সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসা ও আবদুল কাদের জিলানী

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার

বড় পির আবদুল কাদের জিলানী ৪৭০ হিজরির রমজান মাসের প্রথম দিন পারস্যের তাবারিস্তানের জিলাননগরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শুরুতে তিনি তার মা উম্মুল খায়ের ফাতেমার কাছে আল কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। পিতা আবু সালেহ মুসার কাছে জীবন সম্পর্কিত নানা বিষয়ে পাঠ নেন।

গভীর ধীশক্তি, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা ও বিরল মেধার অধিকারী হওয়ায় আবদুল কাদের জিলানী অল্প সময়ে অসাধারণ পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ওই গুণের কারণে তিনি বাল্যকালেই খুব সহজে শিক্ষক ও সহপাঠীদের নজর কাড়তে সক্ষম হন। তার পিতার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় তাকে বাল্যকালে অন্নসংস্থানের জন্য চিন্তা করতে হয়নি। তিনি একনিষ্ঠ মনে পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পান। কিন্তু আকস্মিক তার পিতা মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার অর্থকষ্টে পড়ে। পরিবারে একমাত্র বৃদ্ধ মা ছাড়া অন্য কোনো সদস্য না থাকায় সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব কিশোর আবদুল কাদেরের ওপর অর্পিত হয়। ফলে তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া জায়গা-জমি চাষ, ফলের বাগান ও গবাদিপশুর পরিচর্যায় আত্মনিয়োগ করেন।

জ্ঞানের প্রতি গভীর টান থাকায় কিশোর আবদুল কাদেরের ওই সাংসারিক জীবন ভালো লাগেনি। তার মন আশা-নিরাশা ও সিদ্ধান্তহীনতার দ্বন্দ্বে জ্বলতে থাকে। জ্ঞানের সাধনায় নিজেকে আবারও নিযুক্ত করার জন্য তিনি উন্মুখ হয়ে পড়েন। ১৮ বছর বয়সে তিনি পারস্যের জিলাননগর থেকে পাড়ি জমান তৎকালীন সময়ের জ্ঞানবিজ্ঞানের বাতিঘর-খ্যাত বাগদাদে। বাগদাদ পৌঁছে বড় পির হজরত আবদুল কাদের জিলানী তৎকালীন সময়ের বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ওই মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিনি বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, হাদিস ও তাফসির শাস্ত্র, ফিকাহ, সাহিত্য, ভূগোল ও ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। জগৎশ্রেষ্ঠ শিক্ষকরা নিযামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি প্রখর ধীশক্তি, বিরল মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে অচিরেই ওই সব শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্রে পরিণত হন।

অর্থ উপার্জনের বদলে জ্ঞান অর্জন ছিল আবদুল কাদেরের জীবনের সাধনা। তাই দুঃখ, কষ্ট ও দৈন্যতায় পতিত হয়েও চূড়ান্ত ফলাফলে তিনি নিযামিয়া মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদের অধিকারী হন। তৎকালীন সময়ের ধর্ম, বিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ে হজরত আবদুল কাদের জিলানীর সমকক্ষ অন্য কোনো পণ্ডিত ছিলেন না বললেই চলে। শিক্ষাগ্রহণ শেষে উচ্চপদে চাকরির নানা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের অর্জিত জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মানসে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

আবদুল কাদের নিযামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র হলেও শিক্ষকতা শুরু করেন তৎকালীন সময়ের আরও একটি শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কাদেরিয়া মাদ্রাসায়। হজরত আবদুল কাদের জিলানীর শিক্ষক শায়খ মুবারক কাদেরিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি অতিশয় বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তার পক্ষে কাদেরিয়া মাদ্রাসা সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি আবদুল কাদের জিলানীকে তার মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। হজরত আবদুল কাদের জিলানী শায়খ মুবারকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের দুই বেলা শিক্ষা প্রদান করতেন। তিনি সকালে ফজরের নামাজ পড়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান শুরু করতেন। জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত ওই পাঠদান চলত।

ওই সময়ে আবদুল কাদের শিক্ষার্থীদের হাদিস, ন্যায়বিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, উসুল ও সাহিত্য এবং ব্যাকরণের পাঠ দিতেন। জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ ও হালকা বিশ্রাম শেষে তিনি পুনরায় শিক্ষার্থীদের এশা পর্যন্ত পাঠ দান করতেন। ওই সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আল কোরআন, অনুবাদশাস্ত্র, ফিকাহ ও তৌহিদ সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করতেন।

হজরত আবদুল কাদের জিলানী অল্প সময়ে শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তার খ্যাতি এত বিস্তৃত হয় যে, অচিরেই বাগদাদে অবস্থিত ও শায়খ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ওই মাদ্রাসাটি তার প্রতিষ্ঠাকালীন নামের বদলে হজরত আবদুল কাদের জিলানী নামে কাদেরিয়া মাদ্রাসা হিসেবে দুনিয়াব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে। তিনি সব ধর্মের, সব মতের, সব দেশের মানুষের জন্য মাদ্রাসার দরজা খুলে দেন। পড়ার পরিবেশ ও কারিকুলাম তৈরি করেন। ফলে এশিয়া, ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে দলে দলে ছাত্ররা তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ভিড় জমায়। নতুন নতুন শিক্ষার্থীর আগমনের ফলে মাদ্রাসার গৃহ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে পাঠ গ্রহণ করা ছাত্রদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ছাত্ররা খোলা মাঠ, অলিতে-গলিতে দাঁড়িয়ে, বৃক্ষছায়া ও বাসগৃহের ওপর বসে বড় পির হজরত আবদুল কাদের জিলানীর পাঠ গ্রহণ করতেন। এমতাবস্থায় কাদেরিয়া মাদ্রাসার পরিসর বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

বৃদ্ধ শায়খ মুবারকের পক্ষে ওই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা অসম্ভব ছিল বিধায় হজরত আবদুল কাদের জিলানী শিক্ষকতার পাশাপাশি কাদেরিয়া মাদ্রাসার অবকাঠামো নির্মাণেও মনোযোগী হন। তিনি মাদ্রাসার সম্প্রসারণের জন্য সঙ্গতিসম্পন্ন ও শিক্ষাপ্রাণ মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। খ্যাতিমান শিক্ষক হজরত আবদুল কাদের জিলানীর আহ্বানে দলে দলে মানুষ সাড়া দেন। অনেকে আর্থিকভাবে, আবার কেউ কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে মাদ্রাসার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখেন। নারীরাও ওই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে যুক্ত হন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে কাদেরিয়া মাদ্রাসার জায়গা ও অবকাঠামো সমস্যার সমাধান হয়।

চারদিকে যখন হজরত আবদুল কাদের জিলানীর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনি নিজ জন্মভূমি জিলানে ফিরে যাওয়ার মনস্থির করেন। তার বাগদাদ ত্যাগ করে জিলানে ফিরে যাওয়ার সংবাদ অবগত হয়ে বাগদাদবাসী রাস্তায় নেমে আসে। তারা কোনোভাবেই হজরত আবদুল কাদের জিলানীকে বাগদাদ ত্যাগ করতে দিতে রাজি ছিল না। ফলে তার পক্ষে আর বাগদাদ ত্যাগ করে জিলানে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এভাবে তিনি বাগদাদের সঙ্গে আমৃত্যু তার ভাগ্যকে জড়িয়ে ফেলেন।

পরে ৯১ বছর বয়সে ১১ রবিউস সানি ৫৬১ হিজরিতে বাগদাদ নগরেই আবদুল কাদের জিলানী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন আধ্যাত্মিক গুরুও। সেই কারণে তাকে সুফিদের ওস্তাদ বলা হয়। তার ছাত্রদের পাশাপাশি সুফিরাও তাকে সমানভাবে সম্মান করতেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

হাইলাইটস: আবদুল কাদের সব ধর্মের, সব মতের, সব দেশের মানুষের জন্য মাদ্রাসার দরজা খুলে দেন। পড়ার পরিবেশ ও কারিকুলাম তৈরি করেন। ফলে এশিয়া, ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে দলে দলে ছাত্ররা তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ভিড় জমায়।

সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসা ও আবদুল কাদের জিলানী

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার

বড় পির আবদুল কাদের জিলানী ৪৭০ হিজরির রমজান মাসের প্রথম দিন পারস্যের তাবারিস্তানের জিলাননগরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শুরুতে তিনি তার মা উম্মুল খায়ের ফাতেমার কাছে আল কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। পিতা আবু সালেহ মুসার কাছে জীবন সম্পর্কিত নানা বিষয়ে পাঠ নেন।

গভীর ধীশক্তি, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা ও বিরল মেধার অধিকারী হওয়ায় আবদুল কাদের জিলানী অল্প সময়ে অসাধারণ পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ওই গুণের কারণে তিনি বাল্যকালেই খুব সহজে শিক্ষক ও সহপাঠীদের নজর কাড়তে সক্ষম হন। তার পিতার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় তাকে বাল্যকালে অন্নসংস্থানের জন্য চিন্তা করতে হয়নি। তিনি একনিষ্ঠ মনে পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পান। কিন্তু আকস্মিক তার পিতা মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার অর্থকষ্টে পড়ে। পরিবারে একমাত্র বৃদ্ধ মা ছাড়া অন্য কোনো সদস্য না থাকায় সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব কিশোর আবদুল কাদেরের ওপর অর্পিত হয়। ফলে তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া জায়গা-জমি চাষ, ফলের বাগান ও গবাদিপশুর পরিচর্যায় আত্মনিয়োগ করেন।

জ্ঞানের প্রতি গভীর টান থাকায় কিশোর আবদুল কাদেরের ওই সাংসারিক জীবন ভালো লাগেনি। তার মন আশা-নিরাশা ও সিদ্ধান্তহীনতার দ্বন্দ্বে জ্বলতে থাকে। জ্ঞানের সাধনায় নিজেকে আবারও নিযুক্ত করার জন্য তিনি উন্মুখ হয়ে পড়েন। ১৮ বছর বয়সে তিনি পারস্যের জিলাননগর থেকে পাড়ি জমান তৎকালীন সময়ের জ্ঞানবিজ্ঞানের বাতিঘর-খ্যাত বাগদাদে। বাগদাদ পৌঁছে বড় পির হজরত আবদুল কাদের জিলানী তৎকালীন সময়ের বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ওই মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিনি বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, হাদিস ও তাফসির শাস্ত্র, ফিকাহ, সাহিত্য, ভূগোল ও ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। জগৎশ্রেষ্ঠ শিক্ষকরা নিযামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি প্রখর ধীশক্তি, বিরল মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে অচিরেই ওই সব শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্রে পরিণত হন।

অর্থ উপার্জনের বদলে জ্ঞান অর্জন ছিল আবদুল কাদেরের জীবনের সাধনা। তাই দুঃখ, কষ্ট ও দৈন্যতায় পতিত হয়েও চূড়ান্ত ফলাফলে তিনি নিযামিয়া মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদের অধিকারী হন। তৎকালীন সময়ের ধর্ম, বিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ে হজরত আবদুল কাদের জিলানীর সমকক্ষ অন্য কোনো পণ্ডিত ছিলেন না বললেই চলে। শিক্ষাগ্রহণ শেষে উচ্চপদে চাকরির নানা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের অর্জিত জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মানসে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

আবদুল কাদের নিযামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র হলেও শিক্ষকতা শুরু করেন তৎকালীন সময়ের আরও একটি শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কাদেরিয়া মাদ্রাসায়। হজরত আবদুল কাদের জিলানীর শিক্ষক শায়খ মুবারক কাদেরিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি অতিশয় বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তার পক্ষে কাদেরিয়া মাদ্রাসা সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি আবদুল কাদের জিলানীকে তার মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। হজরত আবদুল কাদের জিলানী শায়খ মুবারকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের দুই বেলা শিক্ষা প্রদান করতেন। তিনি সকালে ফজরের নামাজ পড়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান শুরু করতেন। জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত ওই পাঠদান চলত।

ওই সময়ে আবদুল কাদের শিক্ষার্থীদের হাদিস, ন্যায়বিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, উসুল ও সাহিত্য এবং ব্যাকরণের পাঠ দিতেন। জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ ও হালকা বিশ্রাম শেষে তিনি পুনরায় শিক্ষার্থীদের এশা পর্যন্ত পাঠ দান করতেন। ওই সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আল কোরআন, অনুবাদশাস্ত্র, ফিকাহ ও তৌহিদ সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করতেন।

হজরত আবদুল কাদের জিলানী অল্প সময়ে শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তার খ্যাতি এত বিস্তৃত হয় যে, অচিরেই বাগদাদে অবস্থিত ও শায়খ মুবারক প্রতিষ্ঠিত ওই মাদ্রাসাটি তার প্রতিষ্ঠাকালীন নামের বদলে হজরত আবদুল কাদের জিলানী নামে কাদেরিয়া মাদ্রাসা হিসেবে দুনিয়াব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে। তিনি সব ধর্মের, সব মতের, সব দেশের মানুষের জন্য মাদ্রাসার দরজা খুলে দেন। পড়ার পরিবেশ ও কারিকুলাম তৈরি করেন। ফলে এশিয়া, ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে দলে দলে ছাত্ররা তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ভিড় জমায়। নতুন নতুন শিক্ষার্থীর আগমনের ফলে মাদ্রাসার গৃহ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে পাঠ গ্রহণ করা ছাত্রদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ছাত্ররা খোলা মাঠ, অলিতে-গলিতে দাঁড়িয়ে, বৃক্ষছায়া ও বাসগৃহের ওপর বসে বড় পির হজরত আবদুল কাদের জিলানীর পাঠ গ্রহণ করতেন। এমতাবস্থায় কাদেরিয়া মাদ্রাসার পরিসর বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

বৃদ্ধ শায়খ মুবারকের পক্ষে ওই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা অসম্ভব ছিল বিধায় হজরত আবদুল কাদের জিলানী শিক্ষকতার পাশাপাশি কাদেরিয়া মাদ্রাসার অবকাঠামো নির্মাণেও মনোযোগী হন। তিনি মাদ্রাসার সম্প্রসারণের জন্য সঙ্গতিসম্পন্ন ও শিক্ষাপ্রাণ মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। খ্যাতিমান শিক্ষক হজরত আবদুল কাদের জিলানীর আহ্বানে দলে দলে মানুষ সাড়া দেন। অনেকে আর্থিকভাবে, আবার কেউ কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে মাদ্রাসার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখেন। নারীরাও ওই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে যুক্ত হন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে কাদেরিয়া মাদ্রাসার জায়গা ও অবকাঠামো সমস্যার সমাধান হয়।

চারদিকে যখন হজরত আবদুল কাদের জিলানীর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনি নিজ জন্মভূমি জিলানে ফিরে যাওয়ার মনস্থির করেন। তার বাগদাদ ত্যাগ করে জিলানে ফিরে যাওয়ার সংবাদ অবগত হয়ে বাগদাদবাসী রাস্তায় নেমে আসে। তারা কোনোভাবেই হজরত আবদুল কাদের জিলানীকে বাগদাদ ত্যাগ করতে দিতে রাজি ছিল না। ফলে তার পক্ষে আর বাগদাদ ত্যাগ করে জিলানে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এভাবে তিনি বাগদাদের সঙ্গে আমৃত্যু তার ভাগ্যকে জড়িয়ে ফেলেন।

পরে ৯১ বছর বয়সে ১১ রবিউস সানি ৫৬১ হিজরিতে বাগদাদ নগরেই আবদুল কাদের জিলানী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন আধ্যাত্মিক গুরুও। সেই কারণে তাকে সুফিদের ওস্তাদ বলা হয়। তার ছাত্রদের পাশাপাশি সুফিরাও তাকে সমানভাবে সম্মান করতেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

হাইলাইটস: আবদুল কাদের সব ধর্মের, সব মতের, সব দেশের মানুষের জন্য মাদ্রাসার দরজা খুলে দেন। পড়ার পরিবেশ ও কারিকুলাম তৈরি করেন। ফলে এশিয়া, ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে দলে দলে ছাত্ররা তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ভিড় জমায়।