মেধার সমাদর যদি না হয়

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা , প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টিভি।

যদি প্রশ্ন করা হয়, দেশ থেকে মেধা পাচার হয় কেন, তাহলে সহজ উত্তর হবে যে, মানুষের মেধা আর পুঁজি, এ দুটুকে সীমানায় আটকে রাখা যায় না। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথাটা ভিন্ন। এখানে মেধাবীরা আসলে করবে কী? যে সমাজে মেধার কোন মূল্য দেয়া হয় না, সে সমাজে মেধাবীরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনা সেখান থেকে হয় পালিয়ে যেতে হয়, কিংবা হতাশায় জীবন শেষ করে দিতে হয়।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা, মেধা কাজে লাগানোর জন্য ক্ষেত্রের অভাবসহ বিকশিত হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় প্রায় সব মেধাবীই চেষ্টা করেন উন্নত দেশে চলে যেতে যেখানে গবেষণার সুযোগ আছে, প্রযুক্তি আছে, আছে জীবনের স্থিতিশীলতা। দেশ তার সবচেয়ে মেধাবী, জ্ঞানী, দক্ষ ও যোগ্য নাগরিককে হারাচ্ছে- এভাবেই।মেধার বহির্গমন অনেক বছর ধরেই চলছিল। আমরা আক্ষেপ করেছি তা নিয়ে, কিন্তু রুখতে পারিনি। মেধাবীদের যে অংশ এখনও রয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ ধরে রাখতে পারছি না। অবস্থাটা উল্টো দিকে ঘোরাতে না পারলে, ভবিষ্যৎ আরও মেঘাচ্ছন্ন হবে। ভাবা দরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, আঁতকে ওঠা দরকার বড় করে

এ বছর মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে যে শুধু সম্পদ ও পুঁজি চলে যাচ্ছে তা নয়, তারা যে মানবিক সম্পদ- সেটা চলে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার পরে যে তরুণ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তারা অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন আর ফেরত আসেননি। মেধাবীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে এবং দেশে মেধার বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ যাতে তৈরি হয় সেটা হচ্ছে না।

বুয়েটের ছাত্র আবরার আর ফারদিন হত্যার পর প্রশ্ন উঠছে, আমাদের মেধাবী সন্তানরা কেন এভাবে খুন হয়ে যায়? আর তখনই আরো বড় করে ভাবনা আসে মেধাবীরা কেন থাকবে এ দেশে? কিছুদিন আগে আরেক শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটি কথা সমাজকে নাড়া দিয়েছে বড় করে। তিনি বলেছেন, দেশে কোন বিজ্ঞানী নেই, গবেষক নেই, দার্শনিক নেই। যেদিকে তাকাবেন শুধুই প্রশাসক।

একটি বিসিএস সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ সমাজের একমাত্র আকাঙক্ষা একটা সরকারি চাকরি। কোনভাবে একটা প্রশাসন ক্যাডারের চাকুরী জুটে গেলেই হলো, আর কোন ভাবনা নেই। মান, সন্মান, মর্যাদাম অর্থ বিত্ত সব হাতের মুঠোয়। আর কাউকে গোনায় ধরার প্রযজন নেই। অন্য সরকারি চাকুরিও তাই। ক্ষমতা আর নিশ্চয়তার এমন গাটছাড়া আর কিছুতে নেই।

মেধাবী মানুষ তিনি গবেষক হন, বিজ্ঞানী হন, সর্বত্রই অবহেলিত, উপেক্ষিত, অপদস্ত। তাই বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই যে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই পড়াশোনা শেষ করে আর ফিরতে চান না। এতে করে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী হারাচ্ছে। যাঁরা কাজে আছেন তারাও সুযোগ পেলে চলে যান, চলে যেতে চান।

মেধা চলে যাচ্ছে বলে একটা আক্ষেপ শোনা যায়। এ দেশ থেকে মেধাবীরা পরিযায়ী হচ্ছেন বলে হা-হুতাশ শোনা যায়। কেন মেধার নির্গমন ঘটছে, তা কিন্তু অনেকেই তলিয়ে ভাবার চেষ্টা করি না। যদি বা কেউ তলিয়ে ভাবি, মেধাবীদের ধরে রাখার বৈধ উপায় আমরা খোঁজার চেষ্টা করি না।

সরকারি অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা ছেলে। পিয়ন পদের জন্য আবেদন! আমরা আঁতকে উঠছি আজ। কিন্তু আজ নয়, আরও অনেক আগে এই আঁতকে ওঠাটা জরুরি ছিল। মেধার জন্য শুধু হা-হুতাশ করলেই চলে না। মেধার সমাদর করতেও জানতে হয়। সে আমরা কতটুকু করেছি সে প্রশ্নটা নিজেদেরই করা দরকার। মেধাবী ছেলেমেয়ের অভাব নেই দেশে। কিন্তু মেধার বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি জরুরি, পর্যাপ্ত কাঠামো জরুরি।

মেধার সমাদর বলতে আমরা বুঝি মেধার বিকাশের সুযোগ দেয়া। মেধা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা। মেধার বিকাশের জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে ওঠা। উচ্চশিক্ষার জন্য শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান আছে দেশ জুড়ে। কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সুযোগ কেমন, কাঠামো কেমন, মেধার বিকাশের সহায়ক বন্দোবস্ত কতটা রয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মানের সঙ্গে এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান তুলনা করলে সেটা কোন পর্যায়ে দাঁড়ায়– সে সব খোঁজ আমরা রাখিনা।

ব্যাঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠানে তীক্ষ্ণধী প্রকৌশলী তৈরি হয়, নাকি শুধু বিসিএসগামী স্নাতক সৃষ্টি হয় সে খবর কে রাখে? তাই প্রতিযোগিতার এ বাজারে পিছিয়ে যায় মুখস্থ বিদ্যার বাইরের সৃজনশীলরা।

কর্মসংস্থান তো খুবই কম। না সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থান রয়েছে, না বেসরকারি উদ্যোগের বিপুল বিকাশ ঘটেছে। গবেষণা, বিজ্ঞান চর্চা, যুক্তি চর্চার কোন পরিবেশ গড়ে তোলাই গেলনা স্বাধীনতার অর্ধ-শতাব্দীতে। শিক্ষা শেষ করে উপযুক্ত কাজ মিলবে, এমন নিশ্চয়তা শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কেউ পান না।

তবে একথাও ঠিক যে, এতো সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বহু দূর এগিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই, সাফল্যের স্বাক্ষরও রাখছেন। কিন্তু সেটা সামগ্রিক চিত্র নয়। সেটা দিয়ে পরিস্থিতি বিচারও করা যায় না। জ্ঞানী ও গবেষক মন এ সমাজে নিশ্চয়তা পায় না। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি জাতির জন্য।

একদিনে এ অবস্থা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে অবহেলা-অযত্নের কারণে পরিস্থিতি এমন নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। মেধার বহির্গমন অনেক বছর ধরেই চলছিল। আমরা আক্ষেপ করেছি তা নিয়ে, কিন্তু রুখতে পারিনি। মেধাবীদের যে অংশ এখনও রয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ ধরে রাখতে পারছি না। অবস্থাটা উল্টো দিকে ঘোরাতে না পারলে, ভবিষ্যৎ আরও মেঘাচ্ছন্ন হবে। ভাবা দরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, আঁতকে ওঠা দরকার বড় করে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন।

এইচআর/এএসএম

মেধার সমাদর যদি না হয়

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা , প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টিভি।

যদি প্রশ্ন করা হয়, দেশ থেকে মেধা পাচার হয় কেন, তাহলে সহজ উত্তর হবে যে, মানুষের মেধা আর পুঁজি, এ দুটুকে সীমানায় আটকে রাখা যায় না। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথাটা ভিন্ন। এখানে মেধাবীরা আসলে করবে কী? যে সমাজে মেধার কোন মূল্য দেয়া হয় না, সে সমাজে মেধাবীরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনা সেখান থেকে হয় পালিয়ে যেতে হয়, কিংবা হতাশায় জীবন শেষ করে দিতে হয়।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা, মেধা কাজে লাগানোর জন্য ক্ষেত্রের অভাবসহ বিকশিত হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় প্রায় সব মেধাবীই চেষ্টা করেন উন্নত দেশে চলে যেতে যেখানে গবেষণার সুযোগ আছে, প্রযুক্তি আছে, আছে জীবনের স্থিতিশীলতা। দেশ তার সবচেয়ে মেধাবী, জ্ঞানী, দক্ষ ও যোগ্য নাগরিককে হারাচ্ছে- এভাবেই।মেধার বহির্গমন অনেক বছর ধরেই চলছিল। আমরা আক্ষেপ করেছি তা নিয়ে, কিন্তু রুখতে পারিনি। মেধাবীদের যে অংশ এখনও রয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ ধরে রাখতে পারছি না। অবস্থাটা উল্টো দিকে ঘোরাতে না পারলে, ভবিষ্যৎ আরও মেঘাচ্ছন্ন হবে। ভাবা দরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, আঁতকে ওঠা দরকার বড় করে

এ বছর মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে যে শুধু সম্পদ ও পুঁজি চলে যাচ্ছে তা নয়, তারা যে মানবিক সম্পদ- সেটা চলে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার পরে যে তরুণ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তারা অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন আর ফেরত আসেননি। মেধাবীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে এবং দেশে মেধার বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ যাতে তৈরি হয় সেটা হচ্ছে না।

বুয়েটের ছাত্র আবরার আর ফারদিন হত্যার পর প্রশ্ন উঠছে, আমাদের মেধাবী সন্তানরা কেন এভাবে খুন হয়ে যায়? আর তখনই আরো বড় করে ভাবনা আসে মেধাবীরা কেন থাকবে এ দেশে? কিছুদিন আগে আরেক শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটি কথা সমাজকে নাড়া দিয়েছে বড় করে। তিনি বলেছেন, দেশে কোন বিজ্ঞানী নেই, গবেষক নেই, দার্শনিক নেই। যেদিকে তাকাবেন শুধুই প্রশাসক।

একটি বিসিএস সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ সমাজের একমাত্র আকাঙক্ষা একটা সরকারি চাকরি। কোনভাবে একটা প্রশাসন ক্যাডারের চাকুরী জুটে গেলেই হলো, আর কোন ভাবনা নেই। মান, সন্মান, মর্যাদাম অর্থ বিত্ত সব হাতের মুঠোয়। আর কাউকে গোনায় ধরার প্রযজন নেই। অন্য সরকারি চাকুরিও তাই। ক্ষমতা আর নিশ্চয়তার এমন গাটছাড়া আর কিছুতে নেই।

মেধাবী মানুষ তিনি গবেষক হন, বিজ্ঞানী হন, সর্বত্রই অবহেলিত, উপেক্ষিত, অপদস্ত। তাই বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই যে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই পড়াশোনা শেষ করে আর ফিরতে চান না। এতে করে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী হারাচ্ছে। যাঁরা কাজে আছেন তারাও সুযোগ পেলে চলে যান, চলে যেতে চান।

মেধা চলে যাচ্ছে বলে একটা আক্ষেপ শোনা যায়। এ দেশ থেকে মেধাবীরা পরিযায়ী হচ্ছেন বলে হা-হুতাশ শোনা যায়। কেন মেধার নির্গমন ঘটছে, তা কিন্তু অনেকেই তলিয়ে ভাবার চেষ্টা করি না। যদি বা কেউ তলিয়ে ভাবি, মেধাবীদের ধরে রাখার বৈধ উপায় আমরা খোঁজার চেষ্টা করি না।

সরকারি অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা ছেলে। পিয়ন পদের জন্য আবেদন! আমরা আঁতকে উঠছি আজ। কিন্তু আজ নয়, আরও অনেক আগে এই আঁতকে ওঠাটা জরুরি ছিল। মেধার জন্য শুধু হা-হুতাশ করলেই চলে না। মেধার সমাদর করতেও জানতে হয়। সে আমরা কতটুকু করেছি সে প্রশ্নটা নিজেদেরই করা দরকার। মেধাবী ছেলেমেয়ের অভাব নেই দেশে। কিন্তু মেধার বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি জরুরি, পর্যাপ্ত কাঠামো জরুরি।

মেধার সমাদর বলতে আমরা বুঝি মেধার বিকাশের সুযোগ দেয়া। মেধা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা। মেধার বিকাশের জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে ওঠা। উচ্চশিক্ষার জন্য শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান আছে দেশ জুড়ে। কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সুযোগ কেমন, কাঠামো কেমন, মেধার বিকাশের সহায়ক বন্দোবস্ত কতটা রয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মানের সঙ্গে এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান তুলনা করলে সেটা কোন পর্যায়ে দাঁড়ায়– সে সব খোঁজ আমরা রাখিনা।

ব্যাঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠানে তীক্ষ্ণধী প্রকৌশলী তৈরি হয়, নাকি শুধু বিসিএসগামী স্নাতক সৃষ্টি হয় সে খবর কে রাখে? তাই প্রতিযোগিতার এ বাজারে পিছিয়ে যায় মুখস্থ বিদ্যার বাইরের সৃজনশীলরা।

কর্মসংস্থান তো খুবই কম। না সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থান রয়েছে, না বেসরকারি উদ্যোগের বিপুল বিকাশ ঘটেছে। গবেষণা, বিজ্ঞান চর্চা, যুক্তি চর্চার কোন পরিবেশ গড়ে তোলাই গেলনা স্বাধীনতার অর্ধ-শতাব্দীতে। শিক্ষা শেষ করে উপযুক্ত কাজ মিলবে, এমন নিশ্চয়তা শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কেউ পান না।

তবে একথাও ঠিক যে, এতো সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বহু দূর এগিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই, সাফল্যের স্বাক্ষরও রাখছেন। কিন্তু সেটা সামগ্রিক চিত্র নয়। সেটা দিয়ে পরিস্থিতি বিচারও করা যায় না। জ্ঞানী ও গবেষক মন এ সমাজে নিশ্চয়তা পায় না। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি জাতির জন্য।

একদিনে এ অবস্থা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে অবহেলা-অযত্নের কারণে পরিস্থিতি এমন নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। মেধার বহির্গমন অনেক বছর ধরেই চলছিল। আমরা আক্ষেপ করেছি তা নিয়ে, কিন্তু রুখতে পারিনি। মেধাবীদের যে অংশ এখনও রয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ ধরে রাখতে পারছি না। অবস্থাটা উল্টো দিকে ঘোরাতে না পারলে, ভবিষ্যৎ আরও মেঘাচ্ছন্ন হবে। ভাবা দরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, আঁতকে ওঠা দরকার বড় করে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন।

এইচআর/এএসএম