শিক্ষায় উন্নতি সত্ত্বেও অব্যবস্থাপনা কেন

মো. শফিকুল ইসলাম

পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার চিত্র দেখলে খুব হতাশ লাগে।ফাইল ছবি

মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রমসমূহ অ্যাক্রেডিট করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকারের।

এ ছাড়া শিক্ষায় নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। যেমন পরীক্ষার হলে নকলের এক মহড়া চলছে। কেউ কেউ বলছে নকলের হাটবাজার। শিক্ষকেরাও নকলের কাজে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ইদানীং পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রচারিত নানা সংবাদ বা ঘটনা গোটা জাতিকে লজ্জাজনক অবস্থানে ফেলে দিয়েছে। যার জন্য চারজন শিক্ষক বহিষ্কৃত হয়েছেন। শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস খুবই দুঃখজনক ঘটনা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণমাধ্যমে দেখলাম, জামালপুর জেলার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নকল করার ঘটনা। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার হল হিসেবে কোনো কার্যকর অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। কেন এসব ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ছে। এসব রোধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি এমনভাবে দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এ রকম অপরাধ ঘটাতে না পারে। সম্পূর্ণভাবে এসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে।

আবার লক্ষ করা যায়, শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ হতে চললেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই। ফলে শিক্ষা অফিসের বইগুলোতে উইপোকা ধরেছে। আর শেষ পর্যন্ত এসব বইয়ের ঠাঁই হচ্ছে ঝোপঝাড়ে। আর এ ঘটনা ঘটছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কার্যালয়ের ভবনের পেছনের জঙ্গলে মিলেছে এমনই কিছু বইয়ের বান্ডিল, যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে বইগুলো ঝোপঝাড় থেকে তুলে বস্তায় ভরে আবার শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোডাউনে নিয়ে রাখা হয়। এটা ঘটছে, কারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন গোডাউনে ফেলে রাখায় বইগুলো উইপোকায় ধরে নষ্ট করে ফেলেছে। শিক্ষাকে মেরুদণ্ড বলা হয়; কিন্তু এখন দেখা যায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার জাতির মেরুদণ্ড নষ্ট করে ফেলছে। কারণ, দুর্নীতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারপ্রধান জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর দুর্নীতি কমছে না।

মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রমসমূহ অ্যাক্রেডিট করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকারের।কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং–নির্ভরতা, শিক্ষায় দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। তাহলে জাতি প্রকৃত মানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পাবে বলে বিশ্বাস করি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত মেনে চলতে হবে। শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষকদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যা সরকারের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রাথমিক স্কুলে বা পর্যায়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে ক্লাসের শীর্ষ স্থান অধিকারীরা ওই পদে চাকরি করতে আগ্রহী হন।

মো. শফিকুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষায় উন্নতি সত্ত্বেও অব্যবস্থাপনা কেন

মো. শফিকুল ইসলাম

পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার চিত্র দেখলে খুব হতাশ লাগে।ফাইল ছবি

মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রমসমূহ অ্যাক্রেডিট করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকারের।

এ ছাড়া শিক্ষায় নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। যেমন পরীক্ষার হলে নকলের এক মহড়া চলছে। কেউ কেউ বলছে নকলের হাটবাজার। শিক্ষকেরাও নকলের কাজে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ইদানীং পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রচারিত নানা সংবাদ বা ঘটনা গোটা জাতিকে লজ্জাজনক অবস্থানে ফেলে দিয়েছে। যার জন্য চারজন শিক্ষক বহিষ্কৃত হয়েছেন। শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস খুবই দুঃখজনক ঘটনা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণমাধ্যমে দেখলাম, জামালপুর জেলার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নকল করার ঘটনা। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার হল হিসেবে কোনো কার্যকর অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। কেন এসব ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ছে। এসব রোধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি এমনভাবে দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এ রকম অপরাধ ঘটাতে না পারে। সম্পূর্ণভাবে এসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে।

আবার লক্ষ করা যায়, শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ হতে চললেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই। ফলে শিক্ষা অফিসের বইগুলোতে উইপোকা ধরেছে। আর শেষ পর্যন্ত এসব বইয়ের ঠাঁই হচ্ছে ঝোপঝাড়ে। আর এ ঘটনা ঘটছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কার্যালয়ের ভবনের পেছনের জঙ্গলে মিলেছে এমনই কিছু বইয়ের বান্ডিল, যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে বইগুলো ঝোপঝাড় থেকে তুলে বস্তায় ভরে আবার শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোডাউনে নিয়ে রাখা হয়। এটা ঘটছে, কারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন গোডাউনে ফেলে রাখায় বইগুলো উইপোকায় ধরে নষ্ট করে ফেলেছে। শিক্ষাকে মেরুদণ্ড বলা হয়; কিন্তু এখন দেখা যায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার জাতির মেরুদণ্ড নষ্ট করে ফেলছে। কারণ, দুর্নীতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারপ্রধান জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর দুর্নীতি কমছে না।

মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রমসমূহ অ্যাক্রেডিট করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকারের।কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং–নির্ভরতা, শিক্ষায় দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। তাহলে জাতি প্রকৃত মানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পাবে বলে বিশ্বাস করি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত মেনে চলতে হবে। শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষকদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যা সরকারের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রাথমিক স্কুলে বা পর্যায়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে ক্লাসের শীর্ষ স্থান অধিকারীরা ওই পদে চাকরি করতে আগ্রহী হন।

মো. শফিকুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাগ