধিক। এখানে মানবদেহের মোটামুটিভাবে সব কয়েকটি হাড় বা অস্থি থেকে শুরু করে, দেহের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর বিস্তারিত জানতে হয়। এ ক্ষেত্রে অ্যানাটমিকে শুরু থেকে গুছিয়ে পড়লেই প্রফের আগে অনেক চাপ কমে যায়, যেমন:

  • প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ভিসেরা’ আইটেমের আগে বা পরে, নিজ হাতে একবার ‘ডেমো’ নিজের ফোনে একটা ফোল্ডার করে ভিডিও সেভ করে রাখা যেতে পারে। এতে করে প্রফের আগে চাপ অনেক কমে যায়। একইভাবে প্রতিটি হাড্ডিও এভাবে নিজে ডেমো দিয়ে তা ভিডিও করে রাখলে অনেক উপকার হয়।
  • হিস্টোলজির স্লাইডের ছবি নিজের ফোনে তুলে রেখে, বারবার দেখলে যেকোনো স্লাইড পরে চেনা অনেক সহজ না হয়, না হলে প্রভের আগে সব নতুন লাগবে।
  • embryology-এর জন্য ক্লাস লেকচার ভালোভাবে অনুসরণ করলেই অনেকখানি ভাইভা ও রিটেনের পড়া এগিয়ে থাকবে।
  • অ্যানাটমির অন্যতম টেকনিক্যাল বিষয় হলো সারফেস মার্কিং—এর জন্য করণীয় হলো, গ্রুপ ধরে অনুশীলন করবে, ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও আছে যা দেখে ধারণা স্পষ্ট করা যাবে ও নিজে চক বা পাউডার দিয়ে অবশ্যই অনুশীলন করতে হবে।
  • রেডিওলজির জন্য এক্স-রে বারবার দেখে চিনে রাখলে প্রফের আগে প্রেশার কমে আসে। অ্যানাটমির জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এখন প্রচুর পরিমাণে ইউটিউব রিসোর্স পাওয়া যায়। এগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করলে, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব।

ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি
এবার আসা যাক ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রিতে। এখানে যেমন অনেক আইটেম, তেমনি হলো কার্ডের চাপ। কার্ডের জন্য মোটামুটিভাবে নিজ কলেজের বিগত বছরের প্রশ্নাবলি, ক্লাস লেকচারের নির্দেশনা ও বিগত বোর্ড প্রশ্ন সম্বন্ধে আগে ধারণা থাকলেই ভালো করা সম্ভব। এখানে উভয় সাবজেক্টের ক্ষেত্রেই বেশ কিছু প্র‍্যাকটিক্যাল করা লাগে, যেটাকে বাড়তি একটা চাপ বলে মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেদিন যে বিষয়ে যে প্র‍্যাকটিক্যাল করানো হবে, তার সঙ্গে সঙ্গেই ওদিন নিজের একটু ভালো করে প্র‍্যাকটিস করে নিলেই প্র‍্যাকটিক্যালের কাজটা হাতে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আগারওয়ালা বা ‘ঘাই এর বই থেকে ওই প্র‍্যাকটিক্যাল থেকে অতিরিক্ত কী কী প্রশ্ন হবে দেখে নিলেই এখানে একটা মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তুতি হয়ে যাবে। ফিজিওলজিতে, বিশেষ করে ESR, WBC count, RBC count, Knee jerk reflex, Pupillary light reflex এগুলো আয়ত্তে আনতে হবে। তেমনি বায়োকেমিস্ট্রির serum protein, serum urea-এর মতো প্র‍্যাকটিক্যাল আয়ত্তে থাকতে হবে। প্র‍্যাকটিক্যাল খাতাগুলো একবারে জমিয়ে না করে ভাগ ভাগ করে শেষ করলে চাপ কম হবে।
উল্লেখ্য, হিস্টোলজির জন্যও শিক্ষার্থীদের খাতা প্রস্তুত করতে হয়। এই খাতার ছবিগুলো মোটামুটিভাবে নিজে সব এঁকে করলে, এখানে বাড়তি একটা সুবিধা পাওয়া যায় তা হলো, অ্যানাটমির প্রফে হিস্টোলজির ছবি আঁকতে হয় এবং এতে এই ছবি প্র‍্যাকটিস হয়ে যায়।

তৃতীয় বর্ষ
তৃতীয় বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের একদিকে যেমন থিওরি ক্লাস, আইটেম, টার্ম দিতে হয়। অন্যদিকে শুরু হয় ক্লিনিক্যাল প্লেসমেন্ট, অর্থাৎ ওয়ার্ড ক্লাস। এখানে শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে আলোচনা করতে পারে। একটি থিওরি অংশ, অন্যটি ক্লিনিক্যাল। থিওরি অংশে শিক্ষার্থীদের ফরেনসিক মেডিসিন, টক্সিকোলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন পড়ানো হয়। একই সঙ্গে আছে মেডিসিন ও সার্জারির মতো ক্লাস লেকচার। টক্সিকোলজির জন্য ওই অ্যানাটমির মতোই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ‘পয়জন’ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ ফোনে ‘ডেমো’সহকারে ভিডিও করে রাখতে হবে। ফরেনসিক মেডিসিনের ভাইভায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন weapons নিয়ে তার সম্বন্ধে ভাইভা দিতে হয়। এ জন্য প্রতিটি স্পেসিমেন বারবার নিজ হাতে ধরে বলার অনুশীলন করা থাকলে টার্ম ও প্রফের অনুশীলনও হয়ে যাবে। অন্যদিকে কমিউনিটি মেডিসিনের ক্ষেত্রেই প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আনন্দের সুযোগ রয়েছে। কারণ এই বিভাগের অধীনেই আমরা শিক্ষা সফর ও ‘ডে ভিজিটে’ গমন করি। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জীবনে এটি সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায়গুলোর একটি। একই সঙ্গে এই বিভাগের অধীনেই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রথমভাগে রিসার্চ মেথোডলজি শিখে ও ডেটা কালেকশনের হাতেখড়ি হয়। এই অভিজ্ঞতাগুলো একদিকে যেমন মূল্যবান, তেমনি একঘেয়ে রুটিনের মধ্যে যথেষ্ট প্রেরণাসঞ্চারী।

ক্লিনিক্যাল
এখানে গ্রুপভিত্তিক বিভাজন থাকে। কারও মেডিসিন, কারও সার্জারি, কারও পেডিয়াট্রিকস। মেডিসিনের জন্য শুরুতেই টেক্সট বুক হিসেবে macleod পড়া যেতে পারে। সার্জারির জন্য নর্মান ব্রাউজ, এস দাশের কিছু ভালো বই আছে। থিওরির জন্য এই বইগুলো রাখা যেতে পারে। এসবের পাশাপাশি চাপ সামলাতে, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন প্রচুর পরিমাণে প্রতিযোগিতা হয়, আবার অফলাইনেও হচ্ছে ঢের। এসব আয়োজন নিয়মিত রুটিনের একঘেয়েমি দূর করতে বেশ সহায়ক। তাই মোটামুটি কৌশল করে এগোলেই মেডিকেল রুটিনের চাপকে কিছুটা টেক্কা দেওয়া সম্ভব।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

লেখক: সাফওয়ান রহমান,প্রথম স্থান, দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষা, সেশন ২০১৮-১৯, মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। 

মেডিকেল পড়ুয়ারা এগিয়ে থাকবে যেভাবে

সাফওয়ান রহমান

মেডিকেল জীবন যেকোনো মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জীবনের অনিবার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় মেডিকেলে পড়তে মোট পাঁচ বছর সময় লাগে। কারিকুলাম অনুসারে, প্রায় প্রতিদিনই কোনো বিষয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায় বা টপিক পড়ানো শেষ হলে তার ওপর ‘আইটেম’ দিতে হয়। নির্দিষ্ট বেশ কয়েকটি আইটেম শেষ হলে, ‘কার্ড’ দিতে হয়। তারপর আবার টার্ম। আর শিক্ষাবর্ষের শেষে দিতে হয় পুরো সিলেবাসের ওপর ‘প্রফেশনাল বা প্রফ’ পরীক্ষা (এক অর্থে পুরোই বোর্ড পরীক্ষার মতো। প্রফে একটা বিষয়ে লিখিত, নৈর্ব্যক্তিক, প্র‍্যাকটিকাল, ‘ওসপি’, রিপোর্ট ও খাতা জমাদান ও দুটি করে ভাইভা বোর্ডের সম্মুখীন হতে হয়। এমন পরীক্ষণ পদ্ধতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল ওয়ার্ড ক্লাস করতে হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে একদম রোগীর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে ওই রোগীর রোগ সম্পর্কে ক্লাস করতে হয় (যাকে বলা হয় বেড সাইড টিচিং)। সব মিলিয়ে মেডিকেল জীবনে পরীক্ষা ও ক্লাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা অনেক সময়, অনেক শিক্ষার্থীকেই খানিকটা চাপ অনুভব করায়। তারপরও সবার চেষ্টা থাকে কতটা ভালোভাবে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করে আগানো যায়। আজ আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব।

অ্যানাটমির বহুমাত্রিকতা
প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি। এর মধ্যে এখানে অ্যানাটমির বহুমাত্রিকতা সর্বাধিক। এখানে মানবদেহের মোটামুটিভাবে সব কয়েকটি হাড় বা অস্থি থেকে শুরু করে, দেহের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর বিস্তারিত জানতে হয়। এ ক্ষেত্রে অ্যানাটমিকে শুরু থেকে গুছিয়ে পড়লেই প্রফের আগে অনেক চাপ কমে যায়, যেমন:

  • প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ভিসেরা’ আইটেমের আগে বা পরে, নিজ হাতে একবার ‘ডেমো’ নিজের ফোনে একটা ফোল্ডার করে ভিডিও সেভ করে রাখা যেতে পারে। এতে করে প্রফের আগে চাপ অনেক কমে যায়। একইভাবে প্রতিটি হাড্ডিও এভাবে নিজে ডেমো দিয়ে তা ভিডিও করে রাখলে অনেক উপকার হয়।
  • হিস্টোলজির স্লাইডের ছবি নিজের ফোনে তুলে রেখে, বারবার দেখলে যেকোনো স্লাইড পরে চেনা অনেক সহজ না হয়, না হলে প্রভের আগে সব নতুন লাগবে।
  • embryology-এর জন্য ক্লাস লেকচার ভালোভাবে অনুসরণ করলেই অনেকখানি ভাইভা ও রিটেনের পড়া এগিয়ে থাকবে।
  • অ্যানাটমির অন্যতম টেকনিক্যাল বিষয় হলো সারফেস মার্কিং—এর জন্য করণীয় হলো, গ্রুপ ধরে অনুশীলন করবে, ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও আছে যা দেখে ধারণা স্পষ্ট করা যাবে ও নিজে চক বা পাউডার দিয়ে অবশ্যই অনুশীলন করতে হবে।
  • রেডিওলজির জন্য এক্স-রে বারবার দেখে চিনে রাখলে প্রফের আগে প্রেশার কমে আসে। অ্যানাটমির জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এখন প্রচুর পরিমাণে ইউটিউব রিসোর্স পাওয়া যায়। এগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করলে, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব।

ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি
এবার আসা যাক ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রিতে। এখানে যেমন অনেক আইটেম, তেমনি হলো কার্ডের চাপ। কার্ডের জন্য মোটামুটিভাবে নিজ কলেজের বিগত বছরের প্রশ্নাবলি, ক্লাস লেকচারের নির্দেশনা ও বিগত বোর্ড প্রশ্ন সম্বন্ধে আগে ধারণা থাকলেই ভালো করা সম্ভব। এখানে উভয় সাবজেক্টের ক্ষেত্রেই বেশ কিছু প্র‍্যাকটিক্যাল করা লাগে, যেটাকে বাড়তি একটা চাপ বলে মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেদিন যে বিষয়ে যে প্র‍্যাকটিক্যাল করানো হবে, তার সঙ্গে সঙ্গেই ওদিন নিজের একটু ভালো করে প্র‍্যাকটিস করে নিলেই প্র‍্যাকটিক্যালের কাজটা হাতে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আগারওয়ালা বা ‘ঘাই এর বই থেকে ওই প্র‍্যাকটিক্যাল থেকে অতিরিক্ত কী কী প্রশ্ন হবে দেখে নিলেই এখানে একটা মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তুতি হয়ে যাবে। ফিজিওলজিতে, বিশেষ করে ESR, WBC count, RBC count, Knee jerk reflex, Pupillary light reflex এগুলো আয়ত্তে আনতে হবে। তেমনি বায়োকেমিস্ট্রির serum protein, serum urea-এর মতো প্র‍্যাকটিক্যাল আয়ত্তে থাকতে হবে। প্র‍্যাকটিক্যাল খাতাগুলো একবারে জমিয়ে না করে ভাগ ভাগ করে শেষ করলে চাপ কম হবে।
উল্লেখ্য, হিস্টোলজির জন্যও শিক্ষার্থীদের খাতা প্রস্তুত করতে হয়। এই খাতার ছবিগুলো মোটামুটিভাবে নিজে সব এঁকে করলে, এখানে বাড়তি একটা সুবিধা পাওয়া যায় তা হলো, অ্যানাটমির প্রফে হিস্টোলজির ছবি আঁকতে হয় এবং এতে এই ছবি প্র‍্যাকটিস হয়ে যায়।

তৃতীয় বর্ষ
তৃতীয় বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের একদিকে যেমন থিওরি ক্লাস, আইটেম, টার্ম দিতে হয়। অন্যদিকে শুরু হয় ক্লিনিক্যাল প্লেসমেন্ট, অর্থাৎ ওয়ার্ড ক্লাস। এখানে শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে আলোচনা করতে পারে। একটি থিওরি অংশ, অন্যটি ক্লিনিক্যাল। থিওরি অংশে শিক্ষার্থীদের ফরেনসিক মেডিসিন, টক্সিকোলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন পড়ানো হয়। একই সঙ্গে আছে মেডিসিন ও সার্জারির মতো ক্লাস লেকচার। টক্সিকোলজির জন্য ওই অ্যানাটমির মতোই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ‘পয়জন’ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ ফোনে ‘ডেমো’সহকারে ভিডিও করে রাখতে হবে। ফরেনসিক মেডিসিনের ভাইভায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন weapons নিয়ে তার সম্বন্ধে ভাইভা দিতে হয়। এ জন্য প্রতিটি স্পেসিমেন বারবার নিজ হাতে ধরে বলার অনুশীলন করা থাকলে টার্ম ও প্রফের অনুশীলনও হয়ে যাবে। অন্যদিকে কমিউনিটি মেডিসিনের ক্ষেত্রেই প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আনন্দের সুযোগ রয়েছে। কারণ এই বিভাগের অধীনেই আমরা শিক্ষা সফর ও ‘ডে ভিজিটে’ গমন করি। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জীবনে এটি সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায়গুলোর একটি। একই সঙ্গে এই বিভাগের অধীনেই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রথমভাগে রিসার্চ মেথোডলজি শিখে ও ডেটা কালেকশনের হাতেখড়ি হয়। এই অভিজ্ঞতাগুলো একদিকে যেমন মূল্যবান, তেমনি একঘেয়ে রুটিনের মধ্যে যথেষ্ট প্রেরণাসঞ্চারী।

ক্লিনিক্যাল
এখানে গ্রুপভিত্তিক বিভাজন থাকে। কারও মেডিসিন, কারও সার্জারি, কারও পেডিয়াট্রিকস। মেডিসিনের জন্য শুরুতেই টেক্সট বুক হিসেবে macleod পড়া যেতে পারে। সার্জারির জন্য নর্মান ব্রাউজ, এস দাশের কিছু ভালো বই আছে। থিওরির জন্য এই বইগুলো রাখা যেতে পারে। এসবের পাশাপাশি চাপ সামলাতে, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন প্রচুর পরিমাণে প্রতিযোগিতা হয়, আবার অফলাইনেও হচ্ছে ঢের। এসব আয়োজন নিয়মিত রুটিনের একঘেয়েমি দূর করতে বেশ সহায়ক। তাই মোটামুটি কৌশল করে এগোলেই মেডিকেল রুটিনের চাপকে কিছুটা টেক্কা দেওয়া সম্ভব।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

লেখক: সাফওয়ান রহমান,প্রথম স্থান, দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষা, সেশন ২০১৮-১৯, মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।